এ বছর সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়াবে

অনলাইন ডেস্ক :

 

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দায় যাচ্ছে, সে কারণে বিনিয়োগ চাহিদা বাড়ছে সোনার। এতে ২০২৩ সালে বিশ্ববাজারে সোনার দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ হবে। দাম প্রতি আউন্স ২০০০ ডলার ছাড়াবে। কিটকো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেন রোজেনবার্গ রিসার্চের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড রোজেনবার্গ।

 

তিনি বলেন, ‘এ বছরের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে যখন প্রশ্ন ওঠে তখন বিনিয়োগকারীরা শুধু বলেন পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে এবং তাঁরা নিজেদের সম্পদ কিভাবে রক্ষা করবেন। ফলে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে তাঁরা সোনাকেই দেখছেন। এর আগে ডলারের দাম বাড়ায় তাঁরা বন্ডে বিনিয়োগ করেছেন, কিন্তু ডলারের সর্বোচ্চ দাম আমরা পার হয়ে এসেছি, ডলার এখন নিম্নমুখী।’ তিনি বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি একটি মন্দা একেবারেই নিকটে। এই মন্দা ছয় প্রান্তিক থাকতে পারে। যা হবে ১৮৮০ সালের পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ মন্দা।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি মন্দার দিকে যাচ্ছে, এ অবস্থায় ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার আর সহজে বাড়াবে না, ফলে গত বছর আমরা দেখেছি ডলারের সাফল্য, এবার দেখতে পাব সোনার সর্বোচ্চ দাম। ২০২৩ সাল হবে সোনার রেকর্ড দামের বছর।’

 

২০২৩ সালে বিশ্ববাজারে সোনার দাম প্রতি আউন্স চার হাজার ডলারে উঠতে পারে বলে এর আগে মন্তব্য করেছেন সুইস এশিয়া ক্যাপিটালের এমডি ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জুয়েরগ কিয়েনার। সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুদের হার বৃদ্ধি ও মন্দার ভয়ে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আর সে কারণেই নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা আবার বাড়তে থাকবে। এতে ২০২৩ সালে দাম বেড়ে প্রতি আউন্স দুই হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।’

 

কিয়েনার বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে আমরা দেখেছি যেকোনো মুদ্রায়ই সোনা থেকে বার্ষিক রিটার্ন এসেছে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। যেটা বন্ড মার্কেটে আপনি অর্জন করতে পারবেন না। এমনকি ইকুয়িটি মার্কেটেও তা সম্ভব নয়। বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির এই সময় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ করবেন।’

গত ডিসেম্বরে বিশ্ববাজারে ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে সোনার দাম। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডাব্লিউজিসি) বলেছে, ২০২৩ সালে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে মূল্যবান এই ধাতু, বিনিয়োগ বাড়বে ব্যাপকভাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয় এরই মধ্যে ৫৫ বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে। গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম ছিল প্রতি আউন্স এক হাজার ৯১৩ ডলার।

 

২০৫০ সাল নাগাদ সোনার আকরিক মজুদ শেষ হয়ে যেতে পারে : প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশ্ব ক্রমেই জটিল থেকে আরো জটিল হচ্ছে। এ অবস্থায় বিপুল চাহিদায় প্রাকৃতিক সম্পদের সরবরাহ নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন একজন গবেষক। ফলে আমরা যেসব সম্পদ ব্যবহার করি, সেগুলোর ব্যবহারপ্রক্রিয়া আরো উন্নত করতে হবে এবং পুনর্ব্যবহার উপযোগী করতে হবে।

 

সম্প্রতি জার্নাল ট্রেন্ডসে প্রকাশিত ‘ইকোলোজি অ্যান্ড ইভল্যুশন’ শীর্ষক একটি গবেষণা পেপারে এ দাবি করা হয়েছে। গবেষণার পেপারের লেখক অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনার সেন্টার ফর ইকোলজিক্যাল রিসার্চ অ্যান্ড ফরেস্ট্রি অ্যাপলিকেশনসের অধ্যাপক জোসেপ পেনুয়েলাস বলেন, ‘আগামী ১০০ বছরে বিশ্ব ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় ধাতু ও আকরিক সম্পদ শেষ হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়টি মূল্যবান ধাতু সোনার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’

 

তিনি বলেন, ‘সোনাসহ অন্যান্য আকরিক সম্পদের বার্ষিক ভোগ বা আহরণ ৩ শতাংশ হিসেবে ধরলে ২০৫০ সাল নাগাদা তা শেষ হয়ে যেতে পারে। কিংবা ১০০ বছরের কম সময়ের মধ্যে তা শেষ হয়ে যেতে পারে।’ সম্প্রতি ব্রিটিশভিত্তিক মূল্যবান ধাতু গবেষণা প্রতিষ্ঠান মেটাল ফোকাস জানায়, ২০১৭ সালের তুলনায় বর্তমানে গড়ে সোনার উৎপাদন কমেছে ৮ শতাংশ।

সূত্র : কিটকো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *