রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার পাথরের মতো মুখ করে বসে ছিলেন আদালতে সু চি

অনলাইন ডেস্ক : মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে শুনানির প্রথম দিনে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সামরিক বাহিনীর একের পর এক নৃশংসতার ঘটনা তুলে ধরা হচ্ছিল তখন সেখানে পাথরের মত মুখ করে বসে ছিলেন নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী অং সান সু চি।

এসব অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য মিয়ানমার যে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে ফার্স্ট মিনিস্টার মিজ সু চি নিজেই তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দ্য হেগ শহরের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গ্যাম্বিয়া।

সে দেশের বিচার-মন্ত্রী আবুবাকার তাম্বাদু শুনানির শুরুতে বলেছেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচার হত্যার প্রশ্নে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতেই তার দেশ আইসিজেতে এই অভিযোগ এনেছে।

তিনি বলেন, সারা বিশ্ব কেন এখন নীরব দর্শক? কেন আমাদের জীবদ্দশাতে এটা আমরা ঘটতে দিচ্ছি?

তিনি আরও বলেন, সবাই মনে করে এখানে মিয়ানমারের বিচার হচ্ছে। আসলে এখানে বিচার চলছে আমাদের সামগ্রিক মানবিকতার।

শুনানির প্রথম দিনে বাদীপক্ষের বক্তব্য শোনা হচ্ছে।

মিয়ানমার এসব অভিযোগের জবাব দেবে বুধবার। এরপর বৃহস্পতিবার দু’পক্ষের মধ্যে যুক্তি-তর্ক হবে।

দ্য হেগ থেকে বিবিসি সংবাদদাতারা খবর দিচ্ছেন, প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে মিজ সু চি যুক্তি দেখাবেন যে এই বিষয়ে বিচার করার অধিকার আইসিজের নেই।

শুনানিতে বক্তব্য রাখার সময় গ্যাম্বিয়ার নিযুক্ত একজন কৌঁসুলি অ্যান্ড্রু লোয়েনস্টিন রাখাইনের মংডু শহরে বেশ কয়েকটি পাইকারি খুনের বিবরণ পেশ করেন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, যাকে টাটমাডাও নামেও ডাকা হয়, ঐ শহরের শত শত রোহিঙ্গা বেসামরিক পুরুষকে হত্যা করে এবং নারীদের ধর্ষণ করে।

আইসিজের ওয়েবসাইট থেকে লাইভ স্ট্রিম করা শুনানিতে এসব বিবরণ যখন পড়ে শোনানো হচ্ছিল তখন অং সান সু চির মুখে কোন অভিব্যক্তি লক্ষ্য করা যায় নি।

কখনও সোজা সামনে তাকিয়ে, কখনও মাটির দিকে তাকিয়ে তাকে বাদী পক্ষের বক্তব্য শুনতে দেখা যায়।

শুনানির প্রথম দিকে গ্যাম্বিয়ার লক্ষ্য হচ্ছে, আদালতের কাছ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ লাভ করা।

উদ্দেশ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যে প্রায় ছয় লক্ষ রোহিঙ্গা রয়ে গেছেন তাদের ওপর যে কোন ধরনের নির্যাতন না চলে, তা সুনিশ্চিত করা।

পাশাপাশি, সাক্ষ্য-প্রমাণ ধ্বংস করার বিরুদ্ধেও ঐ আদেশ কার্যকরী হবে বলে বাদী পক্ষ আশা করছে।

“আদালত এই রায় দেবে কি দেবে না, সেটা নতুন বছরের শুরুর দিকেই জানা যাবে,” বলছেন অক্সফোর্ডের ট্রিনিটি কলেজের আইনের অধ্যাপক মাইকেল বেকার।

“এটা এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সূচনা মাত্র। এই মামলাটির নিষ্পত্তি হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। কিন্তু গোড়ার দিকেই মিয়ানমারের অভ্যন্তরের রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা বিধানের প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

– বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *