ভাই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিধ্যাপীঠ গুলোতে কি মানুষ পড়ে ,না পশুরা পড়ে :রিস্কা চালকের প্রশ্ন ?

কি দোষ করেছিল যে তাকে মেরেই ফেলতে হবে?
জীবিত মানুষ পড়াশোনা করতে গিয়ে লাশ হয়ে প্রায়ই বাড়ি আসে খবর শুনি ?
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আবরার

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে নিহত বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামের নিজ বাসার সামনে আবরারের তৃতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় রায়ডাঙ্গা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কুষ্টিয়ার আফসার উদ্দিন গার্লস ফাজিল মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল রেজাউল করিম এই জানাজা পড়ান। এতে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।
এদিকে মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মরদেহ নিজ গ্রামে পৌঁছালে তা নিয়ে বিক্ষোভ করে এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এ সময় তারা হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। শত শত মানুষ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে হত্যাকরীদের ফাঁসির দাবি জানায়।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় তার নিজ বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়রে রায়ডাঙ্গায় তার দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর বেলা সাড়ে ১১ টায় আবরার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার আয়োজনে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন।
উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার মমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া, সহ-সভাপতি অর্পণ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়ার ইমন রুবেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমি রাব্বি আলামিন, সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জন কৃষ্ণ শীল, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, দপ্তর সম্পাদক জুলিয়াা পারভীন প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, যারা মানুষের কথা বলে, দেশের কথা বলে তাদের মৃত্যু নেই, তারা সব সময় রয়ে যায় মানুষের হৃদয়ে। আর যারা ওই দেশ প্রেমিকদের হত্যা করে তাদেরকে ঘৃনার পাত্র হয়ে অমানুষের খেতাব নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। মানববন্ধনে আবরার ফাহাদকে হত্যাকারীদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত আইনের আওতাই এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নিহত আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজসহ স্বজনরা ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে আবরার ফাহাদের মরদেহ কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের কান্নায় সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। আবরারকে একনজর দেখার জন্য সেখানে আগে থেকে ভিড় জমান শত শত মানুষ। এ সময় আবরারের মরদেহ দেখে উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
নিহত আবরারে বাবা বরকতুল্লাহ প্রতিবেদককে জানান, আমার ছেলে শিবির নয়, সে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলনা। আবরারকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি, সেই সাথে হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। যেনো আমার মত আর কাউকে এভাবে সন্তানহারা হতে না হয়।
নিহত আবরারের মা রোকেয়া খাতুন প্রতিবেদককে জানান, আমার আবরারের স্বপ্ন ছিলো ও বিজ্ঞানী হবে, ও দেশের জন্য কাজ করবে কিন্তু ওরা তা হতে দিলোনা। আমি আমার সন্তানের হত্যার বিচার চাই, কেউ যেনো কোন রাজনৈতিক ছায়াতে পারপেয়ে না যায়।
বুয়েটের নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ এমন মৃত্যুতে ফুসে উঠেছে আবরারের এলাকাবাসী। জানাজা শেষে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী, পরবর্তীতে পুলিশ এসে পরিবেশ নিয়ন্ত্রনে আনে। এদিকে আবরার হত্যার প্রতিবাদে বুধবার কুমারখালীর বাসষ্ট্রান্ডে মানববন্ধন এর ডাক দিয়েছেন স্বপ্নপূরন ফাউন্ডেশন, ব্লাড ডোনেশন ক্লাব, মনির খান সংঘ সহ কয়েকটি সামাজিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জননেতা মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি’র সামনে আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শত শত মানুষ এই জানাজায় অংশ নেয়। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মরদেহ নেয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে। সকাল ৯টার দিকে আবরারের মরদেহ তার নিজ গ্রাম কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছায়। সেখানে সকাল ১০টায় তার তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা শেষ হওয়া মাত্রই বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী রাস্তায় নেমে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করে। তারা আবরার হত্যাকারীদের গ্রেফতারসহ ফাঁসির দাবি জানায়। পরে বেলা পৌনে ১১টার দিকে রায়ডাঙ্গা গোরস্থানে আবরার ফাহাদকে সমাহিত করা হয়। উল্লেখ্য, গত রোববার দিবাগত রাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনকে খবর দিলে তারা এসে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *