ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিচ্ছে !

ন্যাশনাল ডেস্ক : ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একাজে তারা খুবই বেপরোয়া। সামনে পড়লে বাংলাদেশি জেলেদের মারধর করে, জাল নষ্ট করে দেয়। ওদের ট্রলার অনেক বড়, আমাদের ট্রলার ছোট। সমুদ্রসীমায় মাছ ধরার ক্ষেত্রে আমাদের নিষেধাজ্ঞার সুযোগটাই ওরা বেশি কাজে লাগায়।

বাংলানিউজের কাছে ভারতীয় জেলেদের সম্পর্কে এভাবেই অভিযোগে করেন উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জেলেদের সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। সমুদ্রে প্রবেশের পর মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। তখন কারও সঙ্গে আর যোগাযোগ থাকে না। কিন্তু, ভারতীয় জেলেদের কাছে ওয়্যারলেস রয়েছে। ওদের ট্রলার বড় হওয়ায় লোকসংখ্যাও বেশি। বিপদে পড়লে ওদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সাহায্য করে। আর আমরা নেটওয়ার্কের বাইরে থাকায় বিপদের খবর জানাতেও পারি না।

ইদ্রিস বলেন, আমরা সরকারের যেকোনো নিষেধাজ্ঞা মেনে চলি। এখন সরকারের কাছে আমাদের নিরাপত্তা ও সমুদ্রসম্পদ রক্ষার দাবি জানাই।

জাতীয় মৎস্য সমিতির মোংলা শাখার সভাপতি বিদ্যুৎ মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয়রা জলসীমা লঙ্ঘন করে মাছ ধরে নিয়ে যায় আর বাংলাদেশের জেলেরা মাছ না পেয়ে অনাহারে থাকে। বাংলাদেশে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা সাগরে মাছ ধরতে পারি না। কিন্তু, এ সুযোগ নেয় ভারতীয় জেলেরা। তারা এসময় বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়।

সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বাংলানিউজকে জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশি জেলেরা সমুদ্রে যাচ্ছেন না। আর এই সুযোগে বাংলাদেশে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয়রা। আধুনিক জাল ও ট্রলার নিয়ে অনেকটা সাগর সেচে তোলার মতো মাছ ধরে তারা। দ্রুতগামী নৌযান ও কারেন্ট জালসহ জিপিএস ব্যবহার করে ভারতীয় জেলেরা। তারা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার দিয়ে বাংলাদেশের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তৎপরতায় চোখ রাখে আর তাদের আসতে দেখলেই দ্রুত পালিয়ে যায়। এসব জেলেদের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড মাঝে মধ্যে আটক করলেও তাদের বেপরোয়াভাবে জলসীমা লঙ্ঘন করে মাছ ধরা থামে না।

দেশি জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, একই সাগরে দুই ধরনের নিয়ম হয় কীভাবে? ভারতে যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ থাকা উচিত।

বাংলাদেশে ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। অভিযোগ রয়েছে, দেশি জেলেদের নিষেধাজ্ঞার এ সুযোগ নিচ্ছে ভারতীয় জেলারা। বঙ্গোপসাগরের আন্তর্জাতিক সীমা বা ইনোসেন্ট প্যাসেজ পেরিয়ে বাংলাদেশের অন্তত ৫০-৬০ নটিক্যাল মাইল ভেতরে ঢুকে ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

জানা যায়, গত জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৫১৬ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করা হয়েছে। তারা বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করছিল। সবশেষ গত সোমবার (১৪ অক্টোবর) ভোরে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে এফ বি হীরা পার্বতী নামে একটি মাছ ধরা ট্রলারসহ ১১ ভারতীয় জেলেকে আটক করে নৌবাহিনী। ওইদিন বিকেলে পুলিশ তাদের বাগেরহাট আদালতে পাঠায়। আদালত আটক জেলেদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এনিয়ে গত ১৫ দিনে পাঁচটি মাছ ধরা ট্রলারসহ ভারতীয় ৪৯ জেলেকে আটক করেছে নৌবাহিনী।

এ বিষয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করে মাছ শিকারের সময় কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীর হাতে প্রায়ই ভারতীয় জেলেরা আটক হয়। গত জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত কোস্টগার্ডের হাতে ৫১৬ ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী আটক হয়েছে। এদের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ৩২ ট্রলারসহ অনেক ভারতীয় জেলে বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে পড়ে। পরে, তাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম মিনারুল হক বাংলানিউজকে বলেন, কোস্টগার্ড বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা, তৎসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন নদনদীতে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও নির্ভরতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় আমাদের সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *