মানবিক করিডোরের নামে কোনোকিছু চাপিয়ে দেওয়া যাবে না : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

অনলাইন ডেস্ক :

 

‘মানবিক করিডোরের নামে কোনোকিছু জনগনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় প্রয়াত অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর স্মরণ সভায় মানবিক করিডোরের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এমন হুঁশিয়ারি দেন।

তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত যিনি আছেন (নিরাপত্তা উপদেষ্টা) তিনি অনেক কথা বলছেন। তার মধ্যে গতকাল একটা কথা বলেছেন, যে যাই থাক মিয়ানমারের পাশে তার সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে হবে। তো তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, দেশের মানুষ-জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন না। আলোচনাটা করেন। আমরা তো দেশের স্বার্থে, স্বাধীনতার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে আমরা কখনই তো বাধা নই বরঞ্চ আমরা সামনে এসে দাঁড়াব; বরঞ্চ লড়াইটা আমরাই করি। সেই জায়গায় দয়া করে অনুরোধ করব, বাংলাদেশের মানুষকে আন্ডারস্টিমেট করবেন না। এখানে কিছু কিছু পণ্ডিত-একাডেমিশিয়ানস সবাই বসে যদি মনে করেন যে ইম্পোজ করে দিতে পারবে কোনোকিছু যেটা এদেশের মানুষের পক্ষে যাবে না। সেটা কোনোদিনই করতে পারবেন না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমি অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই; বারবার বলছি। আমরাই তাদেরকে বসিয়েছি। কিন্তু এমন কোনো কাজ করবেন না; যা জাতির বিরুদ্ধে যাবে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাবে। এমন কোনো কাজ করবেন না যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যে উপযোগী হবে না। আজকে এমন কাজ করছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ ক্লিয়ার না। প্যাসেজ দেবেন, করিডোর দেবেন; সেই করিডোর নিয়ে  মানুষের সঙ্গে আলাপই করছেন না, কথা বলছেন না। আপনি করিডোর দিয়ে দিচ্ছেন আরাকানে; যে আরাকান আর্মি গর্ভমেন্টই নেই। করিডোর কি দেবেন? যদি প্রয়োজন হয় একশ’ বার দেবেন, মানবতাকে যদি সাহায্য করতে হয়, সাহায্য করব। কিন্তু আপনি তো দেশের জনগণকে নিয়েই সেটা করবেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।

গত বছরের ২ মে এ জে মোহাম্মদ আলী মারা যান। তিনি ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বাদশ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত পরশু ‍যখন লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন এবং তার স্বাস্থ্যে ও চেহারার মধ্যে নতুন করে আমরা আলো দেখতে পেয়েছি। গোটা জাতি আজ নতুন করে আলো পেয়েছে। এই সময়টাকে কাঁধে নিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কথাকে ভুল ব্যাখ্যা করে বিচার করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা জানি এটা কেনো করা হচ্ছে? গত পরশু সেটা প্রমাণিত হয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। প্রমাণিত হয়েছে যে, বিএনপি হচ্ছে সবচাইতে বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির হাতেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র একমাত্র নিরাপদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আপনার সংস্কার করতে হবে; আমরা তো সংস্কার চেয়েছি সবসময়। এখন অনেকে বলছে যে, আগে সংস্কার হবে তারপরে নির্বাচন। তো সংস্কার যে একটা চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার হতে হতে আপনার যদি ৫ বছর ১০ বছর লাগে; লাগতে পারে এটা চলমান। তাহলে নির্বাচন ১০ বছরেও হবে না। আর ১০ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী আমলাদের হাতেই দেশ চলবে। এখন তো আমরা ফ্যাসিবাদী আমলাদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছি। সেক্রেটারিয়েটের আমলারা ৯০% ফ্যাসিবাদের দোসর। আপনারা (আইনজীবীরা) এখানে আলোচনা করলেন যে আপনাদের বারে অনেকে আছেন যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন; তাই না। তা হলে এই অনির্দিষ্টকালের জন্য একটা অনির্দিষ্ট অনিশ্চিত একটা অন্তবর্তী সরকার; এটা কি দেশের মানুষের জন্য খুব উপকারে আসবে?

তিনি আরও বলেন, আমাদের অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আপনাদের মাধ্যমে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই; আপনারা অনেক পরিবর্তন এনেছেন। বলছেন যে, ফুট স্টেপ রেখে যাবেন। আপনার কি কি পরিবর্তন হয়েছে?

দেশের এই বর্তমান তুলে ধরে আইনজীবীদের ‘কথা বলার’ জন্য অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদেরকে কথা বলতে হবে। আমাদের বিজ্ঞ আইনজীবীরা ইদানিং কথা কমিয়ে দিয়েছেন। তারা শুধুমাত্র নিজেদের বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলছেন না।

বিচারাঙ্গনে ফ্যাসিস্টদের দোসররা এখনও বহাল আছে বলে অনুষ্ঠানে দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

সংগঠনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও সালাহউদ্দিন আহমদ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, প্রয়াত এ জে মোহাম্মদ আলীর সহধর্মিনী ফারজানা আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *