

অনলাইন ডেস্ক :
গণঅভ্যুত্থানের পর গত সাড়ে চার মাসে দেশে ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ সকল ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এছাড়া ৯টি নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ, ৬৪টি উপাসনালয়ে হামলা, ১৫টি কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, ৩৮টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং ২৫টি জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।
লিখিত বক্তব্যে মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, গত ২১ আগষ্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ওই সকল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। চলমান সহিংসতাকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, ঐক্য পরিষদ মনে করে গত ৪ আগস্ট থেকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে তাদের বাড়িঘর, উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যাসহ যাবতীয় অপরাধ চালানো হচ্ছে।
সংখ্যালঘুদের প্রতি এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ার অংশ বলে মন্তব্য করেন ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা সম্পর্কে ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান একসাথে যুদ্ধ করেছে। এখন ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বৈষম্য অস্বীকারের সমতুল্য। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তি, দলিত ও ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর জন্যে রাষ্ট্রের বিশেষ উদ্যোগ এবং সংখ্যালঘুদের ৮ দফা দাবির বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তারা।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের চলমান বৈষম্যবিরোধী মানবাধিকার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহায়তার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি, দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা সমতল ও পাহাড়ের নানা গোত্রের আদিবাসী জনগোষ্ঠী, চা-শ্রমিক, হরিজন, ঋষি, রাজবংশী সম্প্রদায়ের জন্যে আলাদা কোন কমিশন গঠন করা হয়নি।
আমরা মনে করি, দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার জন্যে রাষ্ট্র ও সরকারের বিশেষ উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন এবং তা সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।