কক্সবাজারের রামুতে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষককে পিটুনি ও ঝাঁটাপেটা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত একজন শিক্ষককে বিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা ‘ঝাঁটাপেটা’ দিয়েছে। শিক্ষককে পিটুনি দিয়ে ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা শ্লোগান ধরেছে ’আমরা নুশরাত হতে চাই না-আমরা ধর্ষিতও হব না।’ গতকাল মঙ্গলবার এমন ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয়টির ছাত্রীরা ‘ধর্ষক শিক্ষকের শাস্তি চাই-আমরা তাকে ভয় পাই’ এরকম শ্লোগান লেখা শত শত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিসহ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। কক্সবাজারের রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা গতকাল মঙ্গলবার রামু উপজেলা সদরে পিটুনির শিকার হওয়া ওই বিতর্কিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচিসহ আন্দোলনে নামে। বিদ্যালয়টির ৭/৮ শ ছাত্রীর এমন ব্যতিক্রমি আন্দোলনে স্থানীয় সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষও একাত্মতা প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টির বহিষ্কৃত বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ করিমের বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে ছাত্রীরা এমন আন্দোলনে নামে। প্রধান শিক্ষক সৈয়দ করিমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ বেশ পুরানো। ইতিপূর্বে বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক সরাসরি প্রধান শিক্ষক সৈয়দ করিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম মন্ডল জানান, সাবেক প্রধান শিক্ষক সৈয়দ করিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির আহরহ অভিযোগ রয়েছে। বহুবার উঠেছে তার বিরুদ্ধে ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগও।
তারপরেও অভিযুক্ত শিক্ষক সৈয়দ করিমকে একটি কুচক্রী মহল বিদ্যালয়ে পুনরায় নিয়োগের পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রামুতে আর একটি নুশরাত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া যাবে না। জেনেশুনে আমরা আমাদের কোমলমতি মেয়েদেরকে শিক্ষক নামী ধর্ষকের হাতে তুলে দিতে পারি না।

এ বিষয়ে রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম জয়নাল আবেদীন জানান, ২০০৬ সালে প্রথমবার দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীর অভিভাবক উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে রামু থানায় মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় সাবেক প্রধান শিক্ষক ছৈয়দ করিম দীর্ঘকাল কারাগারে আটকও ছিলেন। এ ঘটনার পর আরো অনেকবার একই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠেছে যৌন হয়রানির অভিযোগ। এমন সব অভিযোগে এ পর্যন্ত তিনবার বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় উক্ত বিতর্কিত শিক্ষককে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে একজন শিক্ষিকাও উক্ত শিক্ষক ছৈয়দ করিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। এ ঘটনার পর তাকে শেষ বারের মতো বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই তিনি নানা তদবিরের মাধ্যমে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করিয়ে আবারো বিদ্যালয়ে যোগ দেন। সর্বশেষ উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে উক্ত বিতর্কিত শিক্ষক ছৈয়দ করিম গতকাল বিদ্যালয়ে পুনরায় যোগদান করতে যান। বিতর্কিত শিক্ষক আবারো বিদ্যালয়ে ফিরে আসার খবর পেয়ে শত শত ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা তাঁর যোগদান ঠেকাতে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের হয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, বিতর্কিত শিক্ষক ছৈয়দ করিম বিদ্যালয়ের অঙ্গনে প্রবেশ করা মাত্রই তাঁকে ছাত্রীরা ধরে ঝাঁটাপেটা দিতে শুরু করেন। এ সময় উপস্থিত বেশ কিছু অভিভাবকও ছাত্রীদের সাথে তাঁকে ধরে মারধর করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। পিটুনির শিকার শিক্ষক ছৈয়দ করিম চিকিৎসা নিতে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি সাংবাদিকদের জানান- তাঁকে ছাত্রীরা পিটুনি দেয়নি। যা পিটুনি দিয়েছে অভিভাবক পরিচয়ধারী স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি। এ ব্যাপারে তিনি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *