ইসলামী ডেস্ক : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম—পবিত্র এ বাক্যটির ব্যবহার শুরু হয় হজরত সুলায়মান (আ.)-এর চিঠির মাধ্যমে। রানি বিলকিসের কাছে লেখা চিঠিতে তিনিই সর্বপ্রথম এ বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২৯-৩০ নম্বর আয়াতে সে চিঠির বিবরণ উল্লেখ রয়েছে। এরপর রাসুল (সা.) ছাড়া আর কোনো নবীকেই বিসমিল্লাহর বিধান দেওয়া হয়নি। প্রাথমিক যুগে রাসুল (সা.) ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ লিখতেন। তারপর সুরা হুদের ৪১তম আয়াতে ‘বিসমিল্লাহি মাজরেহা’ নাজিল হলে তিনি শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ লিখতে শুরু করেন। এরপর সুরা বনি ইসরাইলের ১০ নম্বর আয়াতে ‘কুলিদ্য়ুল্লাহা আওয়িদ্উর রাহমান’ অবতীর্ণ হলে তিনি ‘বিসমিল্লাহির রহমান’ লিখতে শুরু করেন। এরপর সুরা নামলের ৩০তম আয়াতে পুরো বিসমিল্লাহ নাজিল হলে তিনি পুরো ‘বিসমিল্লাহ’ লেখার রীতি প্রচলন করেন। (রুহুল মাআনি ও আহকামুল কোরআন লিল জাস্সাস)।
এটি অত্যন্ত বরকতময় একটি বাক্য, যার মাধ্যমে কোনো কাজ শুরু করলে মহান আল্লাহ তাতে বরকত ঢেলে দেন। সেই কাজকে মুক্ত রাখেন শয়তানের অনিষ্ট থেকে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কোরআন শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহর মাধ্যমে। শ্রেষ্ঠতম ইবাদত নামাজের প্রত্যেক রাকাত শুরু হয় বিসমিল্লাহ দিয়ে। শ্রেষ্ঠতম স্থান মসজিদে প্রবেশ করতে হয় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জিবরাইল (আ.) যখনই আমার কাছে ওহি নিয়ে আসতেন, তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তেন।’ (দারা কুতনি)
কোরআনের একটি সুরা ছাড়া সব সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ রয়েছে। হাদিসের কিতাবগুলো শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহ দিয়ে। রাসুল (সা.) সমকালীন সব রাজা-বাদশাহর কাছে চিঠি লিখেছেন ‘বিসমিল্লাহ’ দিয়ে শুরু করে। এরপর হুদাইবিয়ার ঐতিহাসিক সন্ধিপত্রে রাসুল (সা.) পুরো ‘বিসমিল্লাহ’ লিখতে বলেছেন। অবশ্য লেখার পর কাফিরদের আপত্তির কারণে শুধু ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ রাখা হয়। (আহকামুল কোরআন লিল জাস্সাস, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮)
এমনকি আহার গ্রহণের সময়ও তা গ্রহণ করতে হয়, ‘বিসমিল্লাহ’র মাধ্যমে। হজরত আবু নুআইম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে একদা কিছু খাবার আনা হলো, তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর পোষ্য ওমর ইবনে আবু সালামা। তিনি বলেন, ‘বিসমিল্লাহ’ বলো এবং নিজের কাছের দিক থেকে খাও।” (বুখারি, হাদিস : ৫৩৭৮)
খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ না পড়া হলে, সেই খাবারে শয়তান অংশগ্রহণ করে, ফলে সেই খাবার থেকে বরকত উঠে যায়। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছয়জন সাহাবিসহ আহার করছিলেন। এমন সময় এক বেদুইন এসে সব খাবার দুই গ্রাসে শেষ করে ফেলল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করত, তাহলে এই খাদ্য তোমাদের সবার জন্য যথেষ্ট হতো। অতএব, তোমাদের কেউ আহার গ্রহণকালে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। সে যদি আহার গ্রহণের প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলে, ‘বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৬৪)
যেহেতু খাবারের সময় বিসমিল্লাহ না পড়লে খাবারের বরকত উঠে যায়, সেহেতু ওই সময় মানুষ মাত্রাতিরিক্ত খেয়ে ফেলে, ফলে তার দুই ধরনের ক্ষতি হতে পারে। প্রথমত, শয়তান নাপাক। সে যখন কোনো ব্যক্তির খাবারে এসে অংশগ্রহণ করবে, তখন তার প্রভাবে মানুষের আত্মা প্রভাবিত হবে। সে ইবাদতে মজা পাবে না। তার আত্মায় আস্তে আস্তে অন্ধকার নেমে আসবে। দ্বিতীয়ত, মাত্রাতিরিক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এর ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তা ছাড়া খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ ত্যাগ করলে আল্লাহ প্রদত্ত রিজিকের অকৃতজ্ঞতা হয়। যা মানুষের রিজিক কমিয়ে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, মানুষের রিজিক অনেকভাবেই কমতে পারে। যেমন—অভাব-অনটনের মাধ্যমে, অসুস্থতার মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন’। (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
তাই আমাদের উচিত খাবারসহ সব উত্তম কাজ করার সময়ই বিসমিল্লাহ পড়া। কোনো কারণে খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে ভুলে গেলে অবশ্যই ‘বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি’ পড়ে নিতে হবে।