ভরা মৌসুমেও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ইলিশ

ডিপি ডেস্ক :

 

নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে ইলিশ মাছ যেন এক সোনার হরিণ। অন্তত বছর ১৫ আগ থেকেই এ শ্রেণির মানুষরা ইলিশ খেতে ভুলে গেছে। তবে কালে-ভদ্রে মধ্যবিত্তের পাতে উঠত ইলিশ। সেটিও বছর তিনেক আগ থেকে যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।

অথচ এক সময় ভরা বর্ষায় ইলিশ বাঙালি ধনী-গরিব সবার পাতেই চড়ত। সেখানে বাদ যায়নি রাজশাহীর মানুষও। কিন্তু সেই ইলিশ মাছ এখন শুধু বড়লোকদের তরকারিতে পরিণত হয়েছে।  

রাজশাহীর বাজারে মঙ্গলবার এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২-১৪ শ টাকা, দেড় কেজি থেকে পৌনে দুই কেজি ওজনেরগুলো ১৮-১৯ শ টাকা, ৩০০-৩৫০ গ্রামেরগুলো ৫-৬ শ টাকা আর ৫-৬ শ গ্রামেরগুলো ৭-৮ শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

  

এ বছর শুরু থেকেই প্রায় একই দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজারে ইলিশের বেচাকেনাও তেমন নাই। যে অল্প কিছু খদ্দের আসছেন, সেগুলোর অন্তত ৯৫ ভাগই উচ্চবিত্ত শ্রেণির। বাকি মধ্যবিত্ত শ্রেণির যারা আসছেন, তারা ছোট সাইজের দু-একটা ইলিশ কিনছেন বা দাম জেনে চলে যাচ্ছেন।

  

রাজশাহী নগরীর নিউ মার্কেট ইলিশের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, এখানে প্রতিদিন ভোর থেকেই শুরু হয় ইলিশের কেনাবেচা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট ছোট পিকআপ ভ্যানে বা বাসের লাগেজ বক্সে আসে এখানে ইলিশ।

 

এ আড়তের খুচরা ইলিশ বিক্রি করেন আলাউদ্দিন। প্রায় ৩০ বছর ধরে সেখানে ইলিশ বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। আলাউদ্দিন বলেন, ‘এখন ভরা মৌসুম।

তার পরও বাজারে তেমন ইলিশ আসছে না। গত দুই তিন বছরের মতো এবারও দাম শুরু থেকেই চড়া। বাজারে যারা ইলিশ কিনতে আসছেন, তারা অধিকাংশই বড় লোক মানুষ। তারাই সাধারণত ইলিশ কেনেন।’ 

তিনি বলেন, ‘সারা দিন বসে থেকে যদি ৫০ জন খরিদ্দার আসে, তাহলে বড়জোর ২-৩ জন আসেন মধ্যবিত্ত। তাদের মধ্যে দাম-দর করে কেউ কেউ চলে যান। আর কেউ কেউ ছোট সাইজের ইলিশ দু-একটা কেনেন।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘একসময় ভরা বর্ষায় দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ অনেক পাওয়া যেত। এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। ২০-২৫ বছর আগেও বর্ষার সময় গরিব মানুষও ইলিশ খেতে পারতেন। কারণ তখন দাম কমে যেত। এখন তো সব সময় ইলিশের দাম চড়া। গরিব বা মধ্যবিত্ত মানুষরা ইলিশ কিনবে কী করে?’

 
আরেক ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন বলেন, ‘এক কেজি বা তার ওপরে হলেই ইলিশের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আমাদের কিনতেও হয় দ্বিগুণ দামে। একটা ইলিশ মাছ বিক্রি করে এখন ৫০ টাকা লাভ করাও কষ্ট। আবার ছোট আকারের ইলিশের তেমন স্বাদ থাকে না বলে মধ্যবিত্তরা সেটিও নিতে চান না। ফলে বাজারে ইলিশের ক্রেতা ধনী লোকজন।’

 

এ বাজারে ইলিশ কিনতে আসা আব্দুর রহমান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে ভাবছি ইলিশ কিনব। কিন্তু দাম তো কমছেই না। তাই কিনতে আশার সাহস পাইনি। আজ বাড়িতে মেয়ে আসছে, তাই একটা ইলিশ নিতে এলাম। দাম দেখে মাথায় হাত পড়ছে। কিনব না খালি হাতে বাড়িতে যাব ভাবছি।’ 

 

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা মধ্যবিত্ত। তাদের কাছে এখন বাজারের অন্য জিনিসপত্র কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় এতো দাম দিয়ে ইলিশ কেনা কষ্টের ব্যাপার।’

 

আরেক ক্রেতা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বাড়ির সবারই পছন্দ ইলিশ। কিন্তু এবারও দাম চড়া। এক কেজির কিছু ওপরের একটা ইলিশ নিয়েছি। আর এ বছর কিনব না।’

 

রাজশাহীর ইতিহাস গবেষক মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগেও বর্ষায় ধনী-গরিব প্রায় সবার পাতেই উঠত ইলিশ। এখন গরিবেরা আর ইলিশ কিনতে পারে বলে মনে হয় না। ইলিশ এখন বড়লোকদের খাবার। মধ্যবিত্তরাও তেমন কিনতে পারে না।’ 

 

তিনি বলেন, এক সময় রাজশাহীর পদ্মা নদীতেও বর্ষায় ইলিশ ধরা পড়ত। দেশের ইলিশ প্রধান অঞ্চলের চেয়ে পরিমাণে কম হলেও এখন রাজশাহীর পদ্মায় সেটিও হারিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে দু-একটা জাটকা জেলেদের জালে ধরা পড়ে বলে শুনি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *