অনলাইন ডেস্ক :
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে এই আলোচনাসভা হয়। ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট তিনি মারা যান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই অতি দ্রুত জনগণের চাহিদা পূরণ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কিভাবে একটা নির্বাচন দ্রুত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায়, সে জন্য এই সরকার কাজ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
আমি নির্বাচন কথাটার ওপর জোর দিতে চাই। এই যে সংস্কারের বিষয়টা এসেছে, সেই সংস্কারের জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেটা কিভাবে আসবে? সেটা একটি নির্বাচিত সংসদের মধ্য দিয়ে আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কয়েকজন ব্যক্তি একটা সংস্কার করে দিলেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এখন পর্যন্ত সরকারের সত্যিকার অর্থে কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত তো আনতে হবে। সরকারকে দেশের সব কিছু ‘অফিশিয়ালি’ করতে হবে। সুতরাং যাঁরা রাজনীতি করছেন তাঁদের সঙ্গে অবশ্যই মতবিনিময় করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ কী, তা জানতে চেয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারে যাঁরা এখন কাজ করছেন, তাঁরা আন্তরিক, যোগ্য মানুষ। কিন্তু তাঁদের কাজও আরো দৃশ্যমান হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা কী করতে চান, তা অতি দ্রুত জনগণের সামনে উপস্থাপন করবেন। একটা রোডম্যাপ দেবেন যে কিভাবে তিনি অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন, কিভাবে তিনি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জনগণকে স্বস্তি দিয়ে সামনের দিকে এগোবেন নির্বাচন করার জন্য।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বিপ্লবে যেন সুসংহত করা যায়, প্রতিবিপ্লব যেন না ঘটে। এরই মধ্যে যে চক্রান্তের কথাবার্তা উঠে আসছে, সেগুলোকে যেন প্রতিহত করা যায়, সেগুলো পরাজিত করে বিপ্লবের চেতনাকে যেন সমুন্নত রেখে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে তাদের সজাগ থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের দোসরদের সরকার থেকে সরানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার পাশে থেকে, তাঁর সঙ্গে থেকে, তাঁর দোসর হয়ে তাঁরা মানুষের ওপরে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছেন, লুটপাট করেছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, তাঁদের আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের আশপাশে দেখতে চাই না। পত্রিকায় যখন ছবি দেখি যে এসব লোক আবার সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করছেন, তখন আমরা উদ্বিগ্ন হই। আমরা খুব চিন্তিত হই যে ১৬-১৭ দিন হয়েছে, এখন পর্যন্ত যেসব সচিব ওই সরকারকে এত দিন ধরে চালিয়েছেন, তাঁদের সব কুবুদ্ধিগুলো দিয়েছেন, তাঁরা এখনো এই সরকারের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। অবিলম্বে এই আমলাদের মধ্যে যাঁরা জনগণের সঙ্গে আছেন, তাঁদের সরকারের পাশে দেখতে চাই। এই কথাগুলো আমরা বলতাম না। বলতে বাধ্য হচ্ছি এ জন্যে যে আমরা সেগুলো দেখতে পারছি না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ আগের ভিসিরা পদত্যাগ করেছেন। ভিসি নিয়োগে যোগ্য লোক দেখতে চাই।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আবু ইউসুফ সেলিমের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিএনপির নূর মোহাস্মদ খান, জহির উদ্দিন স্বপন, নজমুল হক নান্নু প্রমুখ বক্তব্য দেন।