রাজশাহী সীমান্তে অনুপ্রবেশ আতঙ্ক, টর্চলাইট ও লাঠি হাতে ঘুরছেন নারী-পুরুষ সবাই, রাত জেগে পাহারা

রাজশাহী প্রতিনিধি : ভারত থেকে অনুপ্রবেশ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তা ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে রাজশাহীর চরখানপুর সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। সীমান্তে নজরদারি জোরদারে চরখানপুর গ্রামের প্রায় আড়াই শ বাসিন্দা রাত জেগে পালাক্রমে এই কাজ করছেন। একদল সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত, আরেক দল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। বাদ যাননি নারীরাও।

গত ১৮ নভেম্বর থেকে এই কার্যক্রম চলছে। অবশ্য, এ নিয়ে কথা বলতে রাজশাহী-১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। গ্রামটির লোকজন জানান, গত ২৮ নভেম্বর তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিজিবি ব্যাটালিয়ন-১ এর আওতাধীন চরখানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির সদস্যরা। চরখিদিরপুরে স্কুল মাঠে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাসীসহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন সীমান্ত ফাঁড়ির নায়েক সুবেদার নজরুল ইসলাম ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুজন সদস্য।
সভায় সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গ্রামবাসীর সহযোগিতা চায় বিজিবি।
চরখানপুর সীমান্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ নায়েক সুবেদার নজরুল ইসলাম বলেন, গত ২৭ নভেম্বর তারা জানতে পারেন, ভারত থেকে ওই সীমান্তপথে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। এ জন্য পরের দিনই তিনি গ্রামের ইউপি সদস্য এরশাদুল হক ও কোহিনুর বেগমকে ডেকে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় গ্রামের বাসিন্দারা সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত পালা করে পাহারা দেবেন। পরে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত একদল আর রাত ১২টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত আরেক দল গ্রামবাসী বিজিবির সঙ্গে যোগ দেন। উৎসাহ দিতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য এরশাদুল হক জানান, টর্চলাইট ও লাঠি হাতে নিয়ে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা। সীমান্তের ১৬৩-১ এস পিলারের পাশে দায়িত্বে ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য এরশাদুল হকসহ ১০ জন। তাদের সঙ্গে বিজিবির সদস্যরাও ছিলেন। গ্রামটির পশ্চিম পাশে বড় একটি মাঠের পুরো অংশই ভারতীয় সীমানার মধ্যে পড়েছে। মাঠের ধার দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরেখা। এই সীমান্তরেখা বরাবর দাঁড়িয়ে থেকে তারা পাহারা দিচ্ছেন গ্রামের নির্দিষ্ট লোকজন। ওই সীমান্ত পিলারের কাছে পাহারায় আবদুস সাত্তার নামের একজন বয়স্ক বাসিন্দাকেও দেখা যায়। তিনিও লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন সবার সঙ্গে। পাহারায় ছিলেন গ্রামের কৃষক মো. জুয়েলও (২৮)। তিনি বলেন, দিনের বেলায় মাঠের কাজ শেষে রাতে সীমান্ত পাহারা দিতে এসেছেন।

সীমান্তবর্তী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্য সময়ের চেয়ে রাতে তারা এখন আগের চেয়ে বেশি সময় আড্ডা দেন। এতে যারা সীমান্তে পাহারা দিচ্ছেন, তারাও কাজে উৎসাহ পাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *