বাংলাদেশের ক্রিকেটার এবং বোর্ডের প্রতি মূল্যবান পরামর্শ : বিরাট কোহলির

অনলাইন ডেস্ক : ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে শক্তিশালী, তা সবাই স্বীকার করবেন। কিন্তু সাদা পোশাক পরলেই যেন আসল নগ্ন চেহারাটা বেরিয়ে যায় বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের। ভারত সফরে টেস্টে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ম্যাচই হেরেছে তিন দিনে। ইন্দোরে ইনিংস ও ১৩০ এবং কলকাতায় ইনিংস ও ৪৬ রানে জিতেছে ভারত। টেস্টে উন্নতি করতে হলে কী করতে হবে- এমন প্রশ্ন ছিল ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির কাছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে খুব বেশি না খেললেও খোঁজ খবর ঠিকই রাখেন তিনি। তাই এদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ শোনা গেল তার মুখে।

বাংলাদেশের পারফর্মেন্স মূল্যায়ন করতে বলা হলে কোহলির বক্তব্য, ‘প্রথমত, দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুজন ক্রিকেটার ছাড়াই তারা খেলেছে। সাকিব নেই, তামিম নেই। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ আছে। কিন্তু কেবল দুজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দিয়ে আপনি একটা দলের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু আশা করতে পারেন না। দলের বাকি ক্রিকেটাররা তরুণ, তাই তারা এখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। তারা যত বেশি টেস্ট খেলবে তত বেশি অভিজ্ঞ হবে। যদি আপনি এখন দুটো টেস্ট খেলেন এবং এরপর আবার দেড় বছর পর টেস্ট খেলতে নামেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন না চাপের পরিস্থিতিতে কিভাবে খেলতে হয়।

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রতি সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তারা অতিরিক্ত আবেগী। কিন্তু শুধু আবেগ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটার টিকবে না বলে মনে করেন কোহলি, ‘প্রেরণা ও আবেগের পাশাপাশি যুক্তিও থাকতে হবে। আপনি যদি আবেগ দিয়ে খেলতে বলেন এবং অর্থনৈতিক দিকটা ভুলে যান, তাহলে একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে যায়। কারণ, একজন ক্রিকেটারের জন্য অন্য কোনো পেশার খোঁজ করা–হয়তো সে কাজই পাবে না, কারণ সে কেবল ক্রিকেটটাই খেলতে পারে। আমার মনে হয়, এর একটা পথ আমরা বের করেছি এবং এখন এটার ফল আপনারা দেখতে পারছেন।

কোহলি খোলাসা করে বলেন, ‘আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে শক্তিমত্তার দিকটা অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর নির্ভর করে। যদি টেস্ট ক্রিকেটারদেরকে ভালো একটা অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা না দেওয়া হয়, তাহলে কিছুদিন পরেই তাদের অনুপ্রেরণার জায়গাটা কমে যাবে। কারণ কিছু ক্রিকেটার আছে যারা ২০ ওভারের খেলায় চার ওভার বোলিং করে আরেক জনের চেয়ে দশ গুণ বেশি অর্থ উপার্জন করছে। দিন শেষে, এটা আপনার জীবিকা। তাই ৫-৬ বছর পর আপনি আর খেলা চালিয়ে যাবার যুক্তি খুঁজতে যাবেন না। আপনি তখন কেবল টি-টোয়েন্টি খেলার কথা বলে দেবেন।

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় নেই কোহলির। ভারত অধিনায়ক মনে করেন, টেস্ট ক্রিকেটকে তারা কতটা গুরুত্ব দেয় তার উপর নির্ভর করবে অগ্রগতি, ‘দক্ষতা অবশ্যই আছে। যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে, যোগ্য বলেই খেলছে। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝা বা কি করে আরও ভালো করতে হয় সেটা বোঝা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আমি বললাম, বোর্ড ও খেলোয়াড়দের অনুধাবন করতে হবে তাদের কাছে এটার গুরুত্ব কেমন। কেবল মাত্র তখনই আপনি টেস্ট ক্রিকেটে সামনে এগোতে পারবেন।

কোহলির কথায় ঘুরে ফিরেই আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রসঙ্গ। টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য বোর্ডের অনেক বড় ভূমিকা দেখেন কোহলি। তিনি মনে করেন, আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটাররা আরও বেশি মনযোগী হবেন, ‘আমি মনে করি, ক্রিকেটারদের ভূমিকা শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত থাকে। আপনার ক্রিকেট বোর্ড এটা কিভাবে সামলাচ্ছে, সেটার একটা ভূমিকা থাকে। আমি নিশ্চিত নই, টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের বোর্ড কীভাবে আলোচনা করে, কীভাবে এটাকে প্রমোট করা হয় বা কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমাদের এখানে তাই ইতিবাচক বদল আনা হয়েছে যাতে ক্রিকেটাররা আরও নিবেদিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *