Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

কুকুরের দাপটে অতিষ্ঠ নীলফামারীবাসী

ন্যাশনাল ডেস্ক : জেলা কিংবা পৌরসভায় কুকুরের সংখ্যা কী হারে বেড়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে কুকুর আতঙ্ক

কুকুর নিধনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর নীলফামারী পৌরসভার পাড়া-মহল্লায় বেড়েই চলেছে কুকুরের সংখ্যা। কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ানো রোধে কুকুরকে ভ্যাকসিন (টিকা) দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত সেই কর্মসূচিও আপাতত বন্ধ। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছেন এলাকাবাসী

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ওষুধের সরবরাহ না থাকায় বর্তমানে সাময়িকভাবে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে, কুকুরের ভয়ে নিরাপদে বিদ্যালয় যেতে পারেছে না স্কুলগামী শিশুরা। জেলা কিংবা পৌরসভায় কুকুরের সংখ্যা কী হারে বেড়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়েছে কুকুর আতঙ্ক।

সরেজমিনে দেখা যায়, নীলফামারী সদর হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন গড়ে কুকুরের কামড়ে আহত ৩৫০-৪০০ জন রোগীকে বিনা মূল্যে ভ্যাকসিন (টিকা) দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

সদর আধুনিক হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ভ্যাকসিনেটর নাজমা পারভীন জানান, “কোনো কোনো দিন প্রায় ৪০০ কুকুর-বেড়ালের কামড়ে আহত মানুষকে র‍্যাবিস ভ্যাকসিন (টিকা) ও র‍্যাবিস আইজি (টিকা) দিতে হয়। গত দুই বছরে এ পরিসংখ্যান ছিল গড়ে ১০০-১৫০ জন।”

তিনি মনে করেন, কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এমনটি হচ্ছে।

কুকুরের কামড়ে আহত শিশুকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: ঢাকা ট্রিবিউনসদর আধুনিক হাসপাতালে টিকা নিতে আসা জেলার জলঢাকা উপজেলার নিলিমা আকতার (১৪) জানায়, বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ একটি কুকুর এসে কামড় দেয়। এই ক্ষতের কারণে আমি ১৫ দিন বিদ্যালয়ে যেতে পারিনি। কুকুরের উপদ্রবে ভয়ে অন্য সহপাঠীরাও ঠিকমতো বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না।

কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে টিকা নিতে আসা জেলা সদরের দারোয়ানী সুতাকল এলাকার গোলাম রব্বানী (৪৯) ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, বিকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারে যাওয়ার পথে হঠাৎ একটি কুকুর তেঁড়ে এসে পায়ে কামড় বসায়। এলাকায় এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে।

কুকুরের অত্যাচার থেকে বাঁচার উপায় কী? এই প্রশ্ন এখন সবার।

সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার ৮৯৭ টি র‍্যাবিস ভ্যাকসিন ও র‍্যাবিস আইজি টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা এতো বাড়ছে যে, সামাল দেওয়া মুশকিল।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ২৩০ জন রোগী টিকা নিয়েছেন।

এদিকে, আক্রান্ত ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরকারিভাবে র‍্যাবিস আইজি টিকা বরাদ্দ না থাকায় বাজার থেকে চড়া দাম দিয়ে (১২০০ টাকা) কিনতে হচ্ছে। নিম্নবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকায় দেখা দিয়েছে আরেক বিড়ম্বনা। বাধ্য হয়ে অনেকেই টিকা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে নীলফামারী পৌরসভার সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কুকুর নিধনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। এর আগে সরকারিভাবে রাজধানীর মহাখালী থেকে একটি টিম এসে কুকুর নিধন করত। তারা কুকুর প্রতি ৪০ টাকা করে নিত। এরপর একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের উচ্চ আদালতে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তিনি জানান, পরবর্তীতে জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কুকুরকে ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়া হয়েছিল। এখন সেটিও বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোনাক্কা আলী ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, কুকুরের টিকার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে (জলাতঙ্ক প্রতিষেধক) জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। আমরা শুধু টেকনিক্যাল সার্পোট (কারিগরি সহায়তা) দিয়ে থাকি। কী কারণে কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দেওয়া বন্ধ আছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি।

সিভিল সার্জন ডা. রণজিৎ কুমার বর্মন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারি নির্দেশে কুকুর মারা বন্ধ আছে। তবে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে র‍্যাবিস ভ্যাকসিন আছে। ভ্যাকসিন সংকটের কোনো কারণ নেই। তবে র‍্যাবিস আইজির বরাদ্দ না থাকায় এটি বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

তিনি জানান, র‍্যাবিস আইজি ভ্যাকসিনের ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় সরকারিভাবে এটি সরবরাহ নেই। কুকুরের কামড়ে অতিরিক্ত ক্ষতের সৃস্টি হয়ে ইনফেকশন (সংক্রমণ) হলে র‍্যাবিস আইজি টিকা নিতে হয়। এটি ব্যয়বহুল ও সরবারহ কম থাকায় অনেকেই কিনতে পারেন না। তবে এমন রোগীর সংখ্যা খুবই কম।

Exit mobile version