গোয়েন্দা কার্যালয়ে রুম্পার সহপাঠী সৈকত

অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার সহপাঠী সৈকতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার সৈকতকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপকমিশনারের কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

ডিএমপির উপকমিশনার (ডিবি দক্ষিণ বিভাগ) রাজীব আল মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, সৈকতকে আটক করা হয়নি। রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পাকে ‘ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে’—এমন অভিযোগ তুলে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

পরিবারের সদস্যরাও তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলতে রাজি নয়। রুম্পার মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করেছে ডিএমপির ডিবিসহ কয়েকটি টিম। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রুম্পার মোবাইল ফোনের কললিস্ট এবং কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ ধরে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১২ তলা ভবনের ছাদে পাওয়া সেন্ডেলের চিহ্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটি কি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এ কারণে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি রুম্পার ব্যক্তিগত জীবন ও যোগাযোগের তথ্যও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা।

রমনা মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো আমরা হাতে পাইনি। আগামীকাল (আজ রবিবার) পেতে পারি। প্রতিবেদনটি হাতে পেলে হয়তো কিছু বিষয় সামনে আসবে। নিহতের পরিবার এখনো কোনো অভিযোগ করেনি। তবে আমরা তদন্তের স্বার্থে যোগাযোগ করছি। সহপাঠীর বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এ ঘটনার শুরু থেকেই আমরা হত্যা ধরেই তদন্তকাজ চালাচ্ছি।’

পুলিশ সূত্র জানায়, যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে ওই গলিতে পাশাপাশি তিনটি ভবনের একটি ১২ তলা। আর বাকি দুটির একটি তিনতলা, অন্যটি পাঁচতলা। ভবনগুলোর কোনোটিতেই সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় কোন ভবনে রুম্পা গিয়েছিলেন তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে রুম্পার লাশ ১২ তলা ভবনের পেছনের অংশে পড়ে ছিল। নিহত রুম্পার ছোট ভাই আশরাফুল আলম বলেন, ‘আপু আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে যারা মেরেছে তাদের বিচার করতে হবে। ঘটনার আগের কয়েক দিন আপুর মন খারাপ ছিল। কী কারণে মন খারাপ ছিল সে বিষয়ে আমাদের কিছু বলেনি।’

এদিকে রুম্পার সহপাঠী সূত্রে জানা যায়, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক সহপাঠীর সঙ্গে রুম্পার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। সেই সহপাঠী এখন আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন না। তবে কয়েক মাস আগে তাঁদের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়। কয়েক দিন ধরে তাঁদের মধ্যে টানাপড়েন চলছিল। মানববন্ধনের সমন্বয়ক রাখিল খন্দকার নিশান বলেন, ‘আমরা রুম্পার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চাই। তার মৃত্যুতে কারো হাত থাকলে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

রুম্পার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রুম্পার মেরুদণ্ড, বাম হাতের কনুই ও ডান পায়ের গোড়ালি ভাঙা ছিল। মাথা, নাক, মুখে জখম এবং বুকের ডান দিকে ক্ষতচিহ্ন ছিল। যা দেখে তখন চিকিৎসক এবং পুলিশ সূত্র ওপর থেকে পড়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে মৃত্যুর আগে ধর্ষণ করা হতে পারে সন্দেহ থেকে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। যার প্রতিবেদন আজ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এই মামলার সঠিক ঘটনা উদ্ঘাটনে যাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার মনে হচ্ছে পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলছে। এই তালিকায় রুম্পার সহপাঠী এবং যাঁদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁরাও রয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ নম্বর ভবনের সামনে থেকে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

স্টাম্পফোর্ডে মানববন্ধন : গতকাল সকাল ১০টায় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সিদ্ধেশ্বরী ও ধানমণ্ডি ক্যাম্পাসের সামনে একই সময় অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা রুম্পার মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে তাঁর সহপাঠীরা হত্যার বিচার চেয়ে স্লোগান দেন। মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা রুম্পার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, আগামীকালের (আজ) মধ্যে একটা ফলাফল দেখতে চাই। ‘অপরাধীদের’ শাস্তি দাবিতে গত শুক্রবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তাঁরা।

ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের মানববন্ধন : ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর রুম্পা হত্যার রহস্য উন্মোচন করে খুনিদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ আয়োজিত মানববন্ধনে তিনি এ দাবি জানান।

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে উল্লেখ করে ভিপি নুর বলেন, ‘আপনারা জানেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী, যে একজন পুলিশ অফিসারের মেয়ে, তাঁকে সম্ভবত ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা রাষ্ট্রের কাছে বলতে চাই, ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে নাকি অন্যভাবে হত্যা করা হয়েছে সে রহস্য উন্মোচন করে খুনিদের বিচার করুন।’ মানববন্ধনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, রাশেদ খান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *