কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস আজ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :

 

আজ ১১ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জেলাকে শত্রুমুক্ত করেন। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ৫ দিন আগেই কুষ্টিয়ার জনগণ অর্জন করেছিলো বিজয় নিশান। একদিকে স্বজনের গলিত লাশ আর সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের আর্তনাদ সবকিছুকে ম্লান করে সেদিন বিজয়ের আনন্দে মানুষ রাস্তায় নেমে উল্লাস করেছিল।

সেই দিনের বেদনা ও উচ্ছ্বসিত অনুভূতি তুলে ধরে বীরমুক্তিযোদ্ধা মানিক কুমার ঘোষ জানান, ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ ভোর রাতেই পাক হানাদারদের আক্রমণের শিকার হয় কুষ্টিয়া। প্রতিরোধ যুদ্ধের মুখে ১ এপ্রিল রাতে পাক বাহিনী কুষ্টিয়া ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর দফায় দফায় বিমান হামলা চালিয়ে ১৬ দিন পর আবারো কুষ্টিয়া দখল করে নেয় পাকবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর তুমুল লড়াই চলে। এরমধ্যে ২৬ নভেম্বর সবচেয়ে বড় সম্মুখ যুদ্ধ হয় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে। ৯ ডিসেম্বরে কুষ্টিয়া শহর ছাড়া সমস্ত এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। শহর মুক্ত করতে শুরু হয় তুমুল লড়াই। এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের অসংখ্য মানুষ নিহত হয়। ১১ ডিসেম্বর আসে চূড়ান্ত বিজয়। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল করীম বলেন, “৯ মাস ধরে যখন থেমে থেমে যুদ্ধ হয়, তখন বাঙ্গালী নিধন আর গণহত্যার উৎসবে মেতে উঠে পাকবাহিনী। ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ কুষ্টিয়া শহরের বিহারী কলোনির কোহিনুর ভিলার ১৬ জন শহীদ হন। এটি এ জেলার একটি পরিবারের উপর সংঘটিত সবচেয়ে বড় গণহত্যা।”

প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল বলেন, “দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামে হানাদার পাকসেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করে যে সব বীরযোদ্ধারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের সমাধি হিসেবে কুমারখালী, বংশীতলা, বিত্তিপাড়াসহ জেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক গণকবর রয়েছে। এসব স্থানে নির্বিচারে হাজারো ব্যক্তিকে গণহত্যা করা হয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “তবে যে আকাঙ্খা ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে  লক্ষ প্রাণের বলিদান, সেই আকাঙ্খা ও স্বপ্ন পূরণ এখনো সুদূর পরাহত।” 

এর আগে ৪ ডিসেম্বর খোকসা, ৭ ডিসেম্বর আমলাসদরপুর, ৮ ডিসেম্বর মিরপুর, দৌলতপুর ও ভেড়ামারা থানা ও ৯ ডিসেম্বর কুমারখালী থানা পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *