Site icon দেশের পত্রিকা – দেশের পত্রিকা দেশের কথা বলে

নৌ ধর্মঘট প্রত্যাহার, সরকার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সমঝোতা

অনলাইন ডেস্ক : সারা দেশে গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া নৌযান ধর্মঘট গতকাল শনিবার রাতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সরকারের মধ্যস্থতায় গতকাল বিকেল থেকে শ্রম অধিদপ্তরে নৌযান মালিক ও শ্রমিকদের দফায় দফায় বৈঠক শেষে রাত সাড়ে ১১টায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করার খবর পাওয়া যায়।

ধর্মঘট আহ্বানকারী বাংলাদেশ নৌযান ফেডারেশনের মহাসচিব চৌধুরী আশিকুল ইসলাম এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, আগামী মাসের মধ্যে খোরাকি ভাতা বাস্তবায়ন করার আশ্বাসসহ আরো কয়েকটি দাবির ব্যাপারে সমঝোতা হওয়ায় আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’

এ ধর্মঘটের কারণে পরিবহন ব্যবস্থায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল। গতকাল দিনভর সারা দেশে নৌপথের যাত্রীরা ভোগান্তির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়ে যাত্রীরা। পণ্য পরিবহনেও ব্যাঘাত ঘটে মারাত্মকভাবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে সাগরে ও কর্ণফুলী নদীতীরের ঘাটগুলোতে গতকাল সকাল থেকে পণ্য ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাট থেকে কোনো লাইটার বা ছোট জাহাজ বহির্নোঙরে যেতে পারেনি। এর ফলে সাগরে থাকা দেশি-বিদেশি জাহাজগুলো থেকে পণ্য নামানো সম্ভব হয়নি। এসব পণ্য বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে নামিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, পানগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

খুলনার বিআইডাব্লিউটিএ ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এবং রুজভেল্ট জেটিতে অবস্থানরত কোনো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হয়নি। খুলনা লঞ্চঘাটও স্থবির। মোংলা বন্দর থেকে যশোরের নওয়াপাড়া পর্যন্ত কোথাও কোনো নৌযান চলেনি। এসব ঘাটে ছোট-বড় সাত শতাধিক নৌযান নোঙর ফেলে অবস্থান করছিল।

বরিশালের সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। বিপাকে পড়া যাত্রীরা কেউ কেউ বিকল্প হিসেবে ট্রলার ও স্পিডবোটে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে। রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সকালে নৌ পুলিশ ও লঞ্চ মালিকদের সহায়তায় চাঁদপুর ও মাদারীপুরের উদ্দেশে ২০টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ১১ দফা দাবিতে গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে লাগাতার ধর্মঘট শুরু করে।

শ্রমিকদের দাবির মধ্যে রয়েছে—ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস ও মালিক কর্তৃক খাদ্য ভাতা প্রদান, সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ, এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ, প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, নদীর নাব্যতা রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া-বাতি স্থাপন, মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও সনদ নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা, নৌপরিবহন অধিদপ্তরে সব ধরনের অনিয়ম-হয়রানি বন্ধ এবং শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম গতকাল বিকেলে বলেন, সকাল থেকে শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মবিরতি পালন করছে।

ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীদের খোরাকি ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে শ্রমিকরা সারা দেশে ধর্মঘট পালন করছে। লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে যে কয়টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে, তারা নৌযান শ্রমিক সংগঠনের লোক নয়। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

এদিকে ধর্মঘটের বিপক্ষে গতকাল জাতীয় শ্রমিক লীগের সদরঘাট শাখার নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এতে নেতৃত্ব দেন জাতীয় নৌযান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু বলেন, শ্রমিকদের দাবি আদায়ের বিষয়টি যৌক্তিক। কিন্তু ধর্মঘটের নামে যাত্রী হয়রানি ও সরকারকে বিভ্রান্ত করা ঠিক নয়।

অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বাদল এ ধর্মঘটকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে বলেন, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন যে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তাতে নৌযান শ্রমিকরা সাড়া দেননি। সারা দেশে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক আছে এবং নৌযান শ্রমিকরা কাজ করছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, বন্দরের ভেতরে জেটিতে ভেড়ানো জাহাজে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দর থেকে সড়ক ও রেলপথে পণ্য পরিবহনও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে বন্দরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল সকাল থেকে গুটিকয়েক লঞ্চ চলাচল করেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। বেশির ভাগ বাল্কহেড ও তেলের ট্যাংকারসহ পণ্যবাহী সহস্রাধিক নৌযান বন্ধ রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ বন্দরে শুক্রবার রাত থেকে কোনো ধরনের নৌযান চলাচল করেনি। বন্দরে পণ্য ওঠানামাও বন্ধ ছিল। চাঁদপুরেও শনিবার ভোর থেকে চাঁদপুর-ঢাকাসহ অন্যান্য রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলেনি। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে নৌযান শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও আরিচা-নগরবাড়ী নৌপথে ধর্মঘটের তেমন প্রভাব পড়েনি। গতকাল সকাল থেকেই এ নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ, পণ্যবাহী বলগেট, ট্রলারসহ সব নৌযান চলাচল স্বাভাবিক ছিল।

Exit mobile version