চাল সংগ্রহ কুষ্টিয়ায় বন্ধ মিলের নামে বরাদ্দ, জানেন না মালিক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :

 

কুষ্টিয়ায় সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ অভিযানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলাসহ আরো কয়েকটি উপজেলায় অস্তিত্বহীন ও লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া মিলের নামে দেওয়া হয়েছে বরাদ্দ। আবার বরাদ্দের বিষয়ে জানেন না অনেক মিল মালিক। সাধারণ মিল মালিকদের অভিযোগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে দিনের পর দিন চলছে এই অনিয়ম। 

জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম হচ্ছে লাইসেন্স থাকা সাপেক্ষে চালকল সচল এবং চাল সরবরাহ করার সক্ষমতা আছে তাদের কেই চালের বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিবছর একটি বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সেইসব চালকলের তালিকা তৈরি করা হয়। বরাদ্দ পাওয়ার পর চালকল মালিকরা খাদ্য অফিসের সাথে চুক্তি করে চাল সরবরাহ করে থাকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রায় ৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার মিরপুর উপজেলার নিমতলা এলাকার শেখ রাইচ মিল। মিলের স্থাপনা ভেঙে সেখানে এখন চলছে চাষাবাদের প্রস্ততি। সেই মিলের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১২ মেট্রিক টন চাল। আবার একই এলাকার বাসনা রাইচ মিল চার বছর আগে বিক্রি হয়ে গেছে। এই মিলের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন চাল। 

মিরপুরের বিআর রাইচ মিলের একই অবস্থা। মালিক বজলুর রহমান বলেন, “নবায়ন না করায় বাতিল হয়ে গেছে আমার মিলের লাইসেন্স। কিন্তু আমার মিলের নামেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২ মেট্রিক টন চাল। অথচ এসব বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানি না আমি।” 

বন্ধ শেখ রাইচ মিলের মালিক মমিনুর রহমান বলেন, “আমাদের মিলটা হাস্কিং মিল। এটা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২০ সাল পর্যন্ত মিলটি চালু থাকলেও এরপর থেকে বন্ধ আছে। মিলের জন্মলগ্ন থেকে দুইবার আমরা সরকারের কাছে চাল দিতে পেরেছি। বাদবাকি সময় যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দল সিন্ডিকেট চালায়। আমাদের লাইসেন্স আমরা চোখেও দেখি না। এখনো একই অবস্থা। আমাদের সই স্বাক্ষরও লাগে না ওরাই সই করে, ওরাই বরাদ্দ নেয়।”

বাসনা রাইচ মিলের বর্তমান মালিক রাশেদুজ্জামান বলেন, “মিলটি চালাতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। তাই আমরা মিলটি বন্ধ করে দেই।” 

তিনি আরো বলেন, “আর ফুডের লাইসেন্সের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বা কোনো কাগজ হাতে পাইনি।” 

মিলটির আগের মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, “মিলটি চালু থাকা অবস্থায় ২০ বছর আগে আমি ২০ লাখ টাকা সিসি লোন নেই। সেই লোন পরিশোধ করতে না পারায় সুদের টাকা অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে ২ বছর আগে এই মিল বিক্রি করতে বাধ্য হই।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মিল মালিক বলেন, শুধু শেখ রাইচ মিল, বাসনা রাইচ মিল বা বিআর রাইচ মিলই নয়। মিরপুর এবং দৌলতপুর উপজেলায় চাল ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া চালকলের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অস্তিত্বহীন অথবা বন্ধ। তারা অভিযোগ করে বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা যোগসাজসে দিনের পর দিন চলছে এই অনিয়ম। সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদের সাহস করে না। 

তবে এমন অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, “মিরপুরের বেশিরভাগ চালকলের অস্তিত্ব নেই। দৌলতপুরেও একই অবস্থা। রাজনৈতিক কারণে আমরা কিছু বলতে পারি নাই।”

যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মিরপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা জিন্নাত জাহান বলেন, “তিনজনের একটা কমিটি করে তালিকা তৈরি করে পাঠিয়েছিলাম। এরকম হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কারণ আমি মিলারদের বলেছি আমার ইন্সপেক্টর যদি কোনো মিলের তথ্য গোপন করে তাহলে আপনারা জেলা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত জানান। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আল ওয়াজিউর রহমান বলেন, “প্রত্যেকটা সংগ্রহ মৌসুমের শুরুতেই আমাদের একটা সার্ভে হয়। এই মৌসুমে যে মিলটা ভালো আছে পরের মৌসুমে সেই মিলটা ভালো নাও থাকতে পারে। কেউ বিক্রিও করে দিতে পারে। সেসব মিলের অস্তিত্ব আছে বা চালু আছে আমরা সেই মিলগুলোকে সার্ভেতে রেখেছি। নোটিশ বোর্ডে এবং মিটিং তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা আছে সুনিদিষ্টভাবে যদি কোনো মিল সম্পর্কে কোনো অভিযোগ থাকে। তবে সাথে সাথে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং বরাদ্দ বাতিল করা হবে। যে মিলগুলোর বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে সেইগুলোর বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

চলতি আমন মৌসুমে কুষ্টিয়ায় ৪৭ টাকা কেজি দরে ১৯ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয় করবে খাদ্য বিভাগ। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *