শিশুদের ‘টোপ’ বানিয়ে কুমির শিকার !

অনলাইন ডেস্ক : ছোট শিশুকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে বাঘ শিকার করেছিলেন রাজাবাহাদুর। শিকার করা বাঘের চামড়া দিয়ে ঝকঝকে জুতাও বানিয়েছিলেন। এমন কিছু তথ্য আমরা নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টোপ’ গল্প থেকে জানতে পারি। কিন্তু বাস্তবেও যে এমন কিছু থাকতে পারে আমরা হয়তো তা ভাবতেও পারিনি। তবে এটা বাঘের টোপ নয় কুমিরের টোপ!

একসময় কৃষ্ণাঙ্গদের ক্রীতদাস বানিয়ে রাখত আমেরিকার মানুষ। নিজেদের বিলাসিতার উপাদান করে তোলা হতো তাদের। তখনই কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের টোপ হিসাবে ব্যবহার করতেন তারা। ছোট শিশুগুলোকে টোপ করে কুমির শিকার করতেন। এ প্রথার প্রচলন ছিল আমেরিকার লুইজিয়ানা এবং ফ্লোরিডায়। ১৮০০-১৯০০ সালে কুমিরের চামড়ার ব্যাপক চাহিদা ছিল। কুমিরের চামড়া দিয়ে জুতা, জ্যাকেট, বেল্ট এবং অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করা হতো।

কিন্তু কুমির শিকার করাটা সহজ ছিল না। অন্ধকারে পানিতে নেমে কুমির শিকার করতে গিয়ে প্রায়শই প্রাণহানি ঘটত শ্বেতাঙ্গদের। বা কুমিরের শিকার হয়ে হাত-পা খোয়াতে হতো শিকারিদের। তাই কুমির শিকারের সহজ পন্থা টোপ দিয়ে কুমিরকেই ডাঙায় তোলা।

তারপর আড়াল থেকে গুলি করে কুমিরকে ঘায়েল করা। আর এ টোপ হিসেবেই ব্যবহার করা হতো কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের। একে বলা হয় ‘অ্যালিগেটর বেট’ বা ‘গেটর বেট’।

টোপ হিসেবে ব্যবহার করে কুমির শিকারের উপায় অবশ্য আরো ছিল। তারা চাইলেই হাঁস, মুরগি, খরগোশ এমনকি ছাগলও কাজে লাগাতে পারতেন, কিন্তু এগুলো ছিল দামি। আর কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের কোনো মূল্য তাদের সমাজে ছিল না। সে কারণে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুগুলোকেই বেছে নিয়েছিলেন তারা।

১৯২৩ সালে টাইম ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল, কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের অগভীর পানিতে খেলা করতে বলা হতো বা জলাশয়ের ধারে ক্ষতবিক্ষত করে বসিয়ে রাখা হতো। যাতে রক্তের গন্ধে কুমির তার শিকার সহজেই খুঁজে নেয়। আর দূরে ঝোপে লুকিয়ে থাকতেন শিকারিরা।
কুমির শিশুগুলোকে আক্রমণ করলেই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়া হতো তার শরীর। কখনও আবার অপেক্ষা করা হতো শিকার খাওয়ার। কারণ খাওয়ার সময় কুমিরের মনোযোগ শিকারের ওপরই থাকে, তাতে মারতেও সুবিধা হতো। টাইম ম্যাগাজিনে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছিল, এ খবর ভুয়া।

তবে একেবারেই যে এ খবর উড়িয়ে দেয়া যায় না, তার প্রমাণও বারে বারে মিলেছে। যেমন জিম ক্রো মিউজিয়ামে এমন একটি দুর্লভ ছবি পাওয়া গিয়েছিল। ছবিটি ফ্লোরিডারই কোনো এক বাসিন্দার তোলা ছিল।

শোনা যায়, তিনি নাকি নিজের বাড়ির দেয়ালে ওই ছবিটা টাঙিয়ে রেখেছিলেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ৯ কৃষ্ণাঙ্গ শিশু নগ্ন অবস্থায় বসে আছে। আর তাদের নিচে লেখা ‘অ্যালিগেটর বেট’।

তেমন আবার এরও আগে ১৯০৮ সালে ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল নিউ ইয়র্ক চিড়িয়াখানার ঘটনা। তাতে লেখা হয়েছিল, ওই চিড়িয়াখানার এক কর্মী দুই কৃষ্ণাঙ্গ শিশুকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করেন। কারণ চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা লোকেরা যাতে কুমির দেখতে পান তাই কুমিরগুলোকে শীতকালীন ট্যাঙ্ক থেকে অন্য ট্যাঙ্কে সরানোর দরকার পড়েছিল।

সহজে কুমিরগুলোতে অন্য ট্যাঙ্কে সরানোর উপায় নাকি ছিল কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের টোপ হিসাবে ব্যবহার করা। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য পরে সাফাই দিয়েছিলেন, শিশুগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। তার ওপর তাদের বিজ্ঞাপন দেখে ওই দুই শিশুর মা-ই নাকি তাদের কাছে শিশুগুলোকে বিক্রি করেছিলেন। বিনিময়ে ২ ডলার নিয়েছিলেন তারা।

কিন্তু চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সাফাই একেবারেই সন্তোষজনক ছিল না। কারণ সে সময়ে আফ্রিকান নারীরা পড়াশোনা জানতেন না। লিখতে-পড়তে পারতেন না তারা। তাহলে কীভাবে বিজ্ঞাপনের ভাষা পড়ে ফেললেন? প্রশ্ন উঠেছিল। যার কোনো জবাব দেননি কর্তৃপক্ষ।

সূত্র : দি ফেরিস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *