ডিপি ডেস্ক :
শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) মহানবমী। মহানবমীতে মণ্ডপে-মণ্ডপে বাজবে বিদায়ের সুর। আগামীকাল রবিবার বিজয়া দশমির মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকানুযায়ী আজ মহানবমী পূজা। সকাল ৭টা ৪১ মিনিটে মহানবমী শুরু ও ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত পূজা শেষ হবে। অনেকের বিশ্বাস, মহানবমীর দিন হচ্ছে দেবী দুর্গাকে প্রাণ ভরে দেখে নেওয়ার ক্ষণ। এদিন অগ্নিকে প্রতীক করে সব দেবদেবীকে আহুতি দেওয়া হয়।
শারদীয় দুর্গাপূজার চতুর্থ দিন আজ মহানবমী। এদিন সন্ধ্যায় দেবীদুর্গার ‘মহা আরতি’ করা হয়। মহানবমীতে বলিদান ও নবমী হোমের রীতি রয়েছে। মূলত ‘সন্ধিপূজা’ শেষ হলে শুরু হয় মহানবমী। ১০৮টি নীলপদ্মে পূজা হবে দেবীদুর্গার। পূজা শেষে যথারীতি থাকবে অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ। ম-পে ম-পে প্রাণের উৎসবে ভক্তদের মাঝে বইবে বিষাদের সুর। নবমী দিন সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়ে থাকে মন্ডপে।
শ্রী শ্রী চন্ডী থেকে জানা যায়, দুর্গা রুদ্ররূপ (মা কালী) ধারণ করে মহিষাসুর এবং তার তিন যোদ্ধা চন্ড, মুন্ড এবং রক্তবিজকে হত্যা করেন। নবমী তিথি শুরুই হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমীর সূচনার প্রথম ২৪ মিনিট জুড়ে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ১০৮টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। আর ঠিক এই কারণে পূজার মন্ত্রেও সেই বিশেষত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। বুধবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শারদীয় এ দুর্গোৎসবের আগামীকাল রোববার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
পাঁচদিনের দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন মহাষ্টমীতে শুক্রবার সকাল ৭টা ১৭ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। এর পর সন্ধ্যা ৬টা ৫৩ মিনিটের পর অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠসহ কয়েকটি পূজামন্ডপে বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে দুর্গাপূজা আয়োজনের কারণে এসব মন্ডপে পূজার সময়ের কিছুটা হেরফের ঘটে। সর্বত্র পূজা শেষে ভক্ত ও পূজারীরা অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলিতে অংশ নিয়েছেন।
উৎসবের চতুর্থ দিনে আজ শনিবার রয়েছে মহানবমী। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুসারে আজ মহানবমী ও দশমী পূজা একই দিন পড়েছে। সকাল ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিতপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর সকাল ৮টা ২৬ মিনিটের মধ্যে দেবীদুর্গার দশমী বিহিতপূজা ও পূজান্তে দর্পণ বিসর্জন করা হবে। পূজা শেষে যথারীতি পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সন্ধ্যায় ভোগ আরতি থাকবে। এ উপলক্ষে ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের পূজামন্ডপে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে আরতি প্রতিযোগিতা।
শুক্রবার মহাষ্টমীর দিনে সকাল ১০টায় রামকৃষ্ণ মিশন পূজামন্ডপে সব নারীতে মাতৃবুদ্ধি রূপ উপলব্ধি করতে আয়োজিত হয় কুমারী পূজা। এবার দেবীর প্রতীকীরূপে পূজা প্রদান করা হয় ৮ বছর বয়সী কুমারী সংহিতা ভট্টাচার্যকে। এবারের মাতৃরূপী দেবীদুর্গার শাস্ত্রীয় নাম পূঞ্জিকা ।
শাস্ত্রমতে এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে ঊমা, সাতে মালনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অল্পদা বলা হয়ে থাকে।
বেলা সাড়ে ১০টায় শুরু করা হয় কুমারী পূজা। শেষ হয় বেলা ১টায়। অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস-এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় কুমারী মায়ের পূজা। অর্ঘ্য দেওয়ার পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এর পর পুষ্পাঞ্জলি এবং প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
এর আগে স্নান করিয়ে ঝকঝকে শাড়ি, ফুলের মালা, মুকুট, পায়ে আলতা, কপালে টিপ ইত্যাদি পরিয়ে সাজিয়ে তৈরি করা হয় কুমারী মাকে। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে এদিন ছিল হাজার অনুরাগীর ঢল। পূজামণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, কাঁসরঘণ্টা, শঙ্খের আওয়াজ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো প্রাঙ্গণ।
রাজধানীর নারিন্দা থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে কুমারী পূজায় আসা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অপর্ণা দেবনাথ বলেন, কুমারী পূজায় কুমারীরূপে মা দুর্গার আরাধনা করা হয়। আমি প্রতিবছর কুমারী পূজায় আসি। এবারও ভোরবেলা এসেছি বাবা-মায়ের সঙ্গে।
কুমারী পূজাকে ঘিরে রামকৃষ্ণ মিশনে সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিডিআর ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। মিশন গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পরই ভক্তদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। গোপীবাগ মোড় থেকে গোপীবাগ মাজার পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দর্শনার্থী ও পূজারীদের ব্যাপক ভিড়ে টিকাটুিল, ইত্তেফাক মোড়সহ ওই এলাকায় যানজট দেখা দেয়। মোড় থেকে হেঁটে মানুষ কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে মন্ডপে প্রবেশ করেছেন। কুমারীপূজা শেষে হাজার হাজার ভক্তের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ঢাকা ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল ও দিনাজপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজামণ্ডপে শুক্রবার কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়।
মহাষ্টমী পূজা শেষে ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির পূজামণ্ডপেও ১০ হাজার ভক্তের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। পূজা শেষে সন্ধ্যায় মণ্ডপে ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়।
রাজধানীসহ সারাদেশের পূজামন্ডপে শুক্রবার ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। আজ মহানবমীতে এ ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।