

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া ঘোষপাড়া এলাকার’সাড়া বাড়িতে স্প্রে ( চেতনানাশক) দিয়েছিল ডাকাতরা। বাড়ির সবাই বেহুঁশ হয়ে পড়েছিলাম। সেই সুযোগে ডাকাতরা ঘরে থাকা সব টাকা, সোনা-দানা নিয়ে গেছে। এখন সন্ধ্যা লাগলে চিন্তায় গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই সকাল-সকাল শুয়ে পড়ি। জানের মায়াতো সবারই আছে।’
চোখে মুখে হতাশা আর আতঙ্কের ছাপ রেখে কথা গুলো বলছিলেন লতিকা রাণী বিশ্বাস (৫৫)। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়া ঘোষপাড়া এলাকার বিমল ঘোষের স্ত্রী। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে তাঁদের বাড়িতে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে প্রায় এক লাখ নগদ টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।
লতিকা রাণীর ছেলে কাজল ঘোষ বলেন, ডাকাতদেও স্প্রের কারণে বাড়ির সকলেই অচেতন হয়েছিল। ঘটনার পরদিন কেউ হাসপাতালে কেউ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছে। এখনও সবার ঝিমধরা কাটেনি।
লতিকা রাণীর ভাষ্য, ৫ আগস্টের পর পুলিশের তেমন কোন তৎপরতা নেই। সেজন্য এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই দিনই চুরি-ডাকাতির মত ঘটনা ঘটছে। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি রাতে একই এলাকার বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম রিপনের বাড়িতে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল ৮-১০ জনের একদল ডাকাত। তাদের উপস্থিতি স্থানীয়রা টের পেলে তারা দ্রুত চলে যায়। রিপন কয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক।
সরেজমিন গেলে রিপনের ছেলে তানভির আহমেদ বলেন, জানালা খুলে ঘুমাচ্ছিলাম। সেসময় বাড়ির ভিতর থেকে জানালায় শব্দ হচ্ছিল। জানালার কাছে গিয়ে দেখার চেষ্টা করলে একজন ডাকাত বাইরে থেকে হাত চেপে ধরে। উঠানে আরো ৮-৯ জন ছিল। তাদের হাতে পিস্তল, চাইনিজ কুড়ালসহ দেশীয় অস্ত্র ছিল। তখন রাত দুইটা বাজে। ডাকাতরা প্রায় এক ঘণ্টা হাত চেপে ধরে রাখে। অনেক চেষ্টার পর হাত ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েকজনকে ফোন দিলে সবাই বাড়িতে আলো জ্বালায়। তারপরে ডাকাতরা গেট খুলে চলে যায়।
কয়া স্কুলপাড়া আব্দুল মজিদর স্ত্রী রাফেজা খাতুন বলেন, গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আমার বাড়ির দরজা ভেঙে অস্ত্রহাতে ৪-৫ জন ডাকাত ঢুকেছিল। তারা প্রথমে বড় ছেলেকে মারধর করে ভয়ভীতি দেখায়। পরে সবাইকে জিম্মি করে ৪৫ হাজার টাকা এবং সাত থেকে আট ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোন কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়, ৫ আগস্টের পরে পুলিশের তৎপরতা কমে গেছে। সেজন্য প্রায় প্রতিদিনই এলাকায় চুরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। সেজন্য নিজের জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে প্রতি রাতে ১৬ জন করে পাহারা দিচ্ছেন তারা। সবাইকে সতর্ক করতে পাহারার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ফেসবুকে।
কয়া বাজার এলাকার মো. আকাশ নামে একজন তার ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, কয়া গ্রামে ডাকাতের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণে গ্রামবাসী একত্রিত হয়েছে। প্রতিরাতে পাহাড়র মহড়া চলছে। নরসুন্দর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, প্রায় ১৫ বছর পরে ফের গ্রাম পাহারা চালু হয়েছে। শনিবার রাত ১০ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত পাহারা দিয়েছেন তিনি।
কয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক শরিফুল ইসলাম রিপন বলেন, ডাকাত ও চোরের উপদ্রব ঠেকাতে নিজেরাই রাত জেগে পাহাড়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।
কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.আলী হোসেন দাবি-করেন ইউনিয়নের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একদম ভেঙে পড়েছে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি।
তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলায়মান শেখ বলেন, মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ। খবর পাওয়া মাত্র ছুটে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের তৎপরতা আরো জোরদার করা হবে। অপরাধ নির্মূলে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।