ইবির দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাসের সিট ধরা নিয়ে মারামারি

ইবি প্রতিনিধি :

 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীবাহী বাসের সিট ধরাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় মারামারিতে জড়িয়েছে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে উভয় বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

 

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের সামনে আইন ও আল-ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কুষ্টিয়া শহর থেকে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে আসা শিক্ষার্থীবাহী বাস ‘সানন্দা’য় ‘জ্যাকেট’ দিয়ে দুইটি সিট ধরাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের তিন শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে থাকা অন্যদের জন্য সিট ধরে। পরে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমন অভ্র বাসে উঠে তাদের জ্যাকেট সরিয়ে ওই সিটে বসে। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এসময় সুমনের পক্ষে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসান। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আল-ফিকহ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবকে ধাক্কা দেয় আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমন অভ্র। এসময় রাকিবের সাথে সুমনের হাতাহাতিতে সুমনের মুখে আঘাত লাগে। তবে সুমনের দাবি এসময় তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মেরেছে রাকিব এবং শার্ট ছিঁড়ে দিয়েছে। তবে রাকিবের দাবি, সুমন তার শার্টের কলার ধরলে রাকিব তাকে ধাক্কা দেয়। শার্ট ছেড়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।

 

এসময় সুমন মুঠোফোনে প্রক্টরকে বিষয়টি জানায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসটি ক্যাম্পাসে পৌঁছালে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে উপস্থিত হয়। এদিকে সুমন বিষয়টি তার বন্ধু ও জুনিয়রদের জানালে আইন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী প্রধান ফটকে এসে গাড়িটি আটকায়। এসময় তারা অভিযুক্ত রাকিবকে নিচে নামাতে বলেন। এসময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে বলে জানান বাসের চালক। পরে এসময় অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হলে প্রক্টরিয়াল বডি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক ও আল ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের থামানোর চেষ্টা করে। তারা ব্যর্থ হলে রাত ১০টার দিকে আইন ও আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষকরা আসলে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রক্টরের কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেন প্রক্টর।

 

আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে প্রক্টর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানান। এসময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বললে অনুষদ ভবনের সামনে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা আরম্ভ হয়। এক পর্যায়ে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানকে ধাক্কা দিলে ডায়না চত্বরে উভয় বিভাগের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়। এসময় শিক্ষার্থীদের থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আল হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও আহত হন। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সংঘর্ষের সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের টেন্টের পেছনে কিছু বাঁশের লাঠিসোঁটা জড়ো করে রাখে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

 

এদিকে প্রক্টরসহ শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

 

রাত ১১টার দিকে আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, দুই বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *