ন্যাশনাল ডেস্ক: নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় বিএনপির নির্বাচনী মিছিলে দফায় দফায় হামলা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়, বাড়িঘর ও দোকানপাট। এই ঘটনায় ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে স্থানীয় বিএনপি। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কবিরহাটে নির্বাচনী পথসভায় যোগ দিতে পারেননি নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট) আসনে বিএনপির প্রার্থী মওদুদ আহমদ। তিনি কোম্পানীগঞ্জে সিরাজপুরের গ্যাস ফিল্ড এলাকায় এসে ফের কোম্পানীগঞ্জের নিজ বাড়িতে ফিরে যান। বিকেলে কোম্পানীগঞ্জে তাঁর নির্বাচনী পথসভা করার কথা রয়েছে।
এই হামলার ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন বিএনপির প্রার্থী মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁর পথসভায় আসা মিছিলে দফায় দফায় হামলা হলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করে। হামলায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
মওদুদ আহমদ অভিযোগ করেন, হামলা ও বাধার খবর পেয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং পুলিশ সুপারকে বারবার ফোন করেও তাঁদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাননি তিনি। পরে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁকে ফোন করে কবিরহাটে প্রবেশ করা তাঁর জন্য নিরাপদ নয় জানিয়ে তাঁকে কবিরহাটে না যেতে অনুরোধ করেন। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ নেই বলেও উল্লেখ করেন মওদুদ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, মওদুদ আহমদ তাঁর আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০টায় কবিরহাট বাজারের কেজি স্কুলের সামনে এবং বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজের সামনে পথসভার কর্মসূচি দেন। সকাল থেকে কবিরহাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে কবিরহাট বাজারের দিকে আসতে থাকেন।
বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দাবি করেন, দলের কর্মীরা মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ভূঁইয়ারহাট, কবিরহাট জিরো পয়েন্ট, পৌরসভার সামনে, নতুন হাসপাতাল রোড, কলেজ রোডসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁরা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হামলা ও ধাওয়ার শিকার হন। এ সময় বাজারের একাধিক দোকান ও বাড়িতেও হামলা চালানো হয়েছে। আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করে।
হামলায় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা চৌধুরী ছাড়াও বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কর্মী মো. মোহন, ফরহাদ হোসেন, সো. সোহেল, আবু ইউছুফ, মো. পাভেল, জামাল উদ্দিন, মো. হানিফ, সহিদ উল্যাহ, আবুল বাশার, মো. শাহীন, রিধন হোসেন, আবদুস সাত্তার, জসিম উদ্দিনসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহত লোকজনকে স্থানীয় উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে কবিরহাট পৌর বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।
বিএনপির মিছিলে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন রুমি প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস আগে ছাত্রদল থেকে ইসমাইল নামের এক কর্মী ছাত্রলীগে যোগ দেন। আজ সকালে ইসমাইলকে কবিরহাট বাজারে একা পেয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায় বিএনপির কর্মীরা। এ সময় তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জলিল, যুবলীগের ওয়ার্ড সেক্রেটারি ইসমাইলসহ ছয়জন হামলার শিকার হন।
নুরুল আমিন জানান, এই ঘটনার খবর পেয়ে বিভিন্ন দিক থেকে তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা কবিরহাট বাজারে এসে বিএনপির কর্মীদের ধাওয়া করলে তাঁরা পালিয়ে যান। এখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা তন্ময় দাস ও জেলা পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। আর সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ফোন ধরে ব্যস্ত আছেন বলে দ্রুত লাইন কেটে দেন।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মো. হাসান প্রথম আলোকে বলেন, সকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে সামান্য পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আহত ছাত্রলীগের দুই কর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মওদুদ আহমদকে কবিরহাট আসতে কেউ বাধা দেয়নি। ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি।