সুর নরম করলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী

ন্যাশনাল ডেস্ক : বাংলাদেশে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ঢাকায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানো বা জুয়ার বিরুদ্ধে র‍্যাবের অভিযান নিয়ে এখন দ্বিমুখী বক্তব্য দিচ্ছেন।

তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, এতদিন অবৈধভাবে চলা ক্যাসিনো বা জুয়ার বিরুদ্ধে কেন অভিযান চালানো হয়নি?

একইসাথে এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে মি: চৌধুরী বলেছেন, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর পিছনে যুবলীগের অনেকে জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, সংগঠনের সভাপতি হিসেবে এটি তার ব্যর্থতা বলে তিনি মনে করেন।

কিন্তু তিনি ব্যর্থতার দায় নিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করতে রাজি নন।

র‍্যাব গত বুধবার রাতে ঢাকায় একের পর এক অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে চলা চারটি ক্যাসিনো বন্ধ করে দিয়েছে।

এরমধ্যে অবৈধভাবে একটি ক্যাসিনো পরিচালনা করার অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে র‍্যাব গ্রেফতার করেছে।

কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের কাছে সহযোগী সংগঠন যুবলীগের কয়েকজন নেতার কর্মকান্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

সে সময় চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের দু’জন শীর্ষ নেতাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে র‍্যাব ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তা অব্যাহত রাখার কথা বলেছে।

চার ‘ক্যাসিনো’তে রাতের সমন্বিত অভিযানে বহু আটক
ঢাকায় জুয়ার আদ্যোপান্ত: ক্লাব হাউজি থেকে ক্যাসিনো
জুয়া নিয়ে বাংলাদেশের আইনে যা বলা আছে

ঢাকায় বুধবার রাতে র‍্যাবের অভিযানে চারটি ক্যাসিনো থেকে বহু গ্রেফতার হয়, যার একজন যুবলীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা।
গতকালই এই অভিযানের কড়া সমালোচনা করেন ওমর ফারুক চৌধুরী।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, এতদিন অবৈধভাবে ক্যাসিনো চললো কিভাবে? পুলিশ বা র‍্যাব এতদিন কি করেছে?

এসব প্রশ্নের পাশাপাশি তিনি র‍্যাবের অভিযানকে রাজনীতিবিরোধী ষড়যন্ত্র বলেও অভিযোগ করেছেন।

এই বক্তব্যসহ তার ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

তবে র‍্যাবের অভিযানের পরদিন বৃহস্পতিবার বিবিসি’র সাথে সাক্ষাৎকারে যুবলীগ নেতা মি: চৌধুরীর সুর কিছুটা নরম মনে হয়েছে।

তিনি র‍্যাবের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশাসনিক পদক্ষেপ। ফলে এটিকে তিনি শুভ উদ্যোগ হিসেবে দেখেন।

কিন্তু র‍্যাবের অভিযানের বিরুদ্ধে তার বক্তব্যের যে ভিডিও যা ভাইরাল হয়েছে, সেই বক্তব্য থেকে তিনি এখন সরে আসছেন কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে তখন তিনি বলেছেন, এখনও তার সেই প্রশ্ন রয়েছে যে, এতদিন কেন অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়নি।

“একই কথাইতো। আমি অন্যায় করেছি, তাতে এতদিন পর ব্যবস্থা কেন? সেটা যদি অঙ্কুরেই এই ব্যবস্থাগুলো নেয়া হতো, নিশ্চয়ই আজকে আপনি এসব প্রশ্ন করতেন না।”

যুবলীগ নেতা মি: চৌধুরী এখন নিজের ব্যর্থতার কথাও বলছেন।

তার বক্তব্য হচ্ছে, অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনা বা জুয়ার সাথে যুবলীগের অনেক নেতা জড়িত বলে যে সব অভিযোগ এসেছে, এসব বিষয় তার জানা ছিল না।

এখন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসার পর তিনি বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনেছেন বলে দাবি করেন।

“ব্যর্থতা প্রথমে আমার আসবে। আমি অন্যের সমালোচনা কেন করবো? এটি আমার ব্যর্থতা। যেহেতু আমি যুবলীগের চেয়ারম্যান। ফলে বিষয়গুলো কেন আমার অজানা ছিল?আমার নিশ্চয়ই সম্পৃক্ততা ছিল, তা নাহলে এই কাজগুলো হলো ক্যামনে? এখন নিজেকে নিয়ে তিনি এমন প্রশ্ন করেন।

ব্যর্থতা বা দায় যদি নিজের ঘাড়ে নেন, তাহলে যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি তার পদে বহাল থাকার কথাই তুলে ধরেছেন।

“ব্যর্থতা মানেই কি পদত্যাগ করা? সমস্যা থাকবেই। এখন ব্যর্থতাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করার সুযোগ এসেছে।”

“আমি এসবের পিছনে আরও কারা জড়িত, তার বিস্তারিত আমি জানার চেষ্টা করবো। এগুলো চিহ্নিত করে আমি কিভাবে সমস্যা সমাধান করবো, সেই উপায় এখন আমি দেখবো।”

অবৈধ ক্যাসিনো চালানো এবং চাঁদাবাজিসহ অনেক অভিযোগের ভারে যুবলীগ যে ভাবমূর্তির সংকটে পড়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ এবং সরকারকে বিব্রত করে কিনা- এই প্রশ্ন অবশ্য তিনি মেনে নিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “নিশ্চয়ই বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। তবে আমার বা যুবলীগের সৃজনশীল যে কাজগুলো আছে, সেগুলোকেতো আপনারা স্বীকৃতি দেন না।”

যুবলীগ নেতার প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব
র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন-কাশেম বিবিসিকে বলেছেন, কোন অনিয়ম বা অপরাধের ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই র‍্যাব অভিযান চালায়।

তিনি উল্লেখ করেছেন, অবৈধ ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রেও র‍্যাব অনেকদিন ধরে তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং অভিযোগের পক্ষে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার সাথে সাথে ৪টি ক্যাসিনোতে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

র‍্যাবের কর্মকর্তা মি: বিন-কাশেম বলেছেন, অবৈধ ক্যাসিনো নিয়ে আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং নিশ্চিত তথ্যপ্রমাণ নিয়ে অভিযান চালানো হবে।

এই কর্মকর্তা বলেছেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযাযী র‍্যাব পেশাদার বাহিনী হিসেবে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এই অভিযান অব্যাহত রাখবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *