Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

ঝিনাইদহে এসএসসি পরীক্ষার আগেই ২১৩ ছাত্রীর বিয়ে

ডিপি ডেস্ক :

বাল্যবিবাহ নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিসে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝিনাইদহের ৬ উপজেলাতে ২১৩ জন কিশোরী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। ফলে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেও তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। 

জেলা শিক্ষা অফিস থেকে পাঠানো জেলার এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল পরীক্ষার এক জরিপের তথ্যে বাল্য বিবাহের এমন চিত্র উঠে এসেছে।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বালক অনুপস্থিতি ছিল ৬৬ জন ও বালিকা অনুপস্থিত ছিল ২০৪ জন। এ পরীক্ষায় ২০৪ জন বালিকার মধ্যে অনুপস্থিত ১৭৪ জন বালিকার বিয়ে হয়ে গেছে। এ ছাড়া দাখিল পরীক্ষায় ৩৩ জন ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৬ জন ছাত্রীর বিয়ের তথ্য পেয়েছে জেলা শিক্ষা বিভাগ।

বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, এ জেলায় বাল্যবিবাহ ঠেকানো দিনদিন দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

প্রশাসনে কঠোর নজরদারি এড়িয়ে গোপনে কিশোরীদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে বর্তমানে তালাক ও বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

তারা জানান, এ বছর এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝিনাইদহে ২১৩ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেও তারা পরীক্ষার হলে উপস্থিত ছিল না।

এ নিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তোলপাড় শুরু। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির জোর তৎপরতা না থাকার কারণে অল্প বয়সী কিশোরীদের বিবাহ দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় ৬০ জন ছাত্রী পরীক্ষার হলে অনুপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ৪৬ জন বিয়ের কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি। একইভাবে হরিণাকুণ্ডে ১৯ জন ছাত্রীর মধ্যে ১৪ জন, মহেশপুরে ৬৮ জনের মধ্যে ৫০ জন, শৈলকুপায় ৭১ জনের মধ্যে ৪১ জন, কোটচাঁদপুরে ২৫ জনের মধ্যে ২০ জন ও কালীগঞ্জে ৭২ জন ছাত্রীর মধ্যে ৪৪ জন পরীক্ষার হলে অনুপস্থিত ছিল।

এদের মধ্যে ২১৩ জন বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুন্সি ফিরোজা সুলতানা বলেন, ‘এসব বিবাহের ব্যাপারে প্রশাসনের কোনো গাফলতি নেই। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটিতে যারা আছেন তারা সবাই খুবই আন্তরিক। তবে গোপনে ও স্থান পরিবর্তন করে বিবাহ দেওয়ার কারণে অনেক খবর আমরা জানতে পারি না। তারপরেও এ দায় অনেকটা আমাদের ওপর বর্তায়।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘ছাত্রীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজিরার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা গেছে জেলায় ২১৩ জন শিক্ষার্থীর বিবাহ হয়ে গেছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়। সেগুলো বিবাহের পরে আমরা জানতে পারি। এ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হলে ছাত্রীদের গোপনে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, এ জেলায় বাল্যবিবাহ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। নইলে বাল্যবিবাহ মহামারি আকার ধারণ করবে।’

 

Exit mobile version