নিউজ ডেস্ক : ঢাকার কাছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজির অভিযোগে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সহযোগি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আসার পর প্রকল্পটি নিয়ে অনেকেই আলোচনা করছেন।
২০১৮ সালের ২৩শে অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেকে পাস করা হয় ওই উন্নয়ন প্রকল্পটি। যাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ১৪শ ৪৫ কোটি টাকা।
বলা হয়, অনুমোদনের পর পরবর্তী সাড়ে তিন বছরে বাস্তবায়ন করা হবে এই প্রকল্পটি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি উন্নত 'মডেল' বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই এমন প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জানানো হয়।
এরইমধ্যে প্রকল্পটির অধীনে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নির্মাণের কাজ চলছে।
এই প্রকল্পটি যখন পাশ হয়, তখন একে 'অস্বচ্ছ' দাবি করে আন্দোলন-প্রতিবাদও করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষক।
গত বছর একই সভায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় একনেক।
এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ৪৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৮ হাজার ৮৮ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। যার মধ্যে উন্নয়ন বাজেট ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৯৯কোটি টাকা।
একাডেমিক, আবাসিক এবং অন্যান্য সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং গুণগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য উপযুক্ত শিক্ষাদান ও শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প নেয়া হয় বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণা উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত শিক্ষার মান উন্নয়নের কথা বলা হয় এই এ প্রকল্পে।
এ বিষয়ে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ জানান, ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ৩১৫ কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ১৯৬৮ সালে যে মাস্টার প্ল্যান দিয়েছিলেন সেটাকে ভিত্তি করেই ওই পরিকল্পনাটি দেয়া হয়।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায় যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
গত বছর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রকল্পটির অধীনে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বহুতল বিশিষ্ট ৪১টি সুপরিসর স্থাপনা নির্মিত হবে।
তবে মি. আহমেদ বলেন, মোট স্থাপনার সংখ্যা ৪১টি নয় বরং প্রকল্প অনুযায়ী ২৩টি স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, "আবাসিক হল, লাইব্রেরী, লেকচার থিয়েটার, গেস্ট হাউস, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোয়ার্টারসহ মোট ২৩টি স্থাপনা এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হবে"।
এছাড়া অডিটোরিয়াম, মুক্ত মঞ্চ এবং শিক্ষার্থীদের ১২টি হলের সংস্কার কাজ হওয়ারও কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত যেসব স্থাপনার কথা বলা হয়েছে তা হলো..
•প্রতিটিতে ১ হাজার আসন বিশিষ্ট শিক্ষার্থীদের জন্য ৬টি আবাসিক হল
•দু'টি খেলার মাঠ
•৪ হাজার শিক্ষার্থীর ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন লেকচার থিয়েটার এবং পরীক্ষার হল ভবন
•৪ তলা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া কমপ্লেক্স
•৬ তলা বিশিষ্ট গ্রন্থাগার
•একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ
•১০ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন
•১০ তলা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের গেস্ট হাউজ কাম পোস্ট গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ হাউজ
•শিক্ষক, কর্মকর্তা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ১১তলা বিশিষ্ট আবাসিক টাওয়ার
•বৈদ্যুতিক লাইন সম্প্রসারণ এবং ট্রান্সফরমার স্থাপন
•পথচারীদের জন্য নান্দনিকতাপূর্ণ নিরাপদ রাস্তা
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নির্মাণ কাজগুলো সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোগত আমূল পরিবর্তন হবে।
যার ফল স্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হবে 'মডেল' বিশ্ববিদ্যালয়ে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকেই এই উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ কর্মবিরতি, পদযাত্রা ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মির্জা তাসলিমা সুলতানা অভিযোগ করেন, এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কী কী উন্নয়ন করা হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কোন তথ্য দেয়া হয়নি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির মুখে প্রকল্প সম্পের্ক যা কিছু জানানো হয়েছে তাও প্রকল্পের সম্পূর্ণ চিত্র নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, "শোনা যাচ্ছে নানান কথা যে, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বাসস্থান হবে। কিন্তু এর মধ্যে আর কি কি আছে সেগুলো স্পষ্ট করা হয়নি আমাদের কাছে।"
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর উন্নয়নে এখনো পর্যন্ত এতো বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি।
এই প্রকল্পটিকে সবচেয়ে বড় অস্বচ্ছ প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
তাঁর দাবি, "এর আগে যেসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিলো সেগুলো নিয়েও কিছু অস্বচ্ছতা ছিলো। কিন্তু বর্তমান প্রকল্পটির মতো এতো বেশি অস্বচ্ছ আর কোন প্রকল্পই ছিলো না"।
তবে প্রকল্প নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি এই প্রকল্পে কাজ করেছে। তারা এই প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তারপর এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে সবশেষ একনেক কমিটির মাধ্যমে পাস হয়েছে। তাই এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
সূত্র :বিবিসি নিউজ
<p>পরিচিতি</p><p>প্রকাশক ও সম্পাদক - মোঃ সালমান শাহেদ</p><p>বার্তা সম্পাদক - সজীব কুমার নন্দী</p><p>যোগাযোগ</p><p>ঢাকা অফিস: ৯৫ আজিজ ম্যানশন, (৩য়) তলা, বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সড়ক, কাকলী বনানী ঢাকা-১২১৩ বাংলাদেশ। </p><p>১৩৪ এন.এস.রোড, কুষ্টিয়া - ৭০০০, বাংলাদেশ।</p><p>ফোন - +৮৮০-১৮৩১-৩৬৬০১২</p><p>ই-মেইল - info@desherpotrika.com</p><p>সতর্কতা</p><p>এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার ও কপি করা বেআইনি।</p><p>© কপিরাইট ২০১৮ । www.desherpotrika.com</p>
Copyright © 2024 দেশের পত্রিকা - দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে. All rights reserved.