কুষ্টিয়ার ২৪৬টি পূজা মণ্ডপে চলছে দুর্গোৎসবের শেষ প্রস্তুতি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মণ্ডপগুলোতে এখন সাজসজ্জার কাজ চলছে জোরেশোরে। গতবারের চেয়ে এ বছর মণ্ডপের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আসবেন ঘোটকে চড়ে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এবার জেলায় ২৪৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গতবারের চেয়ে এবার মণ্ডপের সংখ্যা নয়টি বেড়েছে।

প্রতিমাশিল্পী শ্রীঅসীত কুমার পাল জানান, চাহিদামতো প্রতিমা গড়ে তুলতে প্রতিমাশিল্পীরা বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কর্মযজ্ঞ। প্রায় দু মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি আটটি প্রতিমা তৈরি করেছেন। একেকটি প্রতিমাতে সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। একটা প্রতিমা তৈরি করতে মাটি লাগানো, বাঁশের কাজ, খড়ের কাজ, রঙ করাসহ সব মিলে প্রায় ১২ দিন লাগে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। আগের চেয়ে প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়েছে। তবে খরচ বাদে ভালোই পারিশ্রমিক পাওয়া যায়।

প্রতিমাশিল্পী মিঠুন পাল বলেন, ‘দুর্গাপূজা এলে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। দুই মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও লক্ষ্মী প্রতিমা। আগে একটা প্রতিমা তৈরি করে ভালো লাভ থাকতো। কিন্তু এখন বাঁশ, কাঠ, কাদা মাটিসহ প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেশি। তাই প্রতি সেট প্রতিমা তৈরিতে খরচ বেড়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আমরা প্রতিমা তৈরি করে থাকি। যে যেমন ডিজাইন চায় তাকে সেভাবেই প্রতিমা বানিয়ে দেওয়া হয়। আমরা চুক্তিভিত্তিকও কাজ করি। মালাকারের সহযোগী হিসেবে দুই মাসের চুক্তিতে ২০ হাজার টাকায় আমি প্রতিমা তৈরির কাজে এসেছি। তবে আগের চেয়ে প্রতিমাশিল্পীও বেড়ে গেছে। ফলে প্রতিমাশিল্পীদের কদরও কমে গেছে।’

আরেক প্রতিমাশিল্পী সঞ্জয় কুমার পাল জানান, প্রতিমা তৈরিতে মূলত মাটি, বাঁশ, খড়, দড়ি, লোহা, ধানের কুঁড়া, পাট, কাঠ, রঙ, বিভিন্ন রঙের কাপড়ের প্রয়োজন হয়। যাবতীয় এসব আমাদের বহন করতে হয়।

মিরপুর পালপাড়া মাতৃমন্দিরের দফতর সম্পাদক নরোত্তম কুমার পাল বলেন, ‘পূজার প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। এখানে আমরা সবাই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করি। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমরা সেভাবে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। এবার প্রতিমা তৈরির খরচ, মণ্ডপের সাজসজ্জাসহ সব মিলে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হচ্ছে। আশা করছি, দুর্গাপূজায় আমাদের মণ্ডপে কোনও কিছুর ঘাটতি থাকবে না।’

কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ সাহা জানান, এবার জেলায় সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মণ্ডপগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জেলায় সব থেকে বড় পরিসরে পূজা অনুষ্ঠিত হয় শহরের নবযুব সংঘ মন্দির, দত্তপাড়া শিবশক্তি মন্দির, বৈশাখী ও ফাল্গুনী মন্দিরে। এসব স্থানে লোকসমাগমও হয় প্রচুর। এছাড়াও পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ মেলার অয়োজন থাকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *