মুশফিকের লড়াইয়ে টেস্ট গড়াল তৃতীয় দিনে

অনলাইন ডেস্ক : পরাজয় চোখ রাঙানো বাংলাদেশের সামনে এখন একমাত্র ভরসা মুশফিকুর রহীম। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে টাইগাররা। কলকাতা টেস্টে ইনিংস পরাজয় এড়াতে এখনও ৯০ রান চাই বাংলাদেশের, হাতে আছে চার উইকেট। মুশফিকের ৭০ বলে ১০ চারে ৫৯ রানের উপর ভর করে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৫২ রান তুলে দ্বিতীয় দিন পার করেছে সফরকারীরা।

এর আগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ১০৬ রানে। ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় দিন ৯ উইকেটে ৩৪৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক ভারত। অধিনায়ক বিরাট কোহলির ১৩৬ রানের সুবাদে দ্বিতীয় দিনের চা-বিরতির আগে ওই রান করে নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। এরপর ব্যাট হাতে নেমে আবারো দিশেহারা হয়ে পড়েন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। স্কোর বোর্ডে ১৩ রান উঠতেই নেই ৪ উইকেট। এতে শঙ্কা তৈরি হয় দু’দিনেই কলকাতার ঐতিহাসিক টেস্টটি শেষ হওয়ার। ভাবা হচ্ছিল বাংলাদেশ হারতে চলেছে খুবই বাজেভাবে। কিন্তু সেটি আর হতে দেননি বাংলাদেশের দুই কান্ডারি মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে তৃতীয় দিনে ম্যাচ নিয়ে যাবার পথ তৈরি করেন তারা। ফলে ৬ উইকেটে ১৫২ রান তুলে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। তবে ইনিংস হারের মুখে আছে টাইগাররা। ইনিংস হার এড়াতে বাকি ৪ উইকেটে আরও ৮৯ রান করতে হবে বাংলাদেশকে। মাহমুদুল্লাহ ৩৯ রানে আহত অবসর নিলেও, ৫৯ রানে অপরাজিত আছেন মুশফিক।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দল মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে প্রথম দিনই বড় লিডের আভাস দিয়েছিল ভারত। কারণ ৩ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে ৬৮ রানে এগিয়ে ছিল টিম ইন্ডিয়া। অধিনায়ক বিরাট কোহলি ৫৯ ও আজিঙ্কা রাহানে ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকে বেশ সাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন রাহানে। সেঞ্চুরির পথে হাটছিলেন কোহলি। তবে দলীয় ২৩৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন রাহানে।

বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলামের বলে কাট করতে গিয়ে ব্যাট-বলের যোগাযোগ ঠিকভাবে করতে না পেরে পয়েন্টে এবাদতকে ক্যাচ দেন ৬৯ বল মোকাবেলায় ৭টি বাউন্ডারিতে ৫১ রান করা রাহানে। তবে আউট হওয়ার আগে কোহলিকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৯৯ রান যোগ করেন তিনি।

সতীর্থকে হারানোর কিছুক্ষণ পর টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। কোহলির সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটে ২৮৯ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় ভারত। এ অবস্থায় ভারতের লিড ছিল ১৮৩ রান। বিরতি থেকে ফিরে দ্বিতীয় সেশনের দ্বিতীয় বলেই রবীন্দ্র জাদেজাকে বিদায় দেন আবু জায়েদ। ১২ রান করেন জাদেজা। তবে লিডকে দ্রুত বাড়িয়ে নিতে মারমুখী হয়ে উঠেন কোহলি। ৭১তম ওভারে বাংলাদেশের পেসার এবাদতকে প্রথম চার বলেই বাউন্ডারি মারেন কোহলি। ওই ওভার থেকে ১৯ রান তুলেন তিনি। কিন্তু কোহলিকে ১৩৬ রানে থামিয়ে দেন এবাদতই। অবশ্য কোহলিকে ফেরাতে বড় ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘কনকাশন সাব’ তাইজুল।

ভারতের ইনিংসের ৮১তম ওভারে বাংলাদেশের পেসার এবাদতের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে তাইজুলের অবিশ্বাস্য ক্যাচে আউট হন কোহলি। ডিপ স্কয়ার লেগে বাতাসে ভেসে ডান-দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ক্যাচ নেন তাইজুল। আউট হওয়ার আগে ১৯৪ বলে ১৮টি চারে নিজের দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজান কোহলি।

কোহলিকে তুলে নিয়ে ভারতের রানের লাগাম টেনে ধরার পথ পায় বাংলাদেশের বোলাররা। এরপরই ভারতের লোয়ার-অর্ডারে ধস নামান আল-আমিন ও আবু জায়েদ। রবীচন্দ্রন অশ্বিন ৯, উমেশ যাদব-ইশান্ত শর্মা শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেন। দলীয় ৩৩১ রানে নবম উইকেট পতনের পর উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা ও মোহাম্মদ সামি ১৬ রান দেন দলকে। ৯০তম ওভারের চতুর্থ বলের পরই ৯ উইকেটে ৩৪৭ রান তুলে নিজেদের ইনিংস ঘোষণা করে দেয় ভারত। সাহা ১৭ ও সামি ৫ বলে অপরাজিত ১০ রান করেন। বাংলাদেশের আল-আমিন ও এবাদত ৩টি করে, আবু জায়েদ ২টি এবং তাইজুল ১টি উইকেট নেন।

২৪১ রানের লিড নিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। তাই প্রথমত ইনিংস হার এড়ানোর টার্গেট নিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসের মত এবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তারা। ইনিংসের পঞ্চম বলেই ভারতের সফল পেসার ইশান্তের বলে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়েন বাংলাদেশের ওপেনার সাদমান ইসলাম। প্রথম ইনিংসে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৯ রান করা সাদমান এবার রানের খাতা খুলতে পারেননি।

শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় ওভারে আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েসের কল্যাণে রানে খাতা খোলে বাংলাদেশ। ওই ওভারের শেষ বলে ২ রান নেন তিনি। পরের ওভারে পঞ্চম বলে আবারও বাংলাদেশ শিবিরে আঘাত হানেন ইশান্ত। প্রথম ইনিংসে শূন্য রান করা মুমিনুলকে এবারও খালি হাতে ফেরান ইশান্ত। ৬ বল খেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান শূন্য হাতে বিদায় নেন। এরপর উইকেটে গিয়ে নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ২ রান তুলে নেন মোহাম্মদ মিঠুন। ফলে হাফ ছেড়ে বাঁচেন তিনি। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফিরে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেছিলেন তিনি। হাফ ছেড়ে বাঁচলেও এবারও নিজের ইনিংসকে বড় করতে পারেননি মিঠুন। ৬ রানে মিঠুনকে থামান ভারতের আরেক পেসার উমেশ যাদব। পরের ওভারে আরেক ওপেনার ইমরুলকে বিদায় দিয়ে তৃতীয় উইকেট তুলে নেন ইশান্ত। ৫ রান করেন ইমরুল। তাই ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আজই, অর্থাৎ দ্বিতীয় দিনেই হেরে যাওয়ার আবহ তৈরি হয় বাংলাদেশের সামনে।

কিন্তু দলের উইকেট পতনের স্রোত আটকে দেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। ভারতীয় পেসাদের উপর চড়াও হন তারা। দক্ষতার সাথেই বাউন্ডারি তুলে নিচ্ছিলেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ জুটি। তাই উইকেট পতনের স্রোত থামিয়ে ১২তম ওভারেই দলের স্কোর ৫০ পার করেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। এতে উইকেটে সেটও হয়ে গিয়েছিলেন তারা।

সেট হয়ে যাবার ফলে নিজেদের ও দলের স্কোর বড় করছিলেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু দুভার্গ্য ভর করে বসে মাহমুদুল্লাহ’র ভাগ্যে। ১৯তম ওভারে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে আহত অবসর হয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ। ৭টি চারে ৪১ বল মোকাবেলা করে ৩৯ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।

মাহমুদুল্লাহ’র বিদায়ে ক্রিজে যান লিটন দাসের পরিবর্তে ‘কনকাশন সাব’ হওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ। দু’টি চার ও ১টি ছক্কায় দারুণ শুরু করেছিলেন মিরাজ। তবে ১৫ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। ইশান্তের বলে কোহলির হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ১৫ রান করা মিরাজ। মুশফিকের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ৫১ রান যোগ করে দলের প্রথম ইনিংসের সংগ্রহকে অতিক্রম করান মিরাজ। এই জুটিতেই টেস্ট ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক।

এরপর মুশফিকের সাথে জুটি বাঁধেন তাইজুল। দু’জনের অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করার পরিকল্পনায় ছিলেন। কিন্তু তাইজুলকে ব্যক্তিগত ১১ রানে আউট করেন ভারতের উমেশ। এরপরই দিনের খেলার ইতি টানেন অন-ফিল্ড আম্পায়াররা। ১০টি চারে ৭০ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত আছেন মুশফিক। ভারতের ইশান্ত ৪টি ও উমেশ ২টি উইকেট নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *