অবিলম্বে ‘গাজাযুদ্ধ’ বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলিদের গণস্বাক্ষর

অনলাইন ডেস্ক :

 

এবার অবিলম্বে গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে উঠৈছে।

ইসরায়েলের সামরিক, একাডেমিক ও চিকিৎসা পেশার হাজার হাজার মানুষ এই যুদ্ধবিরোধী আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করছেন।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,‘রিস্টার্ট ইসরায়েল’ ওয়েবসাইট অনুসারে, ইসরায়েলে এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং বন্দী বিনিময়ের দাবিতে ৪৩টি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

‘রিস্টার্ট ইসরায়েল’ প্ল্যাটফর্মটি অনলাইনে ইসরায়েলিদের পিটিশন পর্যালোচনা এবং স্বাক্ষর করার সুযোগ দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার ৫২২ জন, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং অবিলম্বে যুদ্ধ সমাপ্তির আহ্বান জানিয়ে পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

পিটিশনগুলোর মধ্যে ১৬টিতে সামরিক বাহিনীর ১০ হাজারেও বেশি সদস্য স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে একাধিক ব্রিগেড, অভিজাত ইউনিট এবং গোয়েন্দা শাখার অভিজ্ঞ, রিজার্ভিস্ট ও সৈনিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বাকি ২৭টি পিটিশন এবং চিঠিতে শিক্ষাবিদ, লেখক, কবি, শিল্পী, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য পেশাদারসহ বেসামরিক পেশাদাররা স্বাক্ষর করেছেন।

স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক, সাবেক চিফ অব স্টাফ ড্যান হালুৎজ, চারজন সাবেক নৌ কমান্ডার- আমি আয়ালন, ইয়েদিদিয়া ইয়ারি, অ্যালেক্স তাল ও দুদু বেন-বেশত, ফ্লোটিলা ১৩ ইউনিটের সাবেক তিনজন কমান্ডার- রান গ্যালিঙ্কা, উজি লিভান্ট ও তজভিকা এরেজ এবং দু’জন সাবেক আর্টিলারি কমান্ডার আভ্রাহাম বার ডেভিড ও ডোরন কাদমিয়েল।

এছাড়া, আমরাম মিৎজনা, আভি মিজরাহি, আমোস মালকা, আমনন রেশেফ, মোশে সুকেনিক, নিমরোদ শেফার এবং ইলান বিরান-এর মতো আরো অনেক ঊর্ধ্বতন সামরিক ব্যক্তিত্ব পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

পিটিশনগুলোতে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পিটিশনে স্বাক্ষরকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অবাধ্যতার অভিযোগ এনে তাদের বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলো ২০২২ সালের শেষের দিকে ক্ষমতা গ্রহণকারী তার জোট সরকারকে পতনের প্রচেষ্টায় সমর্থন দিচ্ছে।

তিনি পিটিশনে স্বাক্ষরকারীদের ‘একটি ছোট, কোলাহলপূর্ণ, নৈরাজ্যবাদী এবং বিচ্ছিন্ন পেনশনভোগী দল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, কেউ অবাধ্যতাকে উস্কে দিলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।

ইসরায়েলের তথ্যানুযায়ী, গাজায় এখনও ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ২৪ জন জীবিত। চলতি বছরের মার্চ মাসে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তবে এই শর্তে ইসরায়েলের গাজা থেকে পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু হামাস যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী মেনে চললেও নেতানিয়াহু তার অতি-ডানপন্থি জোটের চাপে দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর ফলে জানুয়ারি মাসে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ভেস্তে গেছে। এতে করে অনেক ইসরায়েলি এমনকি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। 

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৫১ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

গাজায় তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও রয়েছে। সূত্র: আনাদো এজেন্সি 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *