সালমান শাহ সম্পর্কে যা বললেন শিল্পী !

বিনোদন ডেস্ক : ১৯৯৫ সালে আমিন খানের বিপরীতে ‘বাংলার কমান্ডো’ ছবি দিয়ে অভিষেক ঘটে নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়িকা শিল্পীর। ‘বাবা কেন চাকর’ ছবির মধ্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন এই অভিনেত্রী। এরপর এক এক করে আমিন খান, বাপ্পারাজ, মান্না, রিয়াজ, রুবেলসহ বেশ কজন জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন।

অমর নায়ক সালমান শাহের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছিলেন মাত্র একটি ছবিতে। ‘প্রিয়জন’ নামের সেই ছবিটি শিল্পী ক্যারিয়ারে অনন্য এক পালক যোগ করেছে।

আজ সালমান শাহ চলে যাওয়ার ২৩ বছর। সম্প্রতি দেশের একটি অনলাইন গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে শিল্পী স্বরণ করলেন অমর নায়ক সালমান শাহকে।

নায়ক সালমানের সঙ্গে সম্পর্কটা কেমন ছিলো আপনার? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সমবয়সী ছিলাম। কিন্তু সিনেমায় সালমান আমার চেয়ে দুই বছরের সিনিয়র। এই ভাবটা কোনোদিন ওর মধ্যে ছিলো না। ও সবসময় আগে রেসপন্স করতো। নিজের চোখে অনেক কিছু দেখেছি এই ইন্ডাস্ট্রিতে। অনেক নায়কের অনেক রকম দাপট ছিলো। আজ কিছুই নেই। এমন নায়কও ছিলো দশজন বডিগার্ড সঙ্গে নিয়ে এফডিসিতে বা শুটিং স্পটে আসতো।

তবে সালমান ছিলো অন্য রকম একটা ছেলে। একেবারেই অন্যরকম। ওকে দেখলেই মনে হতো চিন্তা চেতনায় ও স্টাইল রুচিতে একটু এগিয়ে। ওর স্ত্রীর অবশ্য একটা ভূমিকা ছিলো। এটা হয়তো অনেকে জানে না। আমরা যারা কাজ করেছি তারা দেখেছি। সালমানের পোশাক, মেকাপ ঠিক করে দিতো সামিরা। আরেকটা কথা বলি। শাবনূর যখন প্রথমদিকে আসলো তখন দেখবেন অতোটা গ্ল্যামারাস ছিলো না। সাদা রঙের ভারী মেকাপ করতো। যখন সালমানের সঙ্গে ছবি করতে শুরু করলো শাবনূরের বাহ্যিক পরিবর্তনটা চোখে লাগলো সবার। ওর মেকাপ, চুলের স্টাইল একেক ছবিতে একেক রকম করে দিতো সামিরাই। গানে সালমান-শাবনূরের ম্যাচ করে পোশাক পরা এগুলো সামিরার ডিজাইন ছিলো।

সালমানের মৃত্যুর পর আমরা রিয়াজ-শাকিলকে সেসব ফ্যাশন-স্টাইলে দেখেছি। কিন্তু সালমানের মতো ছিলো না। এ সময়ে শাকিব অনেক স্টাইলিশ। অনেক ব্রান্ডের পোশাক পরে, ভালো গেটাপ দেখা যায়। কিন্তু সালমানেরটা একেবারেই ভিন্ন। সালমান যদি মারা না যেত অনেক নায়কেরই ক্যারিয়ার দাঁড়াতো না। এটা কিন্তু সত্যি। আর সালমানের যে দূরদর্শি ভাবনাশক্তি ছিলো এতোদিনে ও বলিউডের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই মিশে যেত বলে মনে হয় আমার।

এটা অন্য প্রসঙ্গ। এখন থাক। সালমান আমাকে ম্যাডাম বলে ডাকতো। আমি তো তখন সবে ঢুকেছি ইন্ডাস্ট্রিতে। সেটা ১৯৯৫ সালের শেষ দিকে। মোহাম্মদ হোসেনের পরিচালনায় আমিন খানের সঙ্গে ‘বাংলার কমান্ডো’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে মাত্র। নাম ছড়াচ্ছে। সবাই আমার গ্ল্যামারের প্রশংসা করছে। একের পর এক ছবি আসছে। কতো নায়ক ছিলো দেখেও না দেখার ভান করতো। কিন্তু সালমান এমন ছিলো না।

সালমানের সঙ্গে আমার দেখা হতো এফডিসিতে ঢোকার সময়। আমি ঢুকতাম তো সালমান গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে। নয়তো সে ঢুকছে আমি বের হচ্ছি। প্রত্যেকবার সালমান গাড়ি থামিয়ে ডাকতো, ‘ম্যাডাম কেমন আছেন? কবে একটা ছবি করবেন আমার সাথে বলুন’! আমি মজা পেতাম, লজ্জাও পেতাম। তখন সালমান সুপারহিট। ওর মতো নায়ক এভাবে কেন বলতো? একটা নতুন মেয়েকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য, সাহস দেয়ার জন্য।

‘প্রিয়জন’ ছবির আরেক নায়ক রিয়াজও সেটা ভালো উপলব্দি করতে পারবে। কারণ ও তখন নতুন। অনেক কিছুই জানতো না বুঝতো না। সালমান তাকে সেগুলো ভাইয়ের মতো বন্ধুর মতো করে শিখিয়েছে, সাহায্য করেছে। আমিও করেছি আমার জায়গা থেকে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালের এই দিনে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ ফ্ল্যাটে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় এই নন্দিত নায়কের লাশ। সে সময় তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন।

ছেলের মৃত্যু অপমৃত্যু নয় বরং হত্যা করা হয়েছে- প্রশ্ন তুলে তিনি ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি অভিযোগ করেন। যার সুরাহা হয়নি আজও। ছেলের অকাল মৃত্যুর রহস্য উন্মোচনের জন্য এখনও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *