বিশ্বকাপ ফুটবলকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনায় চলছে জুয়ার রমরমা আসর

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :

বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে নেত্রকোনার পৌর শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে জুয়া খেলার প্রবনতা। ফুটবল কিংবা ক্রিকেট যেকোন খেলার আসর শুরু হতেই জুয়ার রমরমা আসর জমে যায় জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত। এতে করে জুয়ার ধ্বংসাত্মক ছোবলে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

গত ২০ নভেম্বর ফুটবল বিশ্বকাপের আসর শুরু হয়। বিশ্বকাপের এ আসরকে কেন্দ্র করে মহা আনন্দে জুয়ারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়ারীরা নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে যখন জুয়ার আসর জমায় তখন জুয়া খেলার নানা দৃশ্য, নানা পদ্ধতি দেখা যায়। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও জুয়া খেলা হয়ে থাকে।

এমনিতেই জুয়ারীদের জুয়া খেলার জন্য কোন না কোন ইস্যুর প্রয়োজন হয়। আর যদি ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলার মত কোন আসর হয় তবে তো কোন কথাই নেই। আবার এর মধ্যে যদি বিশ্বকাপের মত বড় আসরের খেলা শুরু হয় তবে, তা জুয়ারীদের কাছে ঈদের আনন্দে পরিণত হয়। বিশ্বকাপ ফুটবল/২০২২ শুরু হওয়ার সাথে সাথে জুয়ারিদের ঈদের আমেজ শুরু। আর এ আসরে সামিল হয়ে মোটা অংকের টাকা জুয়ার বাজিতে হেরে অনেকে সর্বস্ব হারাচ্ছে। কিন্তু জুয়ার নেশায় ফের জুয়া খেলায় বাজি ধরতে টাকার জোগান দিতে গিয়ে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় অপরাধের নানা চিত্র দেখা যাচ্ছে।

সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জুয়ারিদের জুয়া খেলার অনেক নিয়ম থাকলেও এখন ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে খেলা জিত-হারকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি জুয়া খেলা হচ্ছে। এছাড়া কোন খেলোয়াড় কয়টা গোল দিবে অথবা গোল দিতে পারবে কিনা এ নিয়ে নানাভাবে জুয়া খেলা হচ্ছে।

তাছাড়া কোন দল কত মিনিটে গোল দিবে, কোন দল প্রথমে গোল দিবে, প্রথম ১০ মিনিটে কোন গোল হবে কিনা, কোন নির্দিষ্ট সময়ে গোল হবে কিনা কোন না কোন ইস্যু  নিয়ে জুয়া খেলার বাজি ধরা চলছে।

সাধারণত পাড়া মহল্লার নির্দিষ্ট কোন দোকানে টেলিভিশন সেট করে জুয়ারীরা একত্রিত হয়ে এসব জুয়ার বাজি ধরে থাকে। এছাড়া মোবাইল ফোনে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও বাজি ধরা হচ্ছে।

জুয়ার সাথে জড়িত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘জুয়ার আসরে হাজার হাজার টাকা বাজি ধরা হয়। আনেক সময় টাকা সংকটে দামি মোবাইল ফোন, জুয়েলারী জিনিস অল্প দামে বিক্রি করে কিংবা বন্ধক রেখেও জুয়া খেলা হয়ে থাকে। আর এ নিয়ে প্রায় সময় জুয়ারীদের মাঝে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হয়। আর তা কখনো কখনো খুনের মত বড় অপরাধের জন্ম দেয়।’

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক জুয়ারী জানায়, ‘জুয়া খেলায় অনেক সময় লাভ হলেও পরবর্তীতে লসের ভাগি হতে হয়। আজকে জুয়ার বাজি জিতলেও কাল হারতে হচ্ছে। এতে করে জুয়ার টাকা কখনো থাকেনা। কিন্তু এটা আমাদের এক ধরণের নেশা হয়ে গেছে।

পুলিশ জানায়, আমরা প্রতিদিন টহল দেই কিন্তু জুয়ারিরা খুবই চালাক হওয়ায়, তাদের হাতেনাতে ধরা খুবই কঠিন। গোপনে তারা বাজি ধরে কিন্তু টাকা আদান-প্রদান হয় বিকাশ কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে। তাই, তাদের নিরব থাকা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *