প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

অনলাইন ডেস্ক :

 

শারদীয় দূর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে দুই বছর পর আবারো ফিরে এসেছে চিরচেনা আনন্দ উৎসব। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও নানান আনন্দ আয়োজনের মাধ্যমে দুর্গতিনাশিনী মা দূর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন ভক্তকূল। আর মর্ত্যে ‘বাবার বাড়ি’ বেড়ানো শেষে নৌকায় চড়ে ‘কৈলাসে দেবালয়ে’ ফিরেছেন ‘আনন্দময়ী’ দেবী দুর্গা। মায়ের কাছে অশুর শক্তির বিনাশের প্রার্থনা করেছেন ভক্তরা।

আজ বুধবার বিজয়া দশমীতে সকাল ৮টা ৫০মিনিটে ‘বিহিত পূজা’ ও পরে ‘দর্পণ বিসর্জনের’ মধ্য দিয়ে দুর্গা পূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি ঘটেছে। দশমী পূজায় প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন ভক্তরা। বেলা ৪টায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওয়াইজঘাটের বীণাস্মৃতি স্নান ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনা ছাড়া বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে একে একে বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা। একই সময়ে তুরাগ নদীতে চলে বিসর্জন। রাজধানীর প্রায় অর্ধশত মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় ওয়াইজঘাটে। সন্ধ্যার আগেই অধিকাংশ এলাকায় বিসর্জন শেষ হয়। প্রতিমা বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সড়কে পুলিশের টহল ও নদীতে ছিল নৌপুলিশের টহল। ফায়ার সার্ভিসের টিমও দায়িত্ব পালন করে।

 

এর আগে সকালে প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশ্যে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য এ বিজয়া শোভাযাত্রা। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়িয়ে যেতেই ভক্তরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামন্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে। পরে শত শত ট্রাক প্রতিমা নিয়ে সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

 

ঢাকেশ্বরী থেকে শুরু করে প্রতিমা যাত্রাটি শহীদ মিনার, হাইকোর্ট, পুলিশ হেড কোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, কোর্ট এলাকা হয়ে সদরঘাট পৌঁছে। রাস্তায়, বিভিন্ন ভবনে পুলিশ ছিল সতর্কাবস্থায়। রাস্তার পাশে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

 

অধিকাংশ মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমাটি রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু পূজার কাজে ব্যবহৃত দেবীর ফুল, বেলপাতা ও ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রথা অনুযায়ী, প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে। রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ধ্যা আরতির পর মিশনের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করেন ও মিষ্টিমুখ করেন।

 

করোকালের দুই বছর শেষে বর্ণাঢ্য আয়োজনে দুর্গোৎসব আয়োজনে খুশি ভক্তবৃন্দ। এ বিষয়ে প্রতিমা বিসর্জন দিতে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে আসা জয়ন্ত সরকার বলেন, শেষ পর্যন্ত খুব ভালোভাবেই এবারের পূজা উদযাপন করেছি। দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাচ্ছি তাতে কিছুটা খারাপ তো লাগছেই। একটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। আবার একটি বছর পর (দেবীকে) পাব।

 

করোনাকালের দুই বছর পূজায় তেমন কোন আনন্দ ছিলো না বলে জানান অনিমা সরকার। তিনি বলেন, পূজা উদযাপন শেষে মা দুর্গাকে বিদায় জানাচ্ছি। দিন যাবে, মাস যাবে- এভাবে একটি বছর ধরে আবারো পূজা উদযাপনের অপেক্ষা করতে হবে।

 

জিতেন দাস নামের আরেকজন বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে এবার। দেবী দুর্গার অপেক্ষায় আবারো একটি বছর অপেক্ষায় থাকব।

 

মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল বলেন, এবারের পূজা উদযাপনের মাধ্যমে সব অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির বিকাশ ঘটবে। সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।

 

হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, দশভূজা দেবী দুর্গা অসুর বধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে’ মর্ত্যলোকে আসেন। সন্তানদের নিয়ে পক্ষকাল পিতার গৃহে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। আশ্বিন শুক্লপক্ষের এই ১৫টি দিন দেবীপক্ষ, মর্ত্যলোকে উৎসব। মহালয়ার দিনে দোলায় চড়ে দেবী মর্ত্যে আসেন। এরপর নবরাত্রির ষষ্ঠ দিন শনিবার মহাষষ্টী পূজার মধ্য দিয়ে দূর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সেই উৎসবের সমাপ্তি হল।

 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, সারাদেশে এবছর ৩২ হাজার ১৬৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি। এসব মন্ডপে শারদীয় উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।  প্রতিটি মন্ডপে মন্ডপে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এছাড়া মন্ডপ পাহারার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *