যমুনার সামনে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সড়কে চলছে না যান

ডিপি ডেস্ক :

 

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে ছাত্র-জনতা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো এই কমসূচি অব্যাহত রয়েছে। সেখানে যোগ দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্য নেতাকর্মীরা। যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরাও।

এ অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে যমুনার সামনে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও এপিবিনের সদস্যরা। 

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে এ কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগেই যমুনার সামনে উপস্থিত হন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল নিয়ে সেখানে জড়ো হতে শুরু করে আন্দোলনকারীরা।

পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যমুনার সামনে অতিরিক্ত পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এ সময় যমুনামুখী সব সড়ক বন্ধ করে রাখে পুলিশ। কাকরাইল মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, মিন্টু রোডের মোড় থেকেই ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে।

তবে ছোট ছোট মিছিলগুলোকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। কাউকেই রিকশা, মোটরসাইকেল বা গাড়ি ব্যারিকেডের ভিতরে নিতে দেওয়া হচ্ছে না।

জানা গেছে  রাত ১০টা থেকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এর আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় এ কর্মসূচির ডাক দিয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি নিজের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দেন। সেখানে রাত ১০টা থেকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করার কথা বলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তিনি লিখেছেন, ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সাথে আমরা নাই।’

এর আগে বুধবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশত্যাগের পর থেকেই সোচ্চার হয়েছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্ল্যাটফরম।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় একটি হত্যার ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর থানার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আব্দুল হামিদকেও আসামি করা হয়েছে।

তিনি দেশত্যাগ করার পর বৃহস্পতিবার ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে।

পাশাপাশি শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে থাই এয়ারওয়েজে সাবেক রাষ্ট্রপতি ঢাকায় ছেড়ে যাওয়ায় বুধবার রাতে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

এর অংশ হিসেবে বুধবার রাতে দায়িত্ব পালন করা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওসি ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া বরখাস্ত করা হয়েছে এটিএসআই মো. সোলায়মানকে।

এরপর রাতেই নিজের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে হাসনাত লিখেছেন, ‘সবাই চলে আসুন। জুলাইয়ের সকল শক্তি, সকল শহীদ পরিবার ও আহতদের আহ্বান জানাই রাজপথে নেমে আসুন। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’

নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি ফ্যাসিস্ট ও খুনী আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামিদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। বিচার প্রশ্নে সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেছেন, ‘জুলাইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল খুনীদের বিচার এবং মুজিববাদীরা বাংলার মাটিতে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে। আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠবো না ‘

নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ

আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার  রাতে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।

ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফরমালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।’

তিনি আরো লেখেন, ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্নকরণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *