ন্যশনাল ডেস্ক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানুষ জেগে উঠেছে। তারা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। জনগণের শক্তি দিয়ে সবকিছুকেই পরাজিত করা যায়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি এলাকায় নিজ বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনের পাশাপাশি নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকেও প্রার্থী হয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, এই নির্বাচন একটা প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের আর পরিবেশই নেই। সারা দেশে বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা চলছে। আর রাষ্ট্রের প্রশ্রয়েই এটা হচ্ছে। যেটা অবিশ্বাস্য।
প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রশাসন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করে বলেছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে কেউ যেন না দাঁড়ায়। এখানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কে দাঁড়াচ্ছে? এখানে দাঁড়াচ্ছে নির্বাচনের জন্য, একটা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচনে প্রচারও করা যাবে না, নির্বাচনী আইন ও বিধির মধ্যে এটা তো কোথাও বলা নেই।’ এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কখনোই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এটা এখন প্রমাণিত হচ্ছে। নির্বাচনে বিরোধী দল কোনোপ্রকার কাজই করতে পারছে না। প্রচার-প্রচারণার জন্য মাঠে তাদের নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। যেসব এলাকায় প্রশাসন কিছুটা নমনীয়, সেসব জায়গায় বিরোধীরা কিছুটা মাঠে নামতে পারছে, অন্য জায়গায় নামতে পারছে না।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনের নির্বাচনী পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে যখন ঠাকুরগাঁওয়ে এসেছিলাম, তখন পরিস্থিতি বেশ স্বাভাবিক ছিল। গতকাল বুধবার রাতে আমি দেখলাম—প্রকাশ্যে অস্ত্র, রামদা, লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পাড়া-এলাকায় ঢুকছে। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার ধমক দিচ্ছে। দুঃখজনকভাবে অভিযোগ যেটা উঠেছে, তাদের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।’
বিএনপির মহাসচিবের অভিযোগ, ‘ঠাকুরগাঁও-১ আসন যেহেতু আমার আসন, সে কারণে তারা (আওয়ামী লীগ) এই আসনকে টার্গেট করেছে। সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনের সন্ত্রাসীরা নিজেদের নির্বাচনী অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে। পরে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছে। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সদর উপজেলার জগন্নাথপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। এটাও বিএনপির লোকজনের ওপর চাপানো হয়েছে। বিএনপির কোনো লোকই এসবের সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমরা এখানে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছি। গতকাল আমার স্ত্রী ও ছোট মেয়ে শহরের একটি মহল্লায় নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিলেন। সেখানে রামদা হাতে নিয়ে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, সেখানে প্রচার-প্রচারণা করা যাবে না। এটা কোন ধরনের আচরণ?’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘সরকার কী চাচ্ছে? সরকার রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করছে কেন? সরকার সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিচ্ছে কেন? আজকে এই নির্বাচনে প্রমাণিত হয়ে গেল, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’
এ পরিস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কি না?—এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো নির্বাচনে আছিই। আমরা নির্বাচনে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত থাকতে চাই। আমরা দেখাতে চাই যে আজকে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’ নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের জয়ের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানুষ জেগে উঠেছে। তারা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত মনে করি, আমরাই জয়লাভ করব। জনগণের শক্তি দিয়ে সবকিছুকেই পরাজিত করা যায়। আমরা সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। এত প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা মনে করি জনগণই হলো সব ক্ষমতার উৎস। জনগণ তাদের শক্তি ৩০ ডিসেম্বর প্রয়োগ করবে।’