ভারতে পাচার তরুণীকে হত্যা : জড়িত টিকটকচক্র ধরতে তৎপর র‌্যাব-পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক :

 

টিকটকচক্রের মাধ্যমে ভারতে পাচার টুম্পা আক্তারের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে তত্পর পুলিশ ও র‌্যাব। এদিকে ভারতে পাচার হওয়া ৯ বাংলাদেশি নারী বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন। বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে তাঁরা দেশে ফেরেন।

 

টুম্পার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছে তাঁর পরিবার।

 

টুম্পার বাবা রহিম সেখ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, রিকশা চালিয়ে পরিবার নিয়ে কষ্টে বেঁচে আছি। আমার মেয়েকে যারা পাচার করে হত্যা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের বিচার চাই, মেয়ের লাশ ফেরত চাই।’

 

তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে মেয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দেখা করেছি। সেই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে (পররাষ্ট্র) জানিয়েছি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার ভারতীয় পুলিশ আমাকে জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে মেয়ের লাশ দাফন করে ফেলেছে। এখন সরকার সহযোগিতা না করলে মেয়ের লাশ ভারত থেকে কিভাবে আনব ভাবতে পারছি না।’

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদনে টুম্পার বাবা উল্লেখ করেছেন, ‘আমার মেয়ে টুম্পা আক্তারকে চাকরির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ২০২১ সালের মাঝামাঝি কাগজপত্র বা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতের গুজরাটে পাচার করা হয়। সেখানে টুম্পাকে একটি স্পাতে কাজ দেওয়া হয়। ভারত পৌঁছে টুম্পা মোবাইলে আমাদের এসব কথা জানায়। আড়াই মাস আগে টুম্পা আমাকে জানায়, তাদের সঙ্গে থাকা এক বাংলাদেশি নারী সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করলে পাচারকারীরা ওই নারীকে হত্যা করে লাশ রাস্তায় ফেলে যায়। এ বিষয়ে গুজরাটে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। টুম্পা বলে, বাবা ওরা আমাকেও মেরে ফেলবে। এরপর আর টুম্পার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। গত ২৬ জানুয়ারি গুজরাট পুলিশ আমাকে ফোন করে জানায়, টুম্পা নামের এক বাংলাদেশি তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছে তারা। যার কাছে মোবাইল ও একটি ভারতীয় এনআইডি কার্ড পাওয়া গেছে। কার্ডে টুম্পা ও আমার নাম লেখা ছিল। এরপর আমি ডেমরা থানায় একটি জিডি করি।’

টুম্পার বাবার দাবি, টুম্পার বর জয়সহ চক্রের সদস্যরা তাঁর মেয়েকে টিকটকচক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাচার করেছে। তিনি বলেন, টুম্পাকে পাচারের অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি তিনি ডেমরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পুলিশ তাঁকে এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

 

তবে টুম্পার স্বামী জয় মোহাম্মদ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি একটি মাদক মামলায় ২৪ দিন জেল খেটে বের হওয়ার কয়েক দিন পর টুম্পা নিখোঁজ হয়।

 

এদিকে ভারতে পাচার ৯ বাংলাদেশি নারী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরেছেন। বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন তাঁরা। আমাদের বেনাপোল প্রতিনিধি বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানান।

 

পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি জানায়, নারী পাচারের ঘটনায় দেশে ও দেশের বাইরে ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ছয় হাজার ৭৩৫টি মামলা হয়েছে। গত ১২ বছরে ভারতে পাচার হওয়া দুই হাজার ৫০ জনকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৬৫১ জনকে ফিরিয়ে এনেছে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।

 

টুম্পার বিষয়ে পরিবার আরো জানিয়েছে, ২০২১ সালের শেষের দিকে ঢাকার ডেমরা থানার খোলাপাড়া এলাকা থেকে নিখোঁজ হন টুম্পা আক্তার। পরে পরিবার জানতে পারে তিনি পাচার হয়ে ভারতের গুজরাটের বারুচ এলাকায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। সব শেষ বারুচের ‘এনজেল স্পা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন টুম্পা।

 

এ বিষয়ে টুম্পার বাবাকে সহযোগিতাকারী অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গুজরাট পুলিশের এক ইন্সপেক্টরের সঙ্গে তিনি দুই দিন আগে কথা বলে টুম্পার হত্যার বিষয় জানতে পেরেছেন। ওই ইন্সপেক্টর তাঁকে জানিয়েছেন, টুম্পাকে বাংলাদেশের টিকটকচক্র ভারতে পাচার করে এনে হত্যা করেছে। এখান থেকে দ্রুত লাশটি না নিয়ে গেলে তারা দাফন করে ফেলবে।

 

অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আজাদ রহমান বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। পত্রিকার মাধ্যমে খবরটি জেনেছি। মেয়েটির পরিবারকে আইনগত সহযোগিতা দেওয়া হবে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটি জেনেছি। তাঁকে পাচারের সঙ্গে দেশে কারা জড়িত, তার খোঁজ নিচ্ছি। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *