অনলাইন ডেস্ক :
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের একটি উপশাখায় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জিম্মি করে রাখা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের। গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় ওই ব্যাংকে হানা দেওয়া তিন ডাকাত আত্মসমর্পণ করলে অবসান ঘটে এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির। এ সময় চারটি খেলনা পিস্তল, একটি চাকু ও একটি লাঠি জব্দ করা হয় বলে জানা গেছে। এ ছাড়া লুট করা ১৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে অক্ষত অবস্থায় ১৮ জন গ্রাহক-কর্মীকে উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তাদের ব্যাংকের ভিতরে ব?্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
আটক ডাকাতদের নাম আরাফাত (১৬), বাড়ি গোপালগঞ্জ, থাকে রাজধানীর কদমতলী। সিফাত (১৬) ও নিলয় মোল্লা ওরফে নিরব (২২)। এ দুজনের বাড়ি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলীর খালপারে।
ডাকাতরা আত্মসমর্পণের আগে পাশের ভবন থেকে সেখানকার বাসিন্দারা ব?্যাংকের জানালা দিয়ে ভিতরের চিত্র ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, এক ডাকাত সদস্য চেয়ারে বসা। পাশে হাঁটু মুড়িয়ে সারিবদ্ধভাবে কড়জোরে রাখা হয় ব্যাংকের কর্মী এবং গ্রাহকদের। আর তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে আরেক ডাকাত সদস্য। র্যাব-১০-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার বলেন, রূপালী ব্যাংকে ঢুকে ১৫ লাখ টাকা দাবি করা তিন ডাকাত আত্মসমর্পণ করে। পরে তাদের কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। এর আগে দুপুর ২টার দিকে কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখার চুনকুটিয়া উপশাখায় হানা দেয় ডাকাতরা। এতে ব্যাংকের গ্রাহক ও কর্মীরা ভিতরে জিম্মিদশায় পড়েন। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় দোকানদাররা ব্যাংকের নিচের কেঁচি গেটে তালা দিয়ে দেন। ব্যাংকে ডাকাত দলের হানা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করে। ব্যাংকের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যরা তাদের বারবার দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর পাশের একটি মসজিদের মাইক থেকে ডাকাত দলকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। প্রয়োজনে যাতে ব্যাংকের ভিতরে অভিযান চালানো যায়, সে প্রস্তুতিও নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এরপর ভিতর থেকে ডাকাতরা ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা দাবি করে, তাদের নগদ ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে। সঙ্গে একজন ব?্যাংক কর্মকর্তাকে দিতে বলে। পাশাপাশি জিপ গাড়িতে করে স্কট দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পার করে দিতে বলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, আশপাশে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ জড়ো হয়েছে। যদি তারা সুস্থ ও নিরাপদে বের হতে চায় তাহলে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে ডাকাতরা আত্মসমর্পণে রাজি হয়। তারা জানালা দিয়ে তাদের হাতে থাকা অস্ত্র ফেলে দেয়। এরপর তারা মাংকি টুপি পরে নিচে নেমে এলে র্যাব দ্রুত তাদের আটক করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নিয়ে যায়। এরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে ব্যাংকের সামনে জড়ো হয় হাজারো উৎসুক মানুষ। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব আল হোসাইন বলেন, ‘তিন ডাকাত আমাদের হেফাজতে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।’ পুলিশের কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডাকাত পড়ার খবর পেয়ে প্রথমে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে ব্যাংকের গেটে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে ব্যাংকের ওই শাখার চারপাশে অবস্থান নেয়। তারা আলোচনার মাধ্যমে ডাকাতদের আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা চালান। ফাহিম আহমেদ সাগর নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘আমরা ব্যাংকে ডাকাত ঢোকার খবর জেনে ব?্যাংকের নিচে অবস্থান নিই। ডাকাতদের ধরতে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সব ধরনের সহযোগিতা করি। তবে ব্যাংকে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’ র্যাব-১০-এর অধিনায়ক খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, আটক ডাকাতরা পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রগুলো দেশি পিস্তলের মতো মনে হয়েছে। কিন্তু সেখানে গুলি লোড করা ছিল কি না তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। এদিকে অভিযানে অংশ নেওয়া এক সূত্র জানান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদের নেতৃত্বে সাড়ে ৫টায় তিনজন ডাকাত চারটি খেলনা পিস্তল, একটি চাকু, একটি স্টিলের লাঠিসহ আত্মসমর্পণ করে। ব্যাংক আটকে পড়া গ্রাহক-স্টাফসহ মোট ১৮ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বিস্তারিত জানাবেন বলে জানানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ডাকাতরা যখন সিঁড়ি দিয়ে ওই ব্যাংকের দ্বিতীয় তলায় ঢোকে, তখন নিচের অন্য লোকজন ও ব্যবসায়ীরা বিষয়টি টের পেয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও লোকজন ব্যাংকের প্রবেশ ও বের হওয়ার একমাত্র সিঁড়ির মুখে থাকা কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেন। এর পরই ব্যাংকের ভিতরে থাকা ডাকাতরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে ব্যাংকটি ঘিরে ফেলেন। পরে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ঘটনার বিস্তারিত জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের কাছে জানার চেষ্টা চলছে।