ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: নিউইয়র্ক সিটির ৫৭টি শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ডিস্ট্রিক্ট (ডিসি)-৩৭ এর টানা ৬ষ্ঠ বারের মত ট্রেজারার নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশি আমেরিকান মাফ মিসবাহ উদ্দিন।
২২ জানুয়ারি এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মাফ মিসবাহ উদ্দিন জয়ী হয়েছেন ৯৩ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিশেল ফেডার পেয়েছেন ১৬,১৮৮ ভোট।
নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত শিক্ষক এবং পুলিশ অফিসার ছাড়া সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী (সাধারণ কেরানী থেকে ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী পর্যন্ত) ডিসি-৩৭ এর সদস্য।
২০০৪ সাল থেকেই মাফ মিসবাহ উদ্দিন ডিসি-৩৭ ট্রেজারার পদে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। কিংবদন্তী শ্রমিক নেতা লিলিয়ান রবার্টস তার শ্রম আন্দোলনে ৬০ বছর পূর্তির পর ২০০৪ সালে অবসরে যাওয়ার পর মাফ মিসবাহ উদ্দিন মূলত: প্রথম কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হন। এশিয়ান আমেরিকানদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ পদে নির্বাচিত হবার বিরল সম্মান লাভ করেন।
একইসাথে তিন বছর মেয়াদী ডিসি-৩৭ এর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন শাউন ফ্রাঙ্কুইস। তার প্রাপ্তভোট ৭৫,২৯৫। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইডেল রিপিগেজ পেয়েছেন ৪০ হাজার ৭২৪ ভোট।
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে হেনরি গ্যারিডো ৯০ হাজার ৮০৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাইল ড্যারেন সিমন্স পেয়েছেন ২৫ হাজার ১০১০ ভোট। নির্বাহী পরিচালক পদে গ্যারিডো এবার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হলেন। গারিডো ও উদ্দিনের এ প্যানেল থেকে ২০টি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে সবাই নির্বাচিত হয়েছেন।
ডিসি ৩৭ নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে শক্তিশালী ইউনিয়ন। সোয়া লাখ মেম্বার/ভোটার ছাড়াও রয়েছেন ভোটাধিকারহীন ৬০ হাজার অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী সদস্য। এসকল সদস্যের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেনিফিট পরিচালনা করেন ডিসি-৩৭ এর ট্রেজারার।
মাফ মিসবাহ উদ্দিন নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত একাউন্ট্যান্ট, স্টাটিস্টিশিয়ান, অ্যাক্চুয়ারি এবং ট্যাক্স অডিটর ইউনিয়ন লোকাল-১৪০৭ এরও টানা ৭ম বারের মত নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নোয়াখালীর সন্তান মাফ মিসবাহ উদ্দিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বলস্টেট ইউনিভার্সিটিতে গ্রাজুয়েট টিচিং স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ১৯৮৪ সালের ২৮ আগস্ট। এর আগে ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গণিতে অনার্স সহ মাস্টার্স করেন। ১৯৮০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমোগ্রাফিতে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। এ বিষয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
১৯৮৪ সালে আমেরিকা আসার আগ পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডব্লিউএইচও এর একটি প্রকল্পে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। মাফ মিসবাহ ১৯৮৬ সালে বল স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে একচ্যুরিয়াল সায়েন্সে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এটি ছিল তার তৃতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি। ওই বছরই তিনি নিউইয়র্ক সিটির পেনশন ডিপার্টমেন্টে একচ্যুয়ারি হিসেবে যোগ দেন।
ডেমক্র্যাটিক পার্টির তৃণমূলের সংগঠক মাফ মিসবাহ উদ্দিন ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে প্রতিষ্ঠিত মূলধারায় দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের একমাত্র সংগঠন ‘অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার’ তথা আসাল’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট। আসালের ১০ টি চ্যাপ্টারের মাধ্যমে ৫টি স্টেটে বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে কমিউনিটির সুযোগ-সুবিধা, অভাব-অভিযোগ মূলধারার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন-যাপনকারী সাউথ এশিয়ানদের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছে সংগঠনটি।
উৎসবমুখর পরিবেশে এ নির্বাচনে জয়ী হবার পর মাফ মিসবাহ উদ্দিন নির্বাচিত বলেন, ডিসি-৩৭ এর সম্মানিত সদস্যরা আজ আমাকে যে বিপুল বিজয় এনে দিয়েছেন তার জন্য আমি অত্যন্ত সম্মানিত এবং গভীরভাবে কৃতজ্ঞ ও অনুপ্রাণিত হয়েছি। এটি কেবল নিছক একটি কাজ নয়, এটি একটি মহান দায়িত্ব। এটা আমাকে আনন্দ দেয়। এই কাজে আমি সদা নিজেকে বিলিয়ে দেই। অতীতের ন্যায় আপনাদের প্রত্যেকেরই প্রতিনিধিত্ব করবো, কেউ আমাকে ভোট দিয়েছে কি না, আমাকে সমর্থন করেছেন কিনা-এটা মুখ্য ব্যাপার নয়। আমি সকলের প্রতিনিধি হিসেবে আমার সম্ভাব্য সর্বোত্তম সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।