অনলাইন ডেস্ক :
দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকার হাজারো দর্শককে সুরের মূর্ছনায় মাতিয়েছেন পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান; দর্শকদের অবাক করে দিয়ে গেয়েছেন বাংলা গানও। বিপিএল এর উদ্বোধনী মঞ্চে দেশের খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী রুনা লায়লার সুরে ‘ভালোবাসা আমার পর হয়েছে’ গানটি গেয়েছেন রাহাত ফতেহ আলী।
২৩ ডিসেম্বর, সোমবার রাত ৯টায় মঞ্চে উঠে চিরচেনা ভঙ্গিতে তিন দিন আগে বাংলাদেশে আসা এই শিল্পী বলেন, “ভালোবাসা বাংলাদেশ। প্রথমবার বিপিএলে গাইতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিপিএলের সব দলের জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভ কামনা।”
কথা আর বেশি না বাড়িয়ে গানের মধ্যে ঢুকে পড়েন। ‘আল্লাহ হু’ গান দিয়ে শুরু করে একে একে ছড়িয়ে দিতে থাকেন সুরের জাদু। গাইলেন নুসরাত ফতেহ আলী খানের ‘সানু এক পাল চেইন’ গানটি। এরপর গেয়েছেন ‘খুদা অর মহব্বত’।
গানটি শেষ করে রাহাত ফতেহ আলী বললেন, “এবার আমি বাংলাদেশের গান গাইব। দুই দেশের জনপ্রিয় শিল্পী রুনা লায়লার সুরে কবির বকুলের লেখা ‘ভালোবাসা আমার পর হয়েছে’ গানটি শোনাব।”
তুমুল কড়তালির মধ্যে এ গান শুরু করেন তিনি। এরপর একে একে গেয়েছেন ‘জরুরি থা’, ‘তেরে রাশকে কামার’, ‘মেরে পাস তুম হো’, ‘পিয়া রে’, ‘আফরি আফরি’, ‘তেরে মাস্ত মাস্ত’।
দুই ঘণ্টা টানা গান গেয়ে শীতের রাতে সবাইকে সুরের জালে মোহিত করেছেন রাহাত ফতেহ আলী। দর্শক-শ্রোতারা যখন কনসার্ট শেষের ঘোষণা শুনলেন তখনও গানের আবেশে ডুবে ছিলেন তারা। শেষ গান থেমে গেলে স্টেডিয়াম ছাড়তে শুরু করেন তারা; তবে তখনও বিভোর ছিলেন জনপ্রিয় এ শিল্পীর গানে, কেউবা গুন গুন করছিলেন, অনেকে আবার দলবেধে কোরাসে মেতে ছিলেন।
এদিন তিনি আরও গেয়েছেন তার জনপ্রিয় ‘তুমহে দিল্লাগি’ ‘দে দে প্যায়ার মাঙ্গা’, ‘ওরে পিয়া’, ‘মিল যা কোয়ি’, ‘দাগা পাসলে’সহ বেশ কয়েকটি গান।
সোমবার ঢাকার শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় ‘বিপিএল টি ২০ মিউজিক ফেস্ট’।
বিপিএলের নতুন মৌসুম শুরুর আগে আয়োজন করা হয় এ কর্নসার্টের, যেটির মূল আকর্ষণ ছিলেন পাকিস্তানের সুফি সংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী। তিন দিন আগে শনিবার আর্মি স্টেডিয়ামে যার সুরে মুগ্ধ হয়েছেন অগুণিত দর্শক-শ্রোতা।
মিরপুরে এদিন এ উৎসবে গিটার, কি বোর্ড আর ড্রামে প্রথম সুর তোলে ব্যান্ড ‘অ্যাভয়েড রাফা’। তাদের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় এ ফেস্ট। তখন মাঠে শ্রোতা–দর্শকরা কেবল আসতে শুরু করেন।
কনসার্ট শুরুর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়াত উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃত্যুতে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।
এরমধ্যেই ‘আনমনে’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করে রাফা। দলটির জন্য সময় বেঁধে দেওয়া ছিল এক ঘণ্টা। ‘তুমি ডাকলেই ফিরবো’, ‘হাড় কালা’, ‘কষ্ট’, ‘চলো আরেকবার উড়ি’, আনমনে- ২’, ‘আমি আকাশ পাঠাব’ গান গেয়ে মঞ্চ ছাড়েন দলটি।
এরপর নামাজের বিরতির পর মঞ্চে আসেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও জুলাই অভ্যুত্থানে আহত কয়েকজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিশু আরাফাতের মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। এরপর জুলাই গণ আন্দোলনের ওপর বিশেষ প্রদর্শনী দেখানো হয়।
সন্ধ্যা ৫টা ৩৮ মিনিটে মঞ্চে উঠেন জেফার, মুজা ও সঞ্জয়। এক ঘণ্টা একসঙ্গে পারফর্ম করেন তারা।
সঞ্জয়ের ডিজে মিউজিক দিয়ে তাদের পরিবেশনা শুরু করে জেফার গেয়েছেন ‘ঝুমকা’ গান। জেফারের পর একসঙ্গে তিনজন গেয়েছেন ‘আড়ালে হারালে’। এরপর মুজা গেয়েছেন ‘নয়া দামান’, ‘আসি বলে গেল বন্ধু’, ‘ঢোল এর তালে’, ‘বেনী খুলে’ গান দিয়ে পরিবেশনা শেষ করেন তারা।
তারপরই ঘোষণা আসে মঞ্চে উঠবে দর্শকপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস। ততক্ষণে মিরপুর স্টেডিয়ামে কানায় কানায় পূর্ণ শ্রোতা ও দর্শকে।
মঞ্চে উঠে ‘মাইলস’ এর হামিন আহমেদ বলেন, “আমরা খুব এক্সাইটেড বিপিএলের এই মিউজিক ফেস্টের জন্য। আমরা আপনাদের নিয়ে আমাদের প্রিয় গানগুলো গাইব।”
‘নীলা’ গান দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন হামিন। এরপর গেয়েছেন ‘প্রিয়তমা মেঘ’, ‘চাঁদ, তারা, সূর্য নও’, ‘পিয়াসী মন’, ‘ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে’।
গান থামিয়ে দর্শকের উদ্দেশ্যে হামিন আবার বলেন, “আমাদের একটা গান আছে, যেটা যেই কনসার্টেই যাই না কেন রিকুয়েস্ট আসে এবং মজার ব্যাপার হল আমাদের আগে গানটা দর্শকই শুরু করে, পরে আমরা গাই। তাহলে শুরু হয়ে যাক ‘নিঃস্ব করেছো আমায় কি নিঠুর ছলনায়’।”
এরপর আবার মঞ্চে উঠেন মুজা, সঞ্জয় ও র্যাপার হান্নান হোসেন শিমুল। তারাই একসঙ্গে গেয়েছেন এবারের বিপিএলের থিম সং ‘আবার এলো বিপিএল…’। মঞ্চে উঠে থিম সংটি গেয়ে শোনান তারা।
এরপর গ্রাফিতি প্রদর্শন, ট্রফি উন্মোচন এবং এই ফেস্টের পৃষ্ঠপোষক কোম্পানির কর্মকর্তারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
আনুষ্ঠানিকতার এ পর্ব পেরিয়ে মঞ্চে আসেন কনসার্টের মূল চমক রাহাত ফতেহ আলী। সাড়ে ৮টায় তার মঞ্চে ওঠার কথা থাকলেও তিনি উঠেছেন ৯টার কাছাকাছি সময়ে। এর আগে তার দল ‘তেরে রাশকে কামার’ গানের সানাইয়ের সুর ঝংকারে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের।