

ফিচার ডেস্ক:

১) পাঠাগারের_নাম_কি ?
( সবার_জন্য_পড়া_উন্মক্ত_পাঠাগার )
– প্রতিষ্ঠাতাঃ-মোঃ শাহাদত হোসেন ৷৷
২) কোথায়_অবস্থিত ?
১)”সবার জন্য পড়া উন্মক্ত পাঠাগার”
স্থানঃ-ধুলাউড়ি পূর্ব পাড়া, ধুলাউড়ি, সাঁথিয়া, পাবনা ৷
৩) কিভাবে_পাঠাগার_প্রতিষ্টিত_হল ?
গ্রামের কৃষক পরিবার আমাদের । বাবা নিজেদের জমিতে কৃষি কাজ করে যা আয় হত..তা দিয়েই বাবা, মা, চার বোন এবং আমি ৷ আমাদের সাত জনের সংসার চলে।৷ আমি যখন ৫ম শ্রেণীর ছাত্র..তখন হঠাত করেই মা অ’সুস্থ্য হন ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ..তখন আমাদের ৫ম শ্রেণীর বৃত্তি পরিক্ষা চলছিল .১ম দিন পরিক্ষায় দিয়েছি..২য় দিন যখন পরিক্ষায় দিতে যাবো তখন দেখলাম বাড়ির ভিতরে চার থেকে পাঁচটি মাইকো’বাস ও একটি এম্রোবুলেন্চ ঢোকতেছে..এবং আমার কাকা আমায় ডাক’দিলেন..যে তারাতারি বাড়ি মধ্যে ডুকতে.. আমি যখন বাড়ির মধ্যে ঢোকলাম মা আমার কাছে পানি চাইলো..আমি পানি দিলাম ১ম,২য়,ও ৩য়’বার যখন পানি খাওয়ালাম তখনই মা আমাদের ছেড়ে চলে যায়..তখন পড়া লেখার পাশা-পাশি বাবার সাথে জমিতে কাজ শুরু করে ৷ এই ভাবে চলছে এক’দিন হঠাত করেই বাবা আবার ২য় বিবাহ করলেন..তখনও ভালোই চলছিলো..যখন আমি ৭ম শ্রেণীর ছাত্র তখন থেকে বাবা-ও সৎ মায়ের আচার-আচারণ কেমন যেন পরিবর্তন হতে শুরু করে..এবং যখন ৮ ম শ্রেণীতে উঠলাম তখন বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হলাম ৷৷ পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে প্রথম চাকরি শুরু করি বিকেএসপিতে সেখান আমিনুল ইসলাম বুলবুল স্যারের লেখা বই ক্রিকেট খেলা শিক্ষা বই পড়ার মাধ্যমে বই পড়ার চর্চা শুরু করি মাসিক থেকে কিছু অর্থ জমিয়ে বইয়ের পেছনে ব্যয় করি ৷ আর এভাবেই ধীরে ধীরে নিজের সংগ্রহে বই জমা হতে থাকে ৷ ‘করোনার সময় শুরুর দিকে কর্ম স্থল বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামের চলে আসি..ও গ্রামে সকল মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ও সকল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চিন্তা করতে থাকি কীভাবে সবাইকে আবারও বইমুখী করা যায়। একদিন মনে হলো আমার কাছে যত বই আছে, সেগুলো দিয়ে একটি পাঠাগার শুরু করা সম্ভব। সবার সঙ্গে কথা বললাম, মোঃমোনাইম খাঁন কাকা তাতে সায়ও দিয়েছেন ৷৷ তারপর পাড়ার সবাই’কে নিয়ে বসে পাঠাগারর নাম ঠিক করা হয় ৷(সবার জন্য পড়া উন্মক্ত পাঠাগার)৷ তারপর আমার পরিচিত অনেকে বই দিয়েছে ১৭৩ পিস এবং আমার কাছে ছিল তখন ৫০০ পিস ৷৷ এভাবেই পথচলা শুরু ও এখনো চলছে…ইনশাআল্লাহ ৷
৪) কেন_পাঠাগার_গড়ার_পরিকল্পনা ?
(পাবনা জেলা শহর থেকে ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাঁথিয়া উপজেলার এবং উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে ধুলাউড়ি ইউনিয়নের ধুলাউড়ি গ্রাম। সেই গ্রামে বাড়ি শাহাদত হোসেনের ৷৷ 2য় চাকরি নারাঃ মেগনার ঘাট মেঘনা গ্রুপে জয়েন্ট করি ২০১০ সালে ইনিঃ মোঃ আওসান হাবিব স্যারের মাধ্যমে ২য় বই বেসিক ইলেকটিক্যাল ইন্টারভিউ নজেল বই পড়ার মাধ্যমে কর্ম জীবনে যেমন সফল্য আসে..বই পড়ার প্রতি আরাও বেশি আসক্তি হয়ে পড়ি..চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ি..মোঃ শাহাদত হোসেন ৷ এবিএফ ফাউন্ডেশনের কেন্দীয় প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি এবং প্রতিষ্ঠাতাঃ- বয়লার অপারেটর গ্রূপ ৷৷ যার মাধ্যমে প্রতি মাসেই দুই চার পাঁট জন্যর চাকরির ব্যবস্থা করে থাকি ৷ যাই’হোক
পাঠাগার তৈরির ইচ্ছাটা তাঁর ছোটবেলা থেকেই। চাকরি সুবাধে হাবিব সাহেবের উপহার দেওয়া বই “বেসিক ইলেকটিক্যাল ইন্টারভিউ নজেল” পড়েই জানতে পারি. পাঠ্যবইয়ের বাইরে যে জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার রয়েছে, তা সেদিনই আমার সামনে উন্মোচিত হয়। আমি ‘অফিস ছুটির পর প্রায় দিনই বাসায় গিয়ে বই পড়তাম। এভাবেই অভ্যাস গড়ে ওঠে। কিন্তু গ্রামে ছেলেমেয়েদের জন্য বই পড়ার তেমন কোনো সুযোগ–সুবিধা নেই। তখন থেকেই মনে হতো গ্রামে একটি পাঠাগার করতে পারলে সবাই পড়ার সুযোগ পাবে। করোনার সময় শুরুর দিকে কর্ম স্থল বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামের চলে আসি..ও গ্রামে সকল মানুষের ও ছাত্র-ছাত্রীদের ও সকল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চিন্তা করতে থাকি কীভাবে সবাইকে আবারও বইমুখী করা যায়। একদিন মনে হলো আমার কাছে ৫০০ বই আছে ৷ এই বই গুলি দিয়েই পাঠাগার তৈরি করা সম্ভাব ৷৷ তার গ্রামের মানুষের সহযোগীতায় পথ চলা শুরু ৷৷
৫) পাঠাগারে_বর্তমানে_বই_সংখ্যা_কত ? (১৮০০+) উপরে..ইনশাআল্লাহ
৬) পাঠাগারের_বর্তমান_কার্য্যক্রম_
(পাঠাগারর দশ সদস্যর একটি কমিটি রয়েছে ও দূই জন লাইব্রারিয়ান মিলে পাঠাগারের বিভিন্য শাখা গুলার বই আদান-প্রধান ও লাইব্রারিতে বই গুরার সংগ্রহণ করে আসছে ৷৷
৭) ভবিষ্য_পরিকল্পনা_কি ?
(জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ, উন্নত জাতি ও আলোকিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের পাঠাগার অঙ্গীকার বদ্ধা ৷৷ সেই দেশ কখনো নিজেকে সভ্য বলে প্রতীয়মান করতে পারবে’না ৷ যতক্ষন তার বেশির ভাগ অর্থ চুইংগামের পরিবর্তে বই কেনার জন্য ব্যায় হবে– ভলতেয়ার
৮)পাঠাগারর_উদ্যোগে_আর_কি_কি_সা
সবার_জন্য_পড়া_উন্মক্ত_পাঠাগার পক্ষ থেকে ০৫ই-ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস-২০২৩ এর স্লোগান স্মার্ট গ্রন্থাগার,স্মার্ট বাংলাদেশ উপলক্ষে ডাইরি,খাতা,কলম ও ইসলামিক বই বিতরণ করা হয়েছে..ইনশাআল্লাহ ৷৷ এছাড়া ২১ই- ফেব্রুয়ারি ও ২৬ শে-মার্চ ও বিভিন্য দিবসে অনুষ্টান করার চেষ্টা করি ও দুই ঈদে অসহায় মানুষের মাঝে ঈদ সামগ্র বিতরণ করি ও নিরর্বে_বই_পড়া_কর্মসূচি পালন সহও পাঠচক্ররের মাধ্যমে পাঠকদের মাঝে সেরা অবৃত্তি, সেরা ছড়াকার,পাঠাগারে সেরা উপস্থিত সহও পাঠাক ভাই বোনদের মাঝে পুরুস্কার দেওয়া হয়..ইত্যাদি
৯) পাঠাগার_কমিটি_বা_উদ্যোক্তরা ?
(দশ সদস্যের একটি কমিটি ও ৬০ থেকে ৭০ জন পাঠক আছে..একটি শাখায় ৷ কমিটি অথবা পাঠক ভাইদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়’না.পাঠাগারের বই কেনা ও বুক-সেল্ফ কেনা ও বিভিন্য অনুষ্ঠানে.সমূপ্ন টাকা পয়সা আমার নিজ অর্থ খরচ করি যখন খুব বেশি প্রয়োজন হয় তখন শিক্ষাঅনুরাগী মানুষের সহযোগীতা নেই ৷৷ ইনশাআল্লাহ
১০) স্থানীয়_গন্যমান্যদ_সহযোগীতা_
(পাবনা জেলা শহর থেকে ৪০ কীলোমিটার দুরে ও উপজেলা শহর থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত আমাদের গ্রাম ধুলাউড়ি..হওয়ার কারণে কোন গনমাধ্যম আসে’না..তবে হ্যাঁ ইতিপুর্বে গ্রামে স্থানীয় গন্য মান্যরা পাঠাগার নিয়ে আলোচনা করছে ও আলোচনা চলছে..তবে এখনো কারু সহযোগীতা তেমন পাওয়া যায়’নাই কিন্ত বেশ কিছু সাংবাদিক ভিডিও নিউজ সহও পেঁপার, প্রত্রিকা নিউজ করেছে..এই তো কিছু দিন আগেই ২৭-৭-২৪ সমকাল..নিভুত্ত_পল্লিতে_জ্ঞানে
১১) নিবন্ধন আছে কি না ?
( পাবনা জেলা গণগ্রন্থগর থেকে আমাকে এক’ভাই নিবন্ধন করার জন্য যেতে বলছে বহুবার ৷ কিন্ত আমি পাঠাগার শুরুর প্রথম থেকেই মনে মনে চিন্তা করে রেখেছি যে ১৫০০ শত বই না হওয়া পর্যন্ত রেজিস্টেশন করবো না.. ও রেজিস্টেশন করতে সরকারের ১৬টি নিয়ম-কানুন রয়েছে..তার সকল ধাপ পুরুন করে তারপর যাবো রেজিস্টিশন করতে..তবে হ্যাঁ..আমাদের পাঠাগার ১৪ ধাপ ইতিপুর্বে পুরুন হয়ে রয়েছে…ইনশাআল্লাহ
১২) কোন অনুদান এসেছে কি না ?
( না এখনো পর্যন্ত কোন অনুদান আসে’নাই.. তবে হ্যাঁ বেশ কিছু লেখক’ কবি ও অলিফ বয়লার কোম্পানি লিঃ থেকে মোট উপহার পাওয়া বই সংখ্যা হলঃ- ৩৮৩ পিস বই )
– প্রমথ চৌধুরী ‘বইপড়া’ প্রবন্ধে বলেছিলেন “বই গড়া শখটা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হলেও আমি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চাইনে। প্রথমত্র, সে পরামর্শ কেউ গ্রাহ্য করবেন না, কেননা আমরা জাত হিসেবে
• শৌখিন নই। দ্বিতীয়ত, অনেকে তা কুপরামর্শ মনে করবে। তিনি আরও বলেছিলেন, রাগে-শোকে, দুঃখ-দারিদ্র্যের দেশে সুন্দর জীবন ধারণ করাই যখন হয়েছে প্রধান সমস্যা, তখন সেই জীবনকেই সুন্দর করা, মহৎ করার প্রস্তাব অনেকের কাছে নিরর্থক এবং নির্মমণ্ড ঠেকবে।’ বইপড়া এবং পাঠাগার নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করার সময় প্রমথ চৌধুরীর কথাগুলোর বাস্তবতা আয়নার মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ পাঠমুখী নয়, তারা এ সৌখিন অভ্যাসটাকে ধারণ করতে পারেনি। ফলে বছর পরম্পরায় আমাদের দেশের নাগরিকদের বিরাট একটি অংশ বেড়ে উঠেছে গড়া-বিমুখ প্রজন্ম হয়ে। আমি শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাঠাগার কার্যক্রম পরিচালনা করি। বইপাঠ এবং পাঠাগার কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরাই আমার মূল চালিকাশক্তি। একজন শিক্ষার্থীকে বই এবং পাঠাগারমুখী করে তোলা আমার মূল উদ্দেশ্য। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতায় যে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছি, তার সারমর্ম হলো: য্যদেরকে আমি নাই এবং পাঠাগারমুখী করেছি, তাদের অধিকাংশ আগে কখনো পাঠ্যবই ছাড়া ভিন্ন কোনো বইয়ের সান্নিধ্য পায়নি পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অনান্য বই যে কতো গুরুত্বপূর্ণ, সে সম্পর্কেও তারা আগে কখনো ধারণা পায়নি। তাদের পরিবারের অভিভাবকরা তাদেরকে শুধু পাঠ্যবই পড়ার প্রতি তাগাদা দিয়েছেন একটি ভালো রেজাল্ট করার আশায়। তারা যে প্রান্তিক জনপদে বসবাস করেন, সেখানে পাঠাবই ছাড়া অন্যকোনো বইয়ের সান্নিধ্য পাওয়া তাদের জন্য অ’লক্ষীক স্বপ্নের মতো। তাদের কাছে যখন একগুচ্ছ বই নিয়ে যাই, তারা বইগুলো পেয়ে খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। খুশির বার্তা হলো, প্রান্তিক জনগদের তরুনদের হাতে বই তুলে দেওয়ার পর তাদের অধিকাংশ বইপাঠে মনোযোগী হয়ে উঠছে। আবার বিপরীতে যে বাস্তবতার সম্মুখীন হলাম তা হলো অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসের পাঠ্যবই ছাড়া অন্যকোনো বই পড়তে খুব বেশি আগ্রহি নয়। তারা অবসর সময়টি হেলায়-হেলায় কাটাতে চায়। তারা শুধুমাত্র পাশের আশায় পাঠ্যবইগুলো পড়ে। এসব শিক্ষার্থীদের কাছে যখন বই নিয়ে যাই, বইপাঠে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করি, তখন তাদের অনাগ্রহ দেখে মনে হয়, যেনো ‘অঙ্গের দেশে আয়না বিক্রি করতে এসেছি” তখন প্রমথ চৌধুরীর বইপড়া প্রবন্ধের লাইনগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তিনি বলেছিলেন ‘বইগড়াকে অনেকেকুপরামর্শ মনে করেন’ দুই, পাঠাভ্যাস ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এটি অনেক সময় অন্যের দেখা থেকে আগ্রহ জন্মায়। যেমন- একটি পরিবারের বাবা-মা যদি নিয়মিত বই পড়েন, তাহলে সেই পরিবারের সন্তানেরাও পাঠমুখী হয়ে ওঠে। কারণ পরিবারের বাবা মায়ের দেখা নিত্য কাজটি সন্তানের জন্য, একটি অনুকরণীয় অভ্যাস হয়ে ওঠে। প্রতিদিন বাবা মা সন্তানকে সাথে নিয়ে যদি বইপাঠে কিছুক্ষন সময় দেন, তাহলে এই চর্চাবোধ থেকে একসময় সন্তানটি ধীরে ধীরে বইমুখী হয়ে ওঠবে। এটি শিশুকাল থেকে সন্তানকে বইমুখী করার পারিবারিক অনুশীলনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। প্রতিটি পরিবার থেকে এমন অনুশীলনের সূচনা করতে পারলে প্রতিটি পরিবার থেকে সৃষ্টি হবে একেকজন পাঠক। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, বাড়িতে কিংবা পার্কে অবসর সময় কাটানোর জন্য আমরা সন্তান কিংবা পরিবারের অন্যকোনো সদস্যের হাতে একটি মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছি এবং এই মোবাইল ফোনে আমরা এতই আসক্ত হয়ে পড়েছি যে, যেনো এটি ছাড়া আমাদের একটি সেকেন্ডও চলেনা। একটি মোবাইল ফোন যেন সময় কাটানোর একটি অপরিহার্য মাধ্যম। আমাদের জীবনে অপরিহার্য মাধ্যম কিন্তু
একটি মোবাইল ফোন নয়। আমাদের জীবনের অপরিহার্য মাধ্যম হলো বই পাঠ চক্র। এখানেই আমাদের ব্যর্থতা, আমরা সন্তানকে মোবাইল ফোনের পরিবর্তে একটি বই হাতে তুলে দিতে পারিনি। শিশুকাল থেকে তাদেরকে বইমুখী করে তুলতে পারিনি। এটা না হওয়ার একটিমাত্র কারন, তাহলো: পরিবারের সদস্য এবং বাবা মায়েরা বই পাঠমুখী না হওয়া, বই পাঠের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া। একটি পরিবারের বাবা মায়েরা সন্তানের জন্য যদি অনুকরণীয় হয়ে উঠতে না পারেন, তাহলে সে পরিবারের সন্তানেরাও সহসা অনুকরণীয় হয়ে গড়ে ওঠে না। বাস্তবতা হলো, সন্তানকে বইমুখী করার আগে বাবা ও মায়ের মাঝেও বইমুখী হতে হবে। তাহলে তাদের সন্তানেরাও একসময় বইমুখী হবে।
আমি “বিশ্ব’সাহিত্য কেন্দ” নামের বাংলাদেশে একটি গ্রুপের সদস্য। এ গ্রুপের সদস্যরা সবাই বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। তারা বইপাঠ নিয়ে নিজ নিজ জায়গা থেকে বিভিন্ন সময় পোস্ট করেন। তাদের পোস্টগুলো দেখে মানে হয়, তাদের গাড়িগুলো যেনো একেকটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। তারা বাংলাদেশের সকল জেলা উপজেলা শহর গুলাতে ছোটো-বড়ো সবাইকে নিয়ে একসাথে বই পড়ানোর কায্যকম করে আসছে
বই পড়েন, গল্প করেন, আড্ডায় মেতে ওঠেন। তাদের ‘গাড়ির মধ্যেই রিডিং রুম’ এ গুলো একেকটি গাড়ি’বাড়িক পাঠাগারের মতো। সেখানে তারা ছোটো-বড়ো সকই মিলে বই পড়তে পারেন৷ তাদের পরিবারে বড়োদের বইপড়া দেখে ছোটোরাও বইমুখী হয়ে ওঠে। তারা শিশুকাল থেকে সন্তানদেরকে বইমুখী করে তোলেন। এটি তাদের সন্তানের জন্য পারিবারিক শিক্ষার অনুশীলনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
প্রতিটি বাবা-মা তার সন্তানের সুন্দর-ভবিষৎ কামনা করেন। তাদের স্বপ্ন থাকে: সন্তানটি যেনো মানুষের মতো মানুষ হয়, তার ভবিষ্যৎ জীবন যেনো ফুলের মতো সুন্দর হয়। কোনো বাবা মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করে না। কিন্তু প্রত্যেক বাবা-মায়ের সে স্বপ্ন পূরণ হয় না। তাদের সে প্রত্যাশা কখনো কখনো ‘আশার গুড়ে বালি’ হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানটি যখন কোনো এক সময় বিপদগামী হয়ে
ওঠে, তখনই বাবা মায়ের সব স্বপ্ন ধূলোয় মিশে যায়। সন্তানকে আদর্শবান সন্ধান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কতগুলো পালনীয় এবং অভ্যাসগত বিষয় আছে। তৎমধ্যে নৈতিক আদর্শ মেনে চলা, ভালো মানুষের সাথে বেড়ে ওঠা এবং ভালো বইপড়া আবশ্যক। এখন সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করলে অবশ্যই প্রতিটি বাবা মায়ের দায়িত্ব হলো, সবার আগে সন্তানকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
পবিত্র কুরআনের প্রথম শব্দ ‘ইকুরা’ জিবরীল আলাইহিসসালাম আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলে আরাবির নিকট সর্বপ্রথম এই শব্দ সন্তুলিত আয়াতটি নিয়ে ‘ধারে হেরা’য় আগমন করেন। ‘ইকুরা’ আরবি শব্দঃ এর অর্থঃ পড়ুন। পুরো আয়াত “ইকুরা বিসমি রাক্সিকাল্লাজি খালাক” অনুবাদ হচ্ছে। পড়ুন, আপনার প্রভুর নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। এই আয়াত থেকে অনুধাবন করা যায়। পড়া কতো যে গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই আমাদের বুঝতে হবে পাঠের কোনো বিকল্প নেই। ‘ইকরা’ শব্দ দিয়ে শুরু করা দ্বারা
সহজেই প্রতিয়মান হয়। মানবজীবনে পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম।আমাদের দেশে এখন নৈতিক অবক্ষয়ের জয়জয়কার। চারদিকে শুধু নৈতিক অবক্ষয়ের পদধ্বনি।
পাড়ায় মহল্লায়, নগরে একই অবস্থা। সবার মুখে একই সুর, নৈতিকতা হারিয়ে গেছে। বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম চরম নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার। এর একমাত্র কারণ, তা হলো। তারা মানবিক চর্চাকেষ থেকে বঞ্চিত। নৈতিক পাঠ থেকে বঞ্চিত। তারা ভালো মননশীল মানুষের সাথে গড়ে ওঠতে পারেনি। তারা অবক্ষয়কে জীবনের উপভোগ মনে করেছে। যার দরুন। অবক্ষয়ের কালো মেঘ খুব কম সময়ে তাদের ভবিষ্যতের আলোকিত জীবনকে অন্ধকারের কালো চাদরে ঢেকে দিচ্ছে। কিন্তু একটি ভালো বই মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ধাবিত করে। আলোর পথে আসতে আহ্বান করে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো আমরা নতুন প্রজ্জম’কে সে পথে আহ্বান করিনি। এখানেই আমাদের ব্যর্থতা।
পাঠাগার হলো মানবিক, নৈতিক ও বোধসম্পন্ন মানুষ তৈরির কারখানা। পৃথিবীর বিখ্যাত মনীষীরা পাঠাগারকে জীবন-জয়ের মাধ্যম হিসেবে বেচে নিয়েছিলেন। পাঠাগারের সান্নিধ্যে আসার কারণে তারা মনীষী হতে পেরেছেন, সভা হয়ে জীবন ধারণ করতে পেরেছেন। ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন। আমাদের অনুধাবন করা উচিৎ, যে যতো বেশি পড়ে, সে ততোবেশি সভ্য হয়ে বেড়ে ওঠো। পৃথিবীর বিখ্যাত মনীযারা তার বিরল উদাহরণ।
এখন পরিবার, সমাজ এবং প্রতিষ্ঠান থেকে সবার আগে পাঠ কার্যক্রমের সূচনা করতে হবে। পরিবারের বাবা মায়েরা নিজেরা বই পাঠমুখী হয়ে আপন সন্তানদেরকে পাঠমুখী করে গড়ে তুলতে পারে। এটা পারিবারিক অনুপ্রেরণা। একটি সমাজে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের মানুষকে বইপাঠে উদ্বুদ্ধ করে তোলা যায়। একটি পাঠামার একটি জনপদের আলোকবর্তিকা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লাইব্রেরি সম্পর্কে বলেছিলেন। “অতলস্পর্শ কালসমূদ্রের উপর কেবল এক-একখানি বই দিয়া সংকো বাঁধিয়া দিবে। লাইব্রেরির মধ্যে আমরা সহস্র পথের চৌমাথার উপরে দাঁড়াইয়া আছি। কোনো পথ অনন্ত সমুদ্রে গিয়াছে, কোনো পথ অনন্ত শিখরে উঠিয়াছে, কোনো পথ মানবহৃদয়ের অতলস্পর্শে নামিয়াছে। যে যে- দিকে ধাবমান হও, কোষাও বাধা পাইবে না।”
সমাজকে আলোকিত করার মানসে, সমাজের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আমরা উঠতি বয়সী শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদেরকে বইমুখী করে তোলার আন্দোলনকে বেগবান করতে পারি। তাদেরকে বইমুখী করে গড়ে তুলতে পারি। বইয়ের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি করে দিতে পারি। সবচেয়ে সুন্দর উপমা হতে পারে, যদি নিজের পরিবার থেকে বইপড়া আন্দোলনের সূচনা করতে পারি, তাহলে আমরা সফনল হব। একদিন সে আন্দোলন পাড়া-মহল্লা ছড়িয়ে সমাজের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। শিক্ষা অনুরাগী সকল মানুষের কাছে পাঠাগারটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আপনাদের সবার কাছে উদার্থ আহ্বান রইল।
সবার জন্য পড়া উন্মুক্ত পাঠাগার
স্থান ধুলাউড়ি পূর্বপাড়া ধুলাউড়ি সাঁথিয়া পাবনা
বই উপহার পাঠাতে..
যোগাযোগ নাম্বার ০১৭৪৮ ৫৬৩৩৪২