কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : আগের তুলনায় নতুন সড়ক আইন ২০১৮ তে জরিমানা ও শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। হেলমেড ব্যবহার না করলে ১০ হাজার, রেজিষ্ট্রেশনসহ অন্যান্য জরিমানা ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়া শাস্তি অনুযায়ী রয়েছে কারাদন্ড। এদিকে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসে প্রতিদিন নতুন লাইসেন্স, লাইসেন্স নবায়ন, রেজিষ্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদের জন্য ভীড় করছে শতশত মানুষ। দীর্ঘদিন যারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছিলেন তারাও এখন ধর্ণা দিচ্ছে অফিসে। আগের তুলনায় সব ধরনের আবেদনের সংখ্যা কয়েকগুন বেড়েছে।
সেবা প্রত্যাশী ফারুক হোসেন বলেন, অনেক বছর ধরেই মটর সাইকেল চালাচ্ছি। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। আগে ম্যানেজ করে চলা যেত। এখনতো জরিমানা বেড়েছে। তাই লার্ণার করে নিচ্ছি।
কথা হলে অন্য দুই সেবা প্রত্যাশী বলেন, নতুন আইনকে তারা সাধুবাদ জানাচ্ছে। তবে প্রচারনা অনেক কম। প্রচারনা বাড়াতে হবে। অযথা কেউ যেন হয়রানী না হয়। তবে ভয়ে হলেও এবার সবাই আইন মানবে বলে জানান তারা। আবেদন বাড়ার পাশাপাশি বিআরটিএ অফিসের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। লোকবল সংকট নিয়ে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। লাইন দিয়ে টাকা জমা দিচ্ছে সেবা প্রত্যাশীরা।
মটরযান পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে মটর সাইকেল চালক ভীড় জমাচ্ছে। লাইসেন্স নিতে আবেদন জমা পড়ছে বেশি। আগে দিনে ৫০টির মত আবেদন পড়লেও এখন দিনে প্রায় শতাধিক জমা পড়ছে। অন্যান্য কাজও বেড়েছে।
বিআরটিএ কুষ্টিয়া অফিসের সহকারি পরিচালক এটিএম জালাল উদ্দিন বলেন, বিআরটিএ অফিসে লোকবল সংকট রয়েছে। তারপরও সেবা প্রত্যাশীদের দ্রুত সেবা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে হঠাৎ চাপ বেড়েছে নতুন আইনের কারনেই। সবাই ছুটছে কাগজপাতি ঠিক করতে।
তবে নতুন এ আইনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন চালকরা। এসবি পরিবহনের একজন চালক বলেন, নতুন আইন ভাল হয়েছে। সড়কে শৃংখলা ফিরবে এবার। সবাইকে সচেতন হয়ে আ্ইন মানতে হবে।
শহরের মজমপুর গেটে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষন করে দেখা গেছে, আগের তুলনায় আইন মানার প্রবনতা বেড়েছে। বিশেষ করে মটর সাইকেল চালকরা হেলমেড ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। সবাই আইন মেনে মটর সাইকেল চালাচ্ছে। তবে দু’একজন এখনো হেলমেড ব্যবহার করছে না। এ জন্য ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সচেতন করা হচ্ছে।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল যানবাহন মালিক ও চালকদের সচেতন করতে শহরে মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি ২০ হাজারের বেশি লিফলেট ছাপানো হয়েছে। এসব লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই প্রশাসন) ফকরুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ সচেতনতামূলক কর্মকান্ড চালানো হবে। সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। মটর সাইকেল চালকরা ইতিমধ্যে সচেতন হয়েছে। তারা হেলমেট ব্যবহার করছে। এছাড়া সব যানবাহন মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত নিজেই নামেন লিফলেট বিতরনে। তিনি প্রায় আধাঘন্টা মজমপুর গেটে লিফলেট বিতরণ করে মটর সাইকেল, বাস ও মাইক্রো চালকদের মাঝে। তিনি সবাইকে আইনে মেনে চলার আহবান জানান। সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার বিষয় তুলে ধরে বলেন, সবাইকে আইন মানতে হবে। আইন না মানলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা হবে। আগে নিজের ঘর থেকে শুরু করবো। পুলিশের কোন সদস্য আইন না মানলে তাকে আগে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান, নুরানী ফেরদৌস দিশা, ট্রাফিকের টিআই ফকরুল ইসলাম, ডিএসবির পরিদর্শক ফয়সাল হোসেন এবং ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বেগম লুৎফুন্নাহার বলেন- আইন প্রয়োগের আগে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। সচেতন হলেই সড়কে শৃংখলা ফিরে আসবে। আমরা সকলকে নিয়ে কাজ করছি। মানুষের ভিতর পরিবর্তন শুরু হয়েছে। আর বিআরটিএতে অনেকে আসছে তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করতে। আশা করছি সবাই আইন মেনে চলবে।