Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :

 

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে জনবল নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, গত ২৪ অক্টোবর (শুক্রবার) কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাতটি পদের ১১৫টি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৭৮৯ জন ।
প্রাথমিক তদন্তে সিভিল সার্জন অফিসের গত শুক্রবারের (২৪ অক্টোবর) নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এবং সংবাদপত্রে উঠে আসা অনিয়মের খবরের প্রেক্ষিতে দুদক অনুসন্ধানে নামে।অনুসন্ধানের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্তে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।এতে বলা হয়- দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়া হতে গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয় এবং বুধবার ২৯ অক্টোবর তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষ হবে বলে দুদক জানিয়েছে।

অভিযান পরিচালনাকালে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ পরীক্ষার দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত সংগৃহীত প্রাথমিক তথ্যের আলোকে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। অতঃপর সিভিল সার্জন কার্যালয় হতে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করে দুদক টিম। সার্বিক পর্যালোচনায় স্থানীয় বিভিন্ন দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের যোগসাজশে প্রশ্ন ফাঁসের এ অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মর্মে টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়। তৎপ্রেক্ষিতে জড়িত মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের মোবাইল ফোনসমূহ এবং অন্যান্য আলামত জব্দ করে দুদক টিম। প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশপূর্বক টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করেছে।

এ বিষয়ে সূত্রটি আরও জানায়, দুদকের অনুসন্ধানী টিম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কমিটির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। আর তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান চালাতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। দুদকের ঐ সূত্রটি আরও জানায়- সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনিয়মের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে, সেই সাথে তদন্তের স্বার্থে অনেক গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে।

এদিকে সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনিয়ম ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রশাসন অধ্যাপক ডাক্তার খায়ের আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তিন সদস্যের কমিটির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষ হবে।

এ কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা: খায়ের আহমেদ চৌধুরী গত সোমবার সিভিল সার্জন অফিসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ঘটনার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও আমরা বিশ্লেষণ করেছি। পাশাপাশি আরএমও ডাক্তার হোসেন ইমামের সংশ্লিষ্টতাসহ সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিস্তারিত জানাতে না পারলেও কিছু একটা যে ঘটেছে, সে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্তে শেষে প্রকৃত ঘটনা পাওয়া যাবে বলে আশা রাখি।

এদিকে দুদক গত সোমবার প্রথম দিনে সিভিল সার্জন অফিসে অভিযান চালিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা: হোসেন ইমামের বড় ভাই কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান ইমামের দু’টি মোবাইল ফোন জব্দ করে। মোবাইল ফোনের কল লিস্ট দেখে এই অনিয়মের অনেক প্রশ্ন এবং উত্তর দুদকের হাতে বলে সূত্রটি জানায়।

এদিকে ছাত্র জনতার চাপের মুখে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন অফিসের ১১-২০ গ্রেডের শূন্যপদে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় শনিবার (২৫ অক্টোবর) সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটি। রোববার সকালে নিয়োগ বাতিল ও সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের অপসারণের দাবীতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের ব্যস্ততম এন,এস রোড অবরোধ করে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা।পরে সড়ক থেকে উঠে এসে সিভিল সার্জন অফিসের ভবনের নীচে অবস্থান নেয় ছাত্র জনতা। এসময় উপায়ন্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে সিভিল সার্জন অফিস থেকে নীচে নেমে ছাত্র জনতার দাবী মেনে নিতে ২ দিন সময় প্রার্থনা করেন। ছাত্র জনতা ২ দিনের মধ্যে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি এবং নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবস্থান ধর্মঘট তুলে নেয়।

Exit mobile version