ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রফেসর অব ক্লিনিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড কার্ডিওলজিস্ট। তাঁর স্ত্রী জাহানারা রাব্বি ১৯৭১ সালের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর একই স্বপ্ন দেখলেন। একটা সাদা সুতির চাদর গায়ে তিনি তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে জিয়ারত করছেন এমন একটা জায়গায়, যেখানে চারটা কালো থামের মাঝখানে সাদা চাদরে ঘেরা কী যেন। ১৫ ডিসেম্বর সকালে তিনি এ স্বপ্নের কথা বললেন ফজলে রাব্বিকে। রাব্বি বললেন, ‘তুমি বোধ হয় আমার কবর দেখেছ’। ভয় পেলেন জাহানারা রাব্বি। টেলিফোন টেনে পরিচিত অধ্যাপকদের বাড়িতে ফোন করতে বললেন। ফজলে রাব্বি ফোন করলেন, বেশির ভাগ মানুষকেই ফোনে পাওয়া গেল না। তখন আকাশে যুদ্ধবিমান। রকেট, শেলের শব্দে কান ঝালাপালা। সকাল ১০টায় কারফিউ উঠল দুঘণ্টার জন্য। ডা. রাব্বি বললেন, একজন অবাঙালি রোগী দেখতে যাবেন পুরান ঢাকায়। যেতে মানা করলেন জাহানারা রাব্বি। হাসলেন ডা. রাব্বি। বললেন, ‘ভুলে যেয়ো না, ওরাও মানুষ।’
তিনি ফিরলেন কারফিউ শুরু হওয়ার আগেই। দুপুরে খেলেন। ছিল বাসি তরকারি। কিন্তু ডা. রাব্বি খেয়ে বললেন, ‘আজকের দিনে এত ভালো খাবার খেলাম।’
জাহানারা রাব্বি চাইছিলেন সেদিন বিকেলেই এখান থেকে চলে যেতে। ডা. রাব্বি বললেন, ‘আচ্ছা, দুপুরটা একটু গড়িয়ে নিই।’কিছুক্ষণ পর বাবুর্চি এসে বললেন, ‘সাহেব, বাড়ি ঘিরে ফেলেছে ওরা।’
একটা কাদালেপা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে আর তার সামনে রাজাকার, আলবদর আর সেনাসদস্যরা।
নিচু স্বরে ডা. রাব্বি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘আমাকে নিতে এসেছে।’
দারোয়ানকে গেট খুলে দিতে বলেছিলেন তিনি। ওদের সঙ্গে যখন তিনি নামতে শুরু করলেন তখন বেলা চারটা।ডা. রাব্বির জন্ম ১৯৩২ সালে। ১৮ ডিসেম্বর খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তাঁর মৃতদেহ।
এটি ডা. রাব্বির লেখা একটি প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র। মানুষের সেবা করাই ছিল ডা. রাব্বির ব্রত। তাঁকে বাঁচতে দেয়নি হায়েনারা।