Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

কুষ্টিয়া জেলার ২৫৮টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

সজীব নন্দী (কুষ্টিয়া ) :

 

 কুষ্টিয়া জেলায় ২৫৮ টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার মহাসপ্তমী আজ।কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া হরিবাসর সার্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব । অশুভ শক্তিকে শোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দুসম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা।

 গতকাল শুক্রবার ছিল মহাষষ্ঠী। এদিন দেবী দুর্গা শক্তি নিয়ে ভক্তদের কাছে পৌঁছান। গতকাল শুক্রবার ৮টায় বোধনের পর খুলে দেওয়া হয় মণ্ডপ। এর মাধ্যমে দেবী জেগে ওঠেন। আর তাতে দর্শন করা যায় দেবীর। শুক্রবার সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে চলেছে দেবীকে জাগানোর জন্য পূজা অর্পণ। পুরোহিতরা জানান, এর মধ্যে দিয়েই দুর্গাপূজা শুরু হয়।

 

 

 

আজ শনিবার (২১ অক্টোবর) মহাসপ্তমী। শাস্ত্রমতে মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে (ষোল উপাদানে) দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। একই সঙ্গে দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। এ সময় পূজারীরা প্রতিমার সামনে বসে মায়ের মুখ দর্শন করবেন।

 

কুষ্টিয়া জেলামন্দিরসহ সব মন্দিরেই সকাল থেকে শুরু হবে সপ্তমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। এছাড়াও দিনব্যাপী চণ্ডী ও মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে পূজা, দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা চলবে বলে জানান সর্বজনীন পূজা আয়োজকরা ।

যদিও দুর্গাপূজা শুরু হলো শুক্রবার থেকে, তবে দেবী আসার ঘণ্টা বেজে যায় মহালয়ার দিন থেকেই। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন–বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন—দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায়, তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। এ বছর ভক্তদের কষ্ট দূর করতে দেবী দুর্গা এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে, আর দশমীর দিন মর্ত্যলোক ছেড়ে যাবেন এই একই বাহনে।আগামী রবিবার (২২ অক্টোবর) অষ্টমী, সোমবার ( ২৩ অক্টোবর ) মহানবমী এবং মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমীর মাধ্যমে বিদায় নেবেন দুর্গা দেবী।

 

মহাঅষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে রবিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে রাত ৮টা ৬ মিনিটে। সোমবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন মঙ্গলবার দশমী পূজা শুরু সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের।

গতকাল ২০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ কুষ্টিয়ার বিভিন্ন পূজা মন্ডপসমূহের পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া জনাব মো: এহেতেশাম রেজা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব এ এইচ এম আবদুর রকিব, বিপিএএ, বিপিএম, পিপিএম (বার), সুযোগ্য পুলিশ সুপার, কুষ্টিয়া মহোদয়। দূর্গাপূজা শুভ উদ্বোধন কালে পুলিশ সুপার মহোদয় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দদের সাথে শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময়সহ শারদীয় দূর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার মহোদয় কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে শারদীয় দুর্গা পুজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন।

কুষ্টিয়ার আড়ুয়াপাড়া নব যুব সংঘ মন্দিরে শারদীয় দূর্গাপূজা শুভ উদ্বোধনে

 

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জনাব পলাশ কান্তি নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস), জনাব মোঃ আবু রাসেল ,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, কুষ্টিয়া, অফিসার ইনচার্জ, কুষ্টিয়া মডেল থানা, টিআই, সদর ট্রাফিক, কুষ্টিয়াসহ সংশ্লিষ্ট অফিসার ও পূজা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর সারা দেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা মণ্ডপের ছিল ৩২ হাজার ১৬৮। এবার এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৪০৮। কুষ্টিয়া জেলার পূজার সংখ্যা ২৫৮ , গত বছর ছিল ২৪৯। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পুজোর সংখ্যা বেড়েছে।

 

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কুষ্টিয়া জেলার ২৫৯টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে যথাক্রমে দৌলতপুর উপজেলায় ১৩ টি , ভেড়ামারা উপজেলায় ১১টি, মিরপুর উপজেলায় ২৬টি, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ৮৫টি, কুমারখালী উপজেলায় ৬০টি ও খোকসা উপজেলায় ৬৪ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

 

পূরোহিত গণেশ চক্রবর্তী বলেন,  গতকাল ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু  হয়েছে শারদীয় দূর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মা দুর্গা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। আমরা পূজার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

 

কুষ্টিয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জয়দেব কুমার বিশ্বাস জানান, এবার কুষ্টিয়া জেলায় ২৫৮টি মণ্ডপে দূর্গোৎসব হবে। এ অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে প্রায় মন্দিরে প্রস্ততি নেওয়া শেষ। প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এএইচএম আব্দুর রকিব জানান, মণ্ডপে আনসার বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সেইসঙ্গে টহল টিমও কাজ করবে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

 

প্রতি মন্ডপে মন্দির কমিটির পক্ষ হতে সি সি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। দূর্গা পূজা উপলক্ষে জেলা পুলিশ পূজা মন্ডপে আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষায় ব্যপক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবকে নিরাপদ করতে জেলা পুলিশ প্রয়োজনীয় সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম শীল জানান, প্রতিটি মন্ডপে অতিথিদের আপ্পায়নের জন্য ৫০০ কেজি চালসহ প্রয়োজনীয় সহযোগীতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

সনাতনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মা দুর্গা স্বর্গে কৈলাশ পর্বত হতে ঘোড়ায় চড়ে ২০শে অক্টোবর (৪ঠা কার্তিক) মত্তে আগমন ও মহা ৬ষ্ঠিতে বোধন মধ্যে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠান শুরু হবে। ২১ শে অক্টোবর ( ৫ই কার্তিক) মহা সপ্তমী, ২২ শে অক্টোবর ( ৬ই কার্তিক) মহা অষ্টমী, ২৩ শে অক্টোবর ( ৭ই কার্তিক) মহা নবমী ও ২৪ শে অক্টোবর ( ৮ই কার্তিক) বিজয়ী মহা দশমী ও বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হবে এবং মা দুর্গা তার ভক্তদের কাঁদিয়ে ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গে কৈলাশ পর্বতে গমন করবেন।

Exit mobile version