ভারতের ঝাড়খণ্ডে এবার ক্ষমতা হারালো বিজেপি

অনলাইন ডেস্ক : ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পরে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাটও হাতছাড়া হলো বিজেপির। বুথ ফেরত সমীক্ষাই মিলে গেল। আগামী ৫ বছরের জন্য ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের হাতেই রাজ্যের শাসনভার তুলে দিলেন ঝাড়খণ্ডের ভোটাররা। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও নাগরিক নিবন্ধনপঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে ভারতজুড়ে সরকারবিরোধী প্রবল বিক্ষোভের মধ্যে বিজেপির এই পরাজয় ও কংগ্রেসের জয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজ্যের ৮১টি বিধানসভা আসনের মধ্যে জেএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের ঝুলিতে গিয়েছে ৪৭টি আসন। বিজেপি জিতেছে ২৫টি আসনে। দলের ভরাডুবির পরেই সোমবার রাতে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল দ্রৌপদী মূর্মূর কাছে পদত্যাগপত্র তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন জেএমএমের কার্যকরী সভাপতি হেমন্ত সোরেন। মুখ্যমন্ত্রী পদে কবে তিনি শপথ নেবেন, তা সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।

বুথ ফেরত সমীক্ষাতেই আভাস মিলেছিল, ঝাড়খণ্ডের বিধানসভার ভোটে এবার আর গেরুয়া ঝড় ওঠার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই বুথ ফেরত সমীক্ষা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না, সেই আশায় বুক-ও বেঁধেছিলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সোমবার সকালে ইভিএম খোলার পর থেকে দুপুর পর্যন্ত জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোটের সঙ্গে জোরকদমে টক্কর দিয়েছিল বিজেপি। তবে প্রথম থেকেই কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল জোট। ৩৯ থেকে ৪২-এর মধ্যেই ঘোরাফেরা করছিল জোটের আসন সংখ্যা। আর বিজেপির আসন সংখ্যা ২৯ থেকে ৩২-এর মধ্যে।

ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হতে পারে, এমন আশায় সকালেই পুরনো জোট সঙ্গী আজসুর সভাপতি সুদেশ মাহাত ও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারাণ্ডির সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগও শুরু করে দেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। সরকার ধরে রাখতে ঝাড়খণ্ডে দলের পর্যবেক্ষক ওম মাথুরকে তড়িঘড়ি রাঁচি পাঠান বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। কিন্তু ওম মাথুরের অপারেশনের আগেই ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতা দখলের লড়াই থেকে পিছিয়ে পড়ে গেরুয়া শিবির। বিকেলের পরে ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে জোটের আসন সংখ্যা পৌঁছে যায় ৪৭-এ।

নিশ্চিত হয়ে যায়, আগামী পাঁচ বছরের জন্য বিরোধী আসনে বসতে হবে বিজেপিকে। শুধু তাই নয়, বিকেল পর্যন্ত আসন সংখ্যার নিরিখে একক দল হিসেবে বিজেপি সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। ক্ষমতা হাতছাড়া হলেও একক বৃহত্তম দল হওয়া গিয়েছে ভেবেই নিজেদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে একক বৃহত্তম দল হওয়ার সম্ভাবনাও অস্তাচলে পাড়ি জমায়।

রাতে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হতেই দেখা যায়, গতবারের চেয়ে ২২টি আসন বেশি পেয়ে ৪৭টি আসনে জয়ী হয়েছেন জোট প্রার্থীরা। আর গতবার ৩৭ আসন পেলেও এবার ২৫ আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বিজেপিকে। আলাদা লড়ার মাসুল হিসেবে গতবারের চেয়ে কম আসন পেয়ে খুশি থাকতে হচ্ছে আজসুকে। গতবার ৫টি আসনে দলীয় প্রার্থীরা জয়ী হলেও, এবার মাত্র ২টি আসনে জয় এসেছে।

এবারের ভোটে নক্ষত্রপতনও ঘটেছে। টানা ২৪ বছর বাদে জামশেদপুর পূর্ব আসনে হেরেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। দুমকা আসন থেকে জয়ী হয়েছেন জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন। সিল্লি আসন থেকে জয়ী হয়েছেন আজসুর সভাপতি সুদেশ মাহাত। লোহারদাগা আসনে জয়ী হয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রামেশ্বর ওঁরাও। চক্রধরপুর আসনে হেরে গিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি লক্ষ্মণ গিলুয়া। চন্দনকিয়ারি আসনে জয়ী বিজেপির অমর কুমার। গত বিধানসভা ভোটে এই আসন থেকেই তিনি ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন। বেরমো আসনে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেসের রাজেন্দ্র পিডি সিংহ। ধানওয়ার আসনে জয়ী হয়েছেন ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার সভাপতি তথা রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারাণ্ডি। রাঁচি থেকে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী চন্দ্রেশ্বর প্রসাদ সিং।

চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগেই টুইট করে রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী তথা জেএমএমের কার্যকরী সভাপতি হেমন্ত সোরেনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের ভরাডুবির দায় নিজের কাঁধে নিয়ে ইস্তফা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *