Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় এক পেঁয়াজু ৪ কেজি, ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি :

 

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নাটুদা ইউনিয়নের চন্দ্রবাস গ্রাম। এই গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে তিনটি পেঁয়াজুর দোকান। এসব দোকানে দুপুরের পর থেকে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত মানুষের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। দূর থেকে দেখে মনে হবে এখানে কোনো বিষয় নিয়ে জটলা বেধেছে। কিন্তু এমন কিছুই নয়, মূলত বিশাল আকৃতির ৩-৪ কেজি ওজনের একটা পেঁয়াজু কিনতেই এত মানুষের সমাগম ঘটে।

 

তিনটি দোকানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ কেজি পেঁয়াজু বিক্রি হয়। প্রতি কেজি পেঁয়াজুর দাম রাখা হয় ৩০০ টাকা। ফলে প্রতিদিন ৫-৭ ঘণ্টায় এখানে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকার পেঁয়াজু বিক্র হয়ে থাকে। ৩০০ টাকা কেজি হলেও এখানকার মচমচে পেঁয়াজুর স্বাদে আর গন্ধে বিমোহিত ক্রেতারা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চন্দ্রবাস গ্রামের বাসিন্দা রাশিদুল ইসলাম ও মফিজুল দুই ভাই রাস্তার পাশেই গড়ে তোলেন পেঁয়াজুর দুটি দোকান। এছাড়া মুনছুর আলী ও নজরুল ইসলাম শেখ নামে আরো দুজন রাস্তার দু’পাশে বিশাল আকৃতির পেঁয়াজুর ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছেন।

 

দোকানগুলোতে তৈরি হচ্ছে ৩-৪ কেজি ওজনের পেঁয়াজু। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়, আকারে বড় হওয়ায় ক্রেতাকে সহজেই আকৃষ্ট করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশাল আকৃতির এই পেঁয়াজুর প্রেমে বিমোহিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোক আসেন এখানে।

 

স্থানীয়রা জানান, দুই ভাই রাশিদুল ইসলাম ও মফিজুলের দোকানে প্রতিদিন ৫০-৬০ কেজি পেঁয়াজু বিক্রি হয়। শুক্রবার ও সাপ্তাহিক হাটের দিন ৮০-১০০ কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজু বিক্রি হয়। এছাড়া ঐ গ্রামে বিশাল আকৃতির এই পেঁয়াজু নজরুল ইসলাম শেখ ও পার্শ্ববর্তী মুনছুর আলীও প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি পেঁয়াজু বিক্রি করেন।

 

বিশাল আকৃতির এই পেঁয়াজুর আবিষ্কারক খুলনার দৌলতপুর উপজেলার দীঘলিয়ার নজরুল ইসলাম শেখ। তিনিই ৪৩ বছর আগে চন্দ্রাবাস গ্রামে বিয়ে করে স্থায়ী হয়েছেন। নজরুল ইসলাম ১৯৯০ সালের পর বিশাল আকৃতির পেঁয়াজু বানানো শুরু করেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা এক দশক পেঁয়াজু বানিয়ে বিক্রি করলেও লোকসানে পড়েন তিনি।

 

২০১০ সালের দিকে নজরুল ইসলাম শেখের আবিষ্কার করা পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন চন্দ্রবাস গ্রামের আব্দুল সাত্তার। সেসময়ও এটা তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। তিনি মারা যাওয়ার পর তার দুই ছেলে রাশিদুল ইসলাম এবং মফিজুলও একই ব্যবসা শুরু করেন।

ধীরে ধীরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশের পর বিশাল আকৃতির এ পেঁয়াজু বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালের পর নজরুল ইসলাম শেখ আবারো বিশাল আকৃতির পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন। এখন তার বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

 

যেভাবে তৈরি হয় বিশাল আকৃতির এই পেঁয়াজু:

প্রথমে কাঁচা ঝাল, পেঁয়াজ, ময়দা, কালা জিরা ও সুগন্ধি মসলা একসঙ্গে মিশিয়ে খামি করা হয়। লাকড়ির চুলায় বড় কড়াইয়ে তেল গরম করে বিশাল আকৃতির এ খামি তেলের মধ্যে ছেড়ে ভাজা হয়। মচমচে হলে কড়াই থেকে তুলে তেল নিঙড়ানো হয়। এরপর ক্রেতাদের কাছে তাদের চাহিদা মতো বিক্রি করা হয়।

 

যেভাবে বিক্রি হয় এই পেঁয়াজু:

একেকটা পেঁয়াজুর ওজন হয় ৩-৪ কেজির। অনেকে আস্ত একটা কিনে নেন। আবার অনেকে কয়েকজন মিলে কিনে তা ভেঙে ভেঙে খান। এছাড়া দোকানিরাও ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম বা আড়াইশ গ্রাম করে ভেঙে ভেঙে পেঁয়াজু বিক্রি করেন।

 

কার্পাসডাঙ্গা থেকে আসা এনজিও কর্মী ইউসুফ আলী বলেন, এখানে আমরা মাঝে মধ্যে এসে পেঁয়াজু খেয়ে থাকি। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে খেয়ে আবার সঙ্গে নিয়ে যান। এটা খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মচমচে। আমরা এখানে প্রায় ৩ বছর থেকে পেঁয়াজু খেতে আসতেছি।

 

দর্শনা থেকে আসা শাহারিয়ার আহমেদ তুহিন বলেন, স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম এখানে  খুবই ভালো মানের চার কেজি ওজনের পেঁয়াজু পাওয়া যায়। এ কারণে আমরা কয়েক জন মিলে দর্শনা থেকে এখানে এসেছি। আমরা যে এক কেজি খেয়েছি খুবই সুস্বাদু ছিল।

 

চন্দ্রবাসের বাসিন্দা আ. হালিম বলেন, আমাদের এখানে যে পেঁয়াজু বিক্রি হয়, তা খুবই মজাদার। পেঁয়াজু বিক্রি করে এরা (রাশিদুল ও মফিজুল) আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

 

পেঁয়াজু বিক্রেতা রাশিদুল বলেন, প্রতিদিন ৫-৬ হাজার টাকার বেচাকেনা হয়। বিকেল ৩-৪টার দিকে দোকান খুলি, রাত ৮টার পর বন্ধ হয়ে যায়। দিনে ২০-২৫ কেজি পেঁয়াজ ভাজা হয়। অনেক দিন থেকে এই ব্যবসা করি। আগে এত বিক্রি হতো না। গত ১০-১২ বছর থেকে এ কাজ করি।

Exit mobile version