জিআই স্বীকৃতি পেল শেরপুরের ছানার পায়েস

ডিপি ডেস্ক :

 

তুলশীমালা ধানের পর এবার শেরপুরের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেলো ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস। আজ বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ সংবাদ প্রকাশের পর শহরজুড়ে মিষ্টান্ন পল্লীতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মিষ্টি দোকানীরা। এ উপলক্ষে সাধারণ মানুষের মাঝে ছানার পায়েস বিতরণ করা হয়েছে। 

ছানার পায়েস বানানোর কৌশল জানালেন মিষ্টি কারিগর রিপন চন্দ্র ভদ্র। তিনি বলেন, ছানার পায়েস তৈরি করতে খাঁটি দুধ, চিনি, ময়দা ও এলাচ লাগে। প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর করা হয়। এরপর আলাদাভাবে দুধ থেকে ছানা কেটে তাতে সামান্য ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করা হয়। এই গুটি চিনিমিশ্রিত শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরে ছেড়ে হাল্কা আঁচে জ্বাল দেওয়া হয়। এভাবেই তৈরি হয় সুস্বাদু এই মিষ্টি। এক কেজি ছানার পায়েস তৈরি করার জন্য দুই কেজি দুধ, আধা কেজি চিনি, সামান্য পরিমাণ ময়দা ও ১০ থেকে ১৫ গ্রাম এলাচ লাগে।

শেরপুর শহরের রঘুনাথ বাজার মহল্লার মিষ্টি দোকানী বাপ্পি দে জানায়, শেরপুরের প্রশাসন, সাংবাদিক, সুধি মহল থেকে শুরু করে সব মহলের সহযোগিতায় জিআই পণ্য হিসেবে ঐতিহ্যবাহী ছানার পায়েস জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় শেরপুরের সুনামও বাড়বে।

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের ৪৪তম জিআই পণ্যের মর্যাদা অর্জন করেছে শেরপুরের ছানার পায়েস। আমরা আজকেই সনদের কপি হাতে পেয়েছি। জিআই পণ্য হওয়ার কারণে তা সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শেরপুরের সম্ভাবনাময় আরও কয়েকটি পণ্যের সরকারের কাছে জিআই স্বীকৃতি চাওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, শেরপুরের ছানার পায়েসের ঐতিহ্য দুই শত বছরের পুরনো। জনশ্রুতি আছে, নানা অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ জমিদাররা শেরপুরে আসতেন। সাথে আনতেন মিষ্টির কারিগর। এই অঞ্চলে গরুর খাঁটি দুধ থেকে কারিগররা বানাতেন ছানার পায়েস। এই ছানার পায়েস জমিদাররা নিজেরা খেতেন, পরিবারের জন্য নিয়ে যেতেন, কর্মচারি পাইক পেয়াদাদের দিতেন। কখনও কখনও প্রজারাও পেতেন।আস্তে আস্তে এই মজার মিষ্টি পণ্যটি বাণিজ্যিকভাবে মিষ্ঠির দোকানগুলোতে বানানো ও বিপণণ শুরু হয়। জেলা সদর ও সদরের বাইরে অন্তত ৫০টি দোকানে ছানার পায়েস হচ্ছে। এসব দোকানে প্রতিদিন গড়ে  ৫০০’শ কেজি ছানার পায়েস বিক্রি হয়। বিশেষ স্বজন ও বন্ধুবান্ধব শেরপুরে আসলে ছানার পায়েস দেওয়ার একটি রেওয়াজ এখনও আছে। বিয়ে, জন্মদিন, হিন্দু-মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে  আপ্যায়নের জন্য শেরপুরের মানুষের কাছে পছন্দের মিষ্টি ছানার পায়েস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *