২১ বছরের ইতিহাস ভেঙে বাজিমাত মমতার

অনলাইন ডেস্ক : জাতীয়তাবাদের ঝান্ডা তুলে লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসকে বড় ধাক্কা দিয়েছিল বিজেপি। নাগরিক তালিকা তথা এনআরসির মতো বিতর্কিত ইস্যু সামনে এনেও পশ্চিমবঙ্গে কীভাবে হিন্দুত্ববাদী দলটি এই সফলতা পেয়েছে তা ছিল বিস্ময়ের। তবে ওই নির্বাচনের ছয় মাস পরেই পাল্টা তোপ হানলেন মমতা। তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে বিজেপি শিবিরে।

তিনটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চমকে দেওয়া পুনরুত্থান ঘটালেন নিজের দলের।

আনন্দবাজার জানায়, তৃণমূলের ২১ বছরের ইতিহাসে কোনও দিন জয় মেলেনি যে দুই আসনে, সেই কালিয়াগঞ্জ ও খড়্গপুর সদর আসন ছিনিয়ে নিল ঘাসফুল। আর লোকসভা নির্বাচনে করিমপুরে যে ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তৃণমূল, এবার জিতল তার চেয়ে অনেক বেশি ভোটে।

এই ফলাফলে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলছেন, ‘মানুষ কেন প্রত্যাখ্যান করলেন, বিশ্লেষণ করতে হবে।’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এই ফলাফলের জন্য একাধিক ‘ফ্যাক্টর’-এর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা উত্তর দিনাজপুর এবং নদীয়ার কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুর আসনে এনআরসি আতঙ্ক বড় ফ্যাক্টর হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের মত।

কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে যারা পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন, তাদের মধ্যেও নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়ার নথি নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কারণ পুরোনো নথি সংরক্ষণের অভ্যাস অনেকেরই নেই। জমিজমার কাগজপত্রেও বংশ পরম্পরায় ভুল রয়েছে অনেকেরই।

এনআরসি হলে নিজের দেশেই উদ্বাস্তু হয়ে যেতে হবে, এ কথা বারবার বলতে শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাড়ায় পাড়ায় মিটিং করে একই কথা বলতে শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেতারাও। আর তার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আশ্বাসও দিতে শুরু করেছিলেন যে, তিনি থাকতে বাংলায় এনআরসি হতে দেবেন না।

তৃণমূলের এই তুমুল প্রচারের মোকাবেলা বিজেপি একেবারেই করতে পারেনি। এনআরসি আসার আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পাশ করানো হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ একাধিক বার বলেছেন।

নতুন নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে আসা সব হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিষ্টান ও পার্সিকে শরণার্থী হিসেবে ধরে নিয়ে ভারতের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হবে- এ কথাও অমিত শাহ বলেছিলেন। কিন্তু তাতে আতঙ্ক যে পুরোপুরি কাটেনি নির্বাচনের ফলেই তা প্রমাণিত।

কালিয়াগঞ্জ এবং খড়্গপুর ছিল কংগ্রেসের দুর্গ। আর করিমপুরে ছিল বাম-কংগ্রেসেরই প্রাধান্য। এসব দুর্গে হানা দেয় বিজেপি। এবার সেগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বাম-কংগ্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *