শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা আজ

অনলাইন ডেস্ক :

 

আজ ভাদ্রমাসের সংক্রান্তি শ্রীবিশ্বকর্মা পূজা। উপবেদ, স্থাপত্যবেদ ও চতুঃষষ্টিকলার প্রকাশক প্রযুক্তি বিদ্যার দেবতা শ্রীবিশ্বকর্মা। দেবগুরু বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা এবং অষ্টম বসু প্রভাসের পুত্র হলেন বিশ্বকর্মা।  স্থাপত্য, শিল্প, সৃষ্টি ও নির্মাণই হল তাঁর কাজ। তিনি বৈদিক দেব।

হিন্দু শাস্ত্র মতে অন্যান্য পুজো এবং তিথি নির্ধারিত হয় চন্দ্রের গতির উপর নির্ভর করে। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজো নির্ধারিত হয় সূর্যের গতি নির্ধারণ করে। সূর্য রাশি পরিবর্তন করে সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমনের দিনে হয় বিশ্বকর্মা পুজো। আগামী ৩১ ভাদ্র, শ্রীশ্রী বিশ্বকর্মা পুজো।

আজ সূর্য কন্যা রাশিতে প্রবেশ করে। কন্যা সংক্রান্তির দিনেই বিশ্বকর্মার পুজো হয়।  সনাতন ধর্মে বিশ্বকর্মা হলেন দেবশিল্পী। স্থাপত্য, শিল্প, সৃষ্টি, নির্মাণই তাঁর কর্ম। শাস্ত্রমতে দেবগুরু বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা এবং অষ্টম বসু প্রভাস পুত্র বিশ্বকর্মা। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, প্রাচীনকালের সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র ও প্রাসাদগুলি ভগবান বিশ্বকর্মাই নির্মাণ করেছিলেন। ভগবান ব্রহ্মা বিশ্বজগতের সৃষ্টির দায়িত্ব তাঁর হাতেই অর্পণ করেন।

বিশ্বকর্মা পুরাণ অনুযায়ী আদি নারায়ণ সবার আগে ব্রহ্মা ও তার পর বিশ্বকর্মার রচনা করেন। মনে করা হয় ব্রহ্মার সঙ্গে মিলে ইনি সৃষ্টির নির্মাণ করেন। বিশ্বকর্মা পূজা বিশেষত শিল্প, কারিগর এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সংযুক্তদের জন্য। ভগবান বিশ্বকর্মার পূজা করলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বৃদ্ধি হয়। জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে। বিভিন্ন কারখানা, অফিস, বাড়িতে যাদের গাড়ি ও অন্যান্য মেশিন আছে এবং বিভিন্ন নির্মাণ স্থানে বিশ্বকর্মার পূজা সর্বাধিক প্রচলিত। কাজের ক্ষেত্রে শ্রী বৃদ্ধির জন্য বিশ্বকর্মার পুজো করা হয়। বিশ্বকর্মাকে যন্ত্রের দেবতা মনে করা হয়। তাই বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে যন্ত্রপাতি, নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত মেশিন, দোকান, কারখানা ইত্যাদির পুজো করা হয়। পাশাপাশি এই দিনে চলে ঘুড়ির লড়াই।

বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে পরিষ্কার পোশাক পরিধান করুন। পূজার স্থান পরিষ্কার করুন। ভগবান বিশ্বকর্মার ছবি বা মূর্তি স্থাপন করে পূজা শুরু করুন। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার পূজা করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার কাজের সমস্ত সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতিতে তিলক লাগান। সরঞ্জামগুলিরও পুজো করুন। শাস্ত্রে বর্ণিত সঠিক বিধি মেনে ভগবান বিশ্বকর্মার পূজা করুন। বিশ্বকর্মাকে পান, সুপারি, হলুদ, অক্ষত, ফুল, ফল এবং মিষ্টি নিবেদন করুন। ধূপ ও প্রদীপ জ্বালান।

বিশ্বকর্মা বৈদিক দেবতা, ঋগবেদের ১০ম মণ্ডলে ৮১ এবং ৮২ সূক্তদ্বয়ে বিশ্বকর্মার উল্লেখ আছে। ঋগবেদ অনুসারে তিনি সর্বদর্শী এবং সর্বজ্ঞ। তাঁর চক্ষু, মুখমণ্ডল, বাহু ও পদ সবদিকে পরিব্যাপ্ত। তিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণকর্মা ও বিধাতা অভিধায় ভূষিত। তিনি ধাতা, বিশ্বদ্রষ্টা ও প্রজাপতি।

এবার জেনে নেওয়া যাক, বিশ্বকর্মা পুজোর সহজ মন্ত্র — দংশপালঃ মহাবীরঃ সুচিত্রঃ কর্মকারকঃ। বিশ্বকৃৎ বিশ্বধৃকতঞ্চ বাসনামানো দণ্ডধৃক। ওঁ বিশ্বকর্মণে নমঃ।

বিশ্বকর্মা পুজোর মন্ত্র

বিশ্বকর্মার পুজোয় ‘ওম আধার শক্তপে নমঃ’, ‘ওম কূমিয় নমঃ’, ‘ওম অনন্তম নমঃ’ ‘পৃথিবৈ নমঃ’

মন্ত্রের জপ করা উচিত। জপের সময় রুদ্রাক্ষ মালা ব্যবহার করবেন।

বিশ্বকর্মা পুজোর শুভক্ষণ

বিশ্বকর্মা পুজো ২০২৪ -র দিনক্ষণ

এই বছর বিশ্বকর্মা পুজো পড়েছে ১৭ সেপ্টেম্বর (বাংলায় ৩১ ভাদ্র), মঙ্গলবার।

অমৃত যোগ – দিবা ঘ ৭।৫২ গতে ১০। ১৬ মধ্যে ও ১২। ৪০ গতে ২। ১৬ মধ্যে ও ৩। ২ গতে ৪।৪০ মধ্যে এবং রাত্রি  ঘ ৬।১৬ মধ্যে ও ৮।৪০ গতে ১১। ৬ মধ্যে ও ১। ২৭ গতে ৩। ৪ মধ্যে

পূজো নিষেধ রাহুলের সময়ঃ  ১৭ তারিখ সকাল ৯ঃ০০ টা থেকে সকাল ১০ঃ৩০মিনিট।

উল্লেখ্য, সনাতন ধর্মে সব দেব-দেবীর পুজোর তিথি স্থির হয় চন্দ্রের গতি প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। শুধুমাত্র বিশ্বকর্মা পুজোর তিথি স্থির হয় সূর্যের গতি প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। সূর্য যখন রাশি পরিবর্তন করে সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে, সেই দিনই পালিত হয় বিশ্বকর্মা পূজা। অর্থাৎ প্রতি বছর ভাদ্রমাসের সংক্রান্তি বা কন্যা সংক্রান্তির দিনেই বিশ্বকর্মা পুজো করার প্রথা প্রচলিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *