অনলাইন ডেস্ক : এই পৃথিবীতে লুকিয়ে রয়েছে নানা অজানা রহস্য, যে রহস্যের কোনো কিনারা নেই, নেই কোনো তল। যার সামনে লোপ পেয়ে যায় সমস্ত বৈজ্ঞানিক যুক্তি, বিচার বুদ্ধি । এমনই একটি জায়গা হলো অস্ট্রেলিয়ার অ্যারাডেল মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র।
১৩০ বছরে ১৩ হাজার রহস্যজনক মৃত্যু এই অ্যাসাইলামকে পৃথিবীর অন্যতম ভুতুড়ে জায়গার তকমা দিয়েছে। কী এমন রয়েছে ওই জায়গায়? কেনই বা সেই জায়গাকে নিয়ে এত রটনা?
দেখে নেয়া যাক…
প্রায় দু’ হাজার রোগী এবং ৫০০ জন নার্স এবং ডাক্তার নিয়ে মেলবোর্ন থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে অ্যারাডেলে ১৮৬৭ সালে ওই চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। বিস্তৃত জায়গার উপর গড়ে ওঠা ওই হাসপাতাল যেন নিজেই একটি গ্রামের সমান। চ্যাপেল, বাগান, স্কুল কী ছিল না সেখানে!
শুধুমাত্র মানসিক প্রতিবন্ধীই নন, অটিস্টিক মানুষদেরও রাখা হত ওই হাসপাতালে। এছাড়াও সমাজের কুখ্যাত দুষ্কৃতীদেরও সংশোধনের জন্য নিয়ে যাওয়া হতো ওই অ্যাসাইলামে। সঙ্গে চলতো ইলেকট্রিক শক দেয়ার মতো মধ্যযুগীয় চিকিৎসারীতি।
এ ছাড়াও মস্তিষ্কের সম্মুখ ভাগে ( প্রিফন্টাল লোব) –এ লোবটমির মতো বর্বরোচিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক সময়েই স্কিৎজোফ্রেনিক রোগীদের হ্যালুসিনেশন বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হতো।
ওই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সে সময় অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। কেউ কেউ বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। যে সমস্ত রোগী অ্যারাডেলে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে ‘ভয়ঙ্কর’ তকমা পেয়েছিলেন জে ওয়ার্ড ।
জানা গেছে, ধূমপান করা নিয়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিরোধ বাঁধলে তিনি তাকে গুলি করে হত্যা করেন। গ্যারি ওয়েব নামে আরো এক রোগী প্রায় ৭০ বারের মতো নিজের দেহকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়।
এরই মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল ওই হাসপাতালের মহিলা বিভাগ। কথিত, নার্স কেরির আত্মা নাকি এখনো ওই অ্যাসাইলামের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায়। আরেক রোগী ওল্ড মার্গারেটের মৃত্যুর পর অনেকেই নাকি হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় তাকে দেখতে পেয়েছেন। কথিত আছে, ১৯২৩ সালে হাসপাতালের সুপার হাইড্রোজেন সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। তার পর থেকেই নাকি হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মচারী বিভিন্ন সময়ে তাকে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে দেখেছেন। যে ঘরে তিনি থাকতেন সেখান থেকেও নাকি গভীর রাত্রে শোনা গেছে ফিসফাস, কান্নার আওয়াজ।
১৯৯০ সালে ওই অ্যাসাইলাম বন্ধ হয়ে গেলে তা সাধারণের ‘গোস্ট ট্যুর’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ওই সময় হাসপাতাল পরিদর্শন কালে অনেক পর্যটক নানা ধরণের রহস্যজনক ঘটনার সম্মুখীন হন। সার্জারি রুমে গিয়ে অনেকেই মাথা ব্যথা, বমি ভাবের শিকার হয়েছেন। ছবি তোলার সময় নাকি কারো কারো ক্যামেরায় ধরা পড়েছে অশরীরী অবয়ব। কেউ আবার আবার সংজ্ঞাহীন হয়েও পড়েন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ওখানকার দেয়ালে কান পাতলে নাকি আজো শোনা যায় রোগীদের আর্ত চিৎকার, দেয়ালে দেখা যায় আঁচড়ের দাগ।
সত্যিই কি ওই জায়গায় লুকিয়ে রয়েছে কোনো অজানা রহস্য? তা নিয়ে প্যারানর্মাল বিশেষজ্ঞরা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ১৩০ বছর ধরে আবাসিকদের উপর ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অদ্ভূত ঘটনা, রোগীদের উপর নির্মম অত্যাচারের ইতিহাস অ্যারাডেল মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রকে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্যজনক জায়গার তকমা এনে দিয়েছে।