Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

নিজের ঘর বুঝে পেল ইজিবাইকে বাবার সঙ্গে শৈশব কাটানো জান্নাতুল মাওয়া

এবিএস রনি, যশোর প্রতিনিধি : অবশেষে নতুন ঘর পেয়েছে মায়ের ফেলে যাওয়া বাবার সাথে ইজিবাইকে শহরময় ঘুরে বেড়ানো ৬ বছরের সেই শিশু জান্নাতুল মাওয়া। রবিবার (১৭/১১/২০১৯) বিকেলে যশোর জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জান্নাতুল ও তার বাবা মুরাদুর রহমান মুন্নার হাতে এলাকাবাসির উপস্থিতেতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন।

৬ বছরের ফুটফুটে জান্নাতুল আর দশটা সাধারণ শিশুর মতো নয়। তার জীবন ছিল বিচিত্র। মা থেকেও নেই তার। আড়াই বছর বয়স থেকে বাবাই তার মা-বাবা। আনন্দ-বেদনা, মান-অভিমান সব ভাগাভাগি তার বাবার সঙ্গে। অন্য শিশুদের এ সময়টা খেলাধুলায় আর বর্ণ পরিচয়ে কাটলেও তার দিনের বেশির ভাগ সময় কাটতো রাস্তায়। বাবা ব্যাটারিচালিত ইজি বাইকচালক। নিরাপদে দেখে রাখার মতো কেউ না থাকায় ইজিবাইকে বাবার সঙ্গেই দিন কাটতো জান্নাতুল মাওয়ার। প্রতিদিনের তিন বেলা খাওয়া হোটেলে। আর রাতের ঘুম বাবার সঙ্গে ইজি বাইক চার্জ দেওয়ার গ্যারেজের কোণে। গোসলসহ প্রাকৃতিক কাজ সারতে হতো গ্যারেজ মালিকের বাড়িতে।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠে এ নিয়ে ‘ইজি বাইকই ঘর জান্নতুলের’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেদিনই তৎকালীন যশোর জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল স্থানীয় গ্রামের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক আরিফ হোসেনের মাধ্যমে এ প্রতিনিধির কাছ থেকে জান্নাতুলের বাবা মুরাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। এবং তখনই মুরাদকে তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান।
তিনি তখন জান্নাতুলের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তাকে ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন তিনি। এরমধ্যে তিনি যশোর থেকে বদলি হন। এবং বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ তার ঘর দ্রুত পেতে কার্যকর ভূমিকা নেন এবং রবিবার বিকেলে জান্নাতুল ও তার বাবার হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন।
যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের মন্ডলগাতী গ্রামে জান্নাতুল মাওয়ার বাবা মুরাদুর রহমান মুন্নার নামে বরাদ্দ ৫ শতক খাস জমির ওপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অর্থায়নে এক লাখ টাকা ব্যায়ে টিনশেডের এ ঘর তৈরিতে খরচ হয় এক লাখ টাকা। ঘরের চাবি দেয়ার পর জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ মা হারা জান্নাতুলের দিকে এলাকাবাসীর সুদৃষ্টি কামনা করেন। পাশাপাশি তার খোঁজখবর রাখতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইব্রাহীম। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এ বি এম ফারুক প্রমুখ।
ঘর পাওয়া জান্নাতুল মাওয়ার বাবা মুরাদুর রহমান মুন্না বলেন, ঘর পাওয়ায় খুব আনন্দ হচ্ছে। মাওয়াকে নিয়ে ইজিবাইকে বাইকে দিনভর ঘোরার দিন শেষ হলো। মেয়েটিকে এবার ভালোভাবে মানুষ করতে পারবো। আর এই এলাকার সকল প্রতিবেশীর সাথে সব সময় ভালো সম্পর্ক বজায় রাখবো।
নতুন ঘর পাওয়ার খুশিতে অশ্রুসজল চোখে জান্নাতুলের বাবা মুরাদ তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল, বর্তমান জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফসহ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
Exit mobile version