গ্রামবাসীর তোপের মুখে আবরারের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি ভিসি !

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার কুমারখালীর রায়ডাঙ্গায় আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। আজ বুধবার (০৯ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে কুমারখালীর রায়ডাঙ্গায় ফাহাদের বাড়িতে পৌঁছায় বুয়েটের ভিসি। বাড়িতে প্রবেশকালে উপস্থিত এলাকার মানুষজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করতে গিয়ে গ্রামবাসীর বাধার মুখে পড়েছেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এ সময় গ্রামবাসীকে সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় আবরারের ছোট ভাই ফায়াজ, তার ফুপাতো ভাইয়ের স্ত্রী ও আরও একজন নারীসহ ৫জন আহত হয় বলে আবরারের ছোট ভাই ফায়াজ প্রতিবেদককে জানান।
বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় রায়ডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গ্রামবাসীর অবস্থা বেগতিক দেখে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামকে পাহারা দিয়ে ১৫ মিনিটের মাথায় নিরাপদে সরিয়ে নেয় পুলিশ। ওই বাড়িতে পৌঁছানোর আগে পথের মধ্যে ফাহাদের দাদা আব্দুল গফুর ও বাবা বরকত উল্লাহর সঙ্গে কবর স্থানে যান এবং জিয়ারত করেন। তবে বুয়েট উপাচার্য রায়ডাঙ্গায় মাত্র ১৫ মিনিটের মতো অবস্থান করেন। কবর জিয়ারত শেষে পরিবারকে সমবেদনা জানাতে নিহত আবরারের বাড়িতে যাওয়ার সময় গ্রামবাসী ভিসিকে গালিগালাজ ও ভিসিবিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে।
পরে এলাকাবাসীর তোপের মুখে ডিসির গাড়িতে ভিসি দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ভিসির উপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ফাহাদের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এর আগে তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য বিকেল তিনটার দিতে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে পৌঁছান ভিসি। সেখান থেকে কুমারখালী উপজেলায় রায়ডাঙ্গা গ্রামে যান ভিসি সাইফুল ইসলাম। এদিকে ভিসি আসছে সে খবরে আগে থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান নেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা জানান, আবরারের পরিবারকে সমবেদনা এবং তার কবর জিয়ারত করার জন্য সকালে উপাচার্য ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তার আসার কথা কুষ্টিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে আবরারের আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী ও গ্রামবাসী আগে থেকেই বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। গ্রামবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, আবরারকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলেও ভিসি তাকে দেখতে যাননি এবং বুয়েটে তার জানাতেও অংশ নেননি। আর এখন আসছেন কবর জিয়ারত করতে।
এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ভিসিকে ঘিরে রেখে আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে বুয়েট ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম আবরার বাড়িতে না গিয়েই পিছু হটতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের গাড়িতে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
৬ অক্টোবর (রোববার) রাতে বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এরপর তাকে শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বুধবার পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবাইকে আদালতের মাধ্যমে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আবরার ফাহাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা এবং আবরারের কবর জিয়ারত করতে বিকেল সোয়া চারটার দিকে উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামে আসেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভিসির গাড়িবহর আবরারের কবরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে গ্রামবাসীর বাধার মুখে পড়ে। এ সময় গ্রামবাসীর বাধা সরিয়ে ভিসিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে আবরারের ছোট ভাই আবরার ফায়াজসহ পাঁচজন আহত হয়। অন্যদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে পেছনের দিকে সরে যায় পুলিশ ও ভিসির গাড়ি বহর। সেই সঙ্গে পুলিশি পাহারায় ভিসিকে ওই গ্রাম থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। পরে পুলিশের গাড়ি ও ভিসির গাড়ি বহর শহরের দিকে চলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *